ব্রিকলেনে ‘মিডনাইট কারি কারফিউ’
বৃটেনের কারি ক্যাপিটেল বলে খ্যাত বাংলাদেশী অধ্যুষিত ব্রিকলেনে রাত ১১টার পরে খাবার ও এলকোহল বিক্রি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে টাওয়ার হ্যামলেট কাউন্সিল।
মূলত রাত ১২টার পর মদ খেয়ে সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির নানা অভিযোগের পরই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেখানকার কাউন্সিল। আর এই নির্দেশ অমান্য হলে ২০ হাজার পাউন্ড ফাইন গোনা ছাড়াও রেষ্টুরেন্টের লাইসেন্স কেড়ে নেয়ার হুমকিও দিয়েছেন টাওয়ার হ্যামলটস কাউন্সিল।
তবে ব্রিকলেন রেষ্টুরেন্ট ব্যবসায়ী সমিতির সেক্রেটারী আজমল হোসেন কাউন্সিলের এই সিদ্ধান্তকে বলেছেন “মিডনাইট কারি কারফিউ”। এই আইন বহাল থাকলে ৩ মাসের মধ্যে ব্রিকলেনের ৩০ শতাংশ রেষ্টুরেন্ট বন্ধের সম্ভাবনার কথাও বলেন তিনি।
বাংলাদেশী অধ্যুষিত ব্রিকলেনে ৬০টি রেষ্টুরেন্টের সবগুলোর মালিক বাংলাদেশী। রেষ্টুরেন্ট মালিকরা জানান, তাদের ব্যবসার প্রায় ৫০ শতাংশ নির্ভর করে রাত ১১টার পরের কাষ্টোমারদের সার্ভ করে। কারি বাজার রেষ্টুরেন্টের মালিক মোহাম্মদ আহমেদ বলেন, দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে আমাদের কাষ্টোমাররা রাত ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত সময়টা উপভোগ করার জন্যই আসে। কাউন্সিলের কারি কারফিউয়ের কারনে আমরা এখন মারাত্নক ক্ষতিগ্রস্থ হবো। ব্যবসা বন্ধ করে দেয়া ছাড়া উপায় নেই।
ব্রিকলেন ঐতিহাসিক স্থান হওয়ায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের পর্যটকরা দিন রাত ২৪ ঘন্টাই এই ষ্ট্রিট পরিদর্শন করেন। আর গত ৪০ বছর ধরে ব্রিকলেনের ৮০ শতাংশ ব্যবসা নিয়ন্ত্রন করছেন সেখানে বসবাসরত বাংলাদেশীরা।
তবে কাউন্সিল সংশ্লীষ্টরা জানান, গত এক দশকে ব্রিকলেন রাত্রীকালিন অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের ক্ষেত্রে লন্ডনের অন্যতম বৃহত্তম জনপদে পরিণত হয়েছে। এই কাউন্সিলে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক লাইসেন্সড প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার সংখ্যা ২০০ এর বেশি। অব্যাহত উন্নয়ন ও ক্রমবর্ধমান হারে রেষ্টুরেন্ট, টেইক্ওয়ে, অফ লাইসেন্স ্ও বার গড়া ওঠায় এই এলাকায় আইন শৃংঙ্খলা রক্ষা ও সমাজ বিরোধী আচরণজনিত কার্যকলাপ বেড়ে গেছে। এধরণের পরিস্থিতি যেমন পুলিশের কর্মকান্ডের উপর তেমনি কাউন্সিল, ফায়ার সার্ভিস, হেলথ সার্ভিসের উপর চাপ সৃষ্টি করেছে। এছাড়া স্থানীয় বাসিন্দা এবং স্থানীয় এলাকায় বেড়াতে আসা ও যারা কাজ করেন তাদের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে কাউন্সিল, পুলিশ ও অন্যান্য সহযোগী সংস্থা ব্রিকলেন এলাকায় একটি সেচুরেশন জোন পলিসি গ্রহণেরও চিণ্টা করছে। এই নীতিমালা গ্রহণ করা হলে এই এলাকায় লাইসেন্সড প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি স্থানীয় কর্তৃপক্ষ নিয়ন্ত্রন করতে সক্ষম হবে। এই জোন পলিসি ব্রিকলেন এলাকার বর্তমান এলকোহল কিংবা লেইট নাইট ক্লাবের লাইসেন্সের উপর সরাসরি কোনো প্রভাব ফেলবে না। তবে ভবিষ্যতে এ ধরনের প্রতিষ্টানের লাইসেন্স আবেদনের ক্ষেত্রে এই নিয়ম অনুসরণ করা হবে।
এবিষয়ে টাওয়ার হ্যামলেটসের মেয়র লুৎফুর রহমান বলেন, ব্রিকলেন এলাকায় রাত্রীকালিন ব্যস্ততাকে কেন্দ্র করে সংঘটিত করে সংঘটিত এন্টি সোশ্যাল বিহেভিয়ার অর্থাৎ সমাজ বিরোধী কর্মকান্ডকে প্রতিরোধ করতে সেচুরেশন জোন পলিসি বিশেষ ভূমিকা রাখবে। এই নীতিমালা প্রণয়নে কাউন্সিল, পুলিশ ও অন্যান্য কর্তৃপক্ষ কাজ করে যাচ্ছেন। এখন আমরা এই ব্যাপারে স্থানীয় জনগণ, ব্যবসায়ী ও সংগঠনগুলোর মতামত গ্রহণ করছি।
আর ডেপুটি মেয়র কাউন্সিলার অহিদ আহমদ বলেন, ব্রিকলেনে যারা বসবাস করেন কিংবা কাজ করেন অথবা বেড়াতে আসেন তাদের সবার জন্য এই এলাকার সার্বিক পরিস্থিতিকে আরো নিরাপদ ও উন্নত করতে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল বদ্ধপরিকর। আর এই নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তুলতে সেচুরেশন জোন পলিসি ব্যাপক সাহায্য করবে। এটা মনে রাখতে হবে সেচুরেশন জোন পলিসি মানে এই এলাকায় এলকোহল নিষিদ্ধ করা হবে। রাত্রীকালিন সময়ে ব্রিকলেনে জনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে অতিরিক্ত লাইসেন্স প্রদানের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করতে এটি কাউন্সিলকে সাহায্য করবে।