পুড়ে ছাই হয়ে গেল ৪০০ বস্তিঘর
নাগরিক জীবনের সব আস্ফালনকে তুচ্ছ করে নিমিষে ছাই হয়ে গেল ৪০০ বস্তিঘর। জীবন্ত দগ্ধ হয়ে মারা গেল একটি শিশু। পুনরাবৃত্তি হলেও সত্য এ জাতীয় ঘটনা রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক সব দায়বদ্ধতাকেই কেবল ধিক্কার দেয়।
অপরিকল্পিতভাবে বাঁশ, কাঠ আর টিন দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল মধুবাগ ঝিলপাড় বস্তির ছোট ছোট ঘরগুলো। এর মধ্যে কিছু ঘর ছিল দোতলাও। জীবন-জীবিকা নির্বাহের তাগিদে ইট-পাথরের ঢাকায় ছুটে আসা স্বল্প আয়ের কয়েক শ’ পরিবার মাথা গোঁজার ঠাঁই হিসেবে খুঁজে নিয়েছিল এই বস্তিটি। কিন্তু হায়, তাদের সেই আশ্রয়টুকু এখন পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে, যা শুধু সর্বগ্রাসী আগুনের লেলিহান লেহনের চিহ্ন হয়ে আছে। ওদের মাথা গোঁজার ঠাঁই এখন খোলা আকাশের নিচে।
আগুন খেটে খাওয়া কয়েক হাজার মানুষকে কেবল সর্বস্বান্তই করেনি, কেড়ে নিয়েছে সবুজ নামের তিন বছরের একটি অবুঝ শিশুর প্রাণ। বস্তিতে ঘুমের মধ্যে পুড়ে মারা যায় শিশুটি। ভস্মীভূত হয়ে যায় ৪০০ ঘর। পুড়েছে ১৪টি দোকানও। পুড়ে গেছে লাখ লাখ টাকার সম্পদ।
শনিবার সকাল ৮টার দিকে হাতিরঝিলসংলগ্ন মধুবাগ ৩ নম্বর গলিতে এই অগ্নিকাণ্ড ঘটে। তবে কিভাবে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে তা সঠিকভাবে জানা যায়নি। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সাড়ে তিন ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনার তদন্ত ও ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করতে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ দিকে নিহত শিশুর পরিবারকে ২০ হাজার টাকা দেয়ার ঘোষণা করেছে ঢাকা জেলা প্রশাসন। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক পরিবারকে তিন হাজার করে টাকা এবং ২০ কেজি করে চাল দেয়া হবে। শনিবার সরকারি ছুটি থাকায় রোববার অনুদানের অর্থ ও চাল প্রদান করা হবে বলে জানা গেছে।
ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী জানান, সকাল ৮টার দিকে মধুবাগের হাতিরঝিলসংলগ্ন বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি ইউনিট সাড়ে তিন ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। সদর দফতরের পাশাপাশি তেজগাঁও, রমনা ও বনানীর ফায়ার স্টেশনের কর্মীরা আগুন নির্বাপণে কাজ করে। আগুনে বস্তির ৩৭৪টি ঘর পুড়ে গেছে। অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছে তিন বছরের শিশু সবুজ। শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট কিংবা গ্যাসের চুলা থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে আগুনের কারণ সম্পর্কে কয়েক রকম তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। অগ্নিকাণ্ডের কারণ ও তি নিরূপণ করতে ফায়ার সার্ভিস সদর দফতরের উপপরিচালক (প্রশাসন) ফরিদ উদ্দিনকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।