ঈমানী শক্তি নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে হবে : আল্লামা শফী
হেফাজতে ইসলামের আমীর দারুল উলূম হাটহাজারী মাদরাসার আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেছেন, তাক্বওয়া তথা খোদা ভীতি ছাড়া পরিপূর্ণ মুমিন হওয়া যায় না। অপরদিকে আল্লাহর ভয় মানুষের অন্তরে না থাকার ফলে সমাজে অপরাধ প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। অন্তরে খোদাভীতি থাকলে কারো পক্ষে মহান আল্লাহ ও তদীয় রাসূল (সা.)-এর অবমাননা করা, ইসলামের বিরুদ্ধাচরণ করা, উলামা-মাশায়েখ ও তৌহিদী জনতাকে হেয়প্রতিপন্নমূলক বক্তব্য দেয়া কিছুতেই সম্ভব নয়। তিনি বলেন, খোদাভীতির অপর নাম তাক্বওয়া। আর এই তাক্বওয়া থেকে দূরে থাকার কারণেই বর্তমানে বিশ্বব্যাপী মুসলমানগণ নানাভাবে পর্যুদস্ত ও নির্যাতিত হচ্ছে। মুসলমানদেরকে এই দুর্দশা থেকে রেহাই পেতে পূর্ণাঙ্গ তাক্বওয়া অর্জনের পাশাপাশি ঈমানী শক্তি নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে হবে। তিনি সকল ভেদাভেদ ভুলে মুসলমানদেরকে এক কালিমার ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
শনিবার দারুল উলূম হাটহাজারী মাদরাসায় হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের এক জরুরী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। হেফাজত আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফীর সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, হেফাজতে ইসলামের মাহসচিব আল্লামা হাফেজ মুহাম্মদ জুনায়েদ বাবুনগরী, মাওলানা লোকমান হাকীম, মাওলানা সলিম উল্লাহ, মাওলানা মুহাম্মদ শফি, মাওলানা ফোরকান আহমদ, মাওলানা মুঈনুদ্দীন রুহী, মাওলানা হাবীবুল্লাহ আজাদী, মাওলানা কাতেব ইলিয়াস ওসমানী, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা মুনির আহমদ, মাওলানা শফিউল আলম, মাওলানা রফিক আহমদ, মাওলানা নূরুল ইসলাম নানুপুরী, মাওলানা আইয়ুব বাবুনগরী, মাওলানা মীর মুহাম্মদ ইদরিস, মীর মুহাম্মদ কাসেম, মাওলানা নূর মুহাম্মদ, মাওলানা আলমগীর মাসঊদ প্রমুখ।
বৈঠকে দেশের বর্তমান পরিস্থিতির নানা দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার পাশাপাশি হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক তৎপরতা ও পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে নেতৃবৃন্দ নিজ নিজ অভিমত প্রকাশ করেন। হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে কয়েকটি চিহ্নিত মিডিয়ার অপপ্রচার, বিশেষ করে ৭১ টিভি’র মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে হেফাজত আমীর, মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে অবিলম্বে ৭১ টিভিসহ সংশ্লিষ্ট মিডিয়াকে সকল মিথ্যচার বন্ধের আহ্বান জানান। অন্যথায় মিথ্যাচার ও অপপ্রচারে জড়িতদের বিরুদ্ধে তীব্র গণপ্রতিরোধ ছাড়াও কঠোর আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে সতর্ক করেছেন। বৈঠকে হেফাজত নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, এ দেশের ওলামা-মাশায়েখ এবং ক্বওমী মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকরা কখনোই কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা ও সন্ত্রাসী কর্মকা-ের সাথে জড়িত নয়। বরং ওলামায়ে-কেরাম সকল অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা, মিথ্যাচার, ঘুষ-দুর্নীতি, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। মাদ্রাসা ক্যাম্পাস ছাড়াও ওয়াজ-মাহফিল ও মসজিদের বয়ানে ওলামায়ে কেরাম সব সময় শান্তির বাণীই প্রচার করে থাকেন। দেশের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে নিত্য সংঘর্ষ ও খুন-খারাবির খবর পত্রপত্রিকায় নিয়মিত আসলেও কোন ক্বওমী মাদরাসায় ছাত্র সংঘর্ষ বা হতাহতের কোন নজির নেই। ওলামায়ে কেরাম ও ক্বওমী মাদরাসার সাথে সন্ত্রাস ও কথিত জঙ্গীবাদকে জড়িয়ে যেসব মিথ্যা সংবাদ প্রচার করা হয়, তা এদেশের জনগণ কখনোই বিশ্বাস করে না।
বৈঠকে আগামী ৩ ও ৪ এপ্রিল চট্টগ্রামের জমিয়তুল ফালাহ ময়দানে শানে রেসালাত মহাসম্মেলন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পাশাপাশি দেশের অন্যান্য জেলায়ও শানে রেসালাত সম্মেলন আয়োজনের জন্য জেলা নেতৃবৃন্দকে নির্দেশ দেয়া হয়। দেশব্যাপী হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধি ও সমন্বয়ের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক কমিটি পুনর্গঠন করে অবিলম্বে কাজ শুরু করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়।
বৈঠক শেষে হেফাজত আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফী দেশ ও জাতির শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মুনাজাত পরিচালনা করেন।