চুরির দায়ে ইউনাইটেড এয়ারের ৬ কর্মী গ্রেফতার
সৌদীপ্রবাসী যাত্রীর ব্যাগ থেকে ৯ হাজার সৌদীরিয়াল ও ২০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার চুরির অভিযোগে ইউনাইটেড এয়ার ওয়েজের ৬ কর্মীকে গ্রেফতার করেছে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশের সদস্যরা। আটক ৬ জন ইউনাইটেড এয়ার ওয়েজের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মচারী ও নিরাপত্তাকর্মী। গত শুক্রবার মধ্যরাতে সৌদি আরব থেকে শাহজালালে আসা এক মহিলা যাত্রীর ব্যাগ থেকে তারা এ চুরি করে।
বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটেলিয়নের সিনিয়র এএসপি জাহেদ পারভেজ জানান, গত শুক্রবার দুপুরে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ ৪ঐ-৫৬২ ফ্লাইটে সৌদি আরব থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন মোছাঃ পারভীন আক্তার (৪৩)। তার পাসপোর্ট নম্বর ঢ-০৬০৪৭০৪। ঐ যাত্রী বিমান থেকে তাড়াহুড়ো করে নেমে যাওয়ার কারণে ভুল করে হ্যান্ডব্যাগটি সেখানে রেখে আসেন। এ সময় তিনি ব্যাগটি পাওয়ার জন্য ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের সিকিউরিটি সুপারভাইজার মাজহারুল আনোয়ারকে বিমানে ব্যাগটি ভুল করে রেখে আসার বিষয়টি জানান। সিকিউরিটি সুপারভাইজার বিকাল সোয়া ৪টায় বিমানবন্দরের বে থেকে ব্যাগটি নিয়ে এসে ঐ যাত্রীকে বুঝিয়ে দেন। এ সময় তিনি ব্যাগটি খুলে দেখেন তার নগদ ৯ হাজার রিয়ালসহ আনুমানিক ২০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার নেই। এরপর পারভীন আক্তার (৪৩) সৌদী মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার খোয়া যাওয়ার বিষয়টি বিমানবন্দর আর্মড পুলিশকে জানান।
এপিবিএন’র সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আলমগীর হোসেন ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ও নিরাপত্তাকর্মীদের মধ্যে জড়িত কামরুল হাসান (২৩) (আইডি নং- ১৭৯৮), আব্দুল লতিফ হাসান (২১) (আইডি নং- ১৬৬৫), সাইফুল ইসলাম (২৬) (আইডি নং- ১৫৯৫), মোঃ মাহবুবুর রহমান (২৩) (আইডি নং- ১১১০), ক্যাটারিং সেকশনের লোডিং স্টাফ হুমায়ুন কবির (২১) (আইডি নং- ১৬৬২), জুনিয়র এক্সিকিউটিভ রবিউল ইসলামকে (২৮) (আইডি নং- ১৪৭২), বিমানবন্দর এপিবিএন অফিসে ডেকে এনে জিঞ্জাসাবাদ করে তাদের তল্লাশি করেন। এ সময় ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের কর্মচারী কামরুল হাসানের কাছ থেকে ৩ হাজার ৯২০ সৌদীরিয়াল, একটি স্বর্ণের চেন ও একটি আংটি, আব্দুল লতিফ হাসানের কাছ থেকে ৩ হাজার ৪শ’ সৌদীরিয়াল, ক্যাটারিং সেকশনের লোডিং স্টাফ হুমায়ুন কবির ও জুনিয়র এক্সিকিউটিভ রবিউল ইসলামের কাছ থেকে পৃথকভাবে দুটি ব্রেসলেট উদ্ধার করে এপিবিএন সদস্যরা। রাতে তাদের আটক করে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের সামনে চোরাই সৌদিরিয়াল ও স্বর্ণলংকারগুলো জব্দ করা হয়। তারা ওই যাত্রীর ব্যাগ থেকে পরস্পরের যোগসাজশে চোরাই মালামাল ভাগবাটোয়ারা করে বলে পুলিশের কাছে লিখিত স্বীকারোক্তি দেয়।
তবে এখনও ঐ যাত্রীর ৯ হাজার রিয়ালের মধ্যে ২ হাজার রিয়াল ও ২০ ভরি স্বর্ণালঙ্কারের মধ্যে ১৬ ভরি স্বর্ণালঙ্কারের হদিস পায়নি পুলিশ। এর মধ্যে ৮টি হোয়াইট গোল্ডের আংটি, ৮টি স্বর্ণের চুড়ি, ১৪টি স্বর্ণের চেন এবং ২টি স্বর্ণের ব্রেসলেট রয়েছে। রাতে চোরাই সৌদীরিয়াল উদ্ধারের ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় মামলা করার জন্য ঐ যাত্রী বিমান বন্দর থানায় যান।
কিন্ত তিনি প্রবাসী হওয়ায় মামলা না করে বিষয়টি বিমানবন্দরের সিভিল এভিয়েশনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে নিস্পত্তির জন্য এপিবিএনকে অনুরোধ জানালে গতকাল শনিবার সকালে এপিবিএন কর্তৃপক্ষ ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের চুরির অভিযোগে ৬ কর্মচারীকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে পাঠায়।
সৌদীপ্রবাসী পারভীন আক্তার কাছে অভিযোগ করেন, এর আগেও তিনি একাধিকবার ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের বিমানে ভ্রমণ করে লাগেজ নিয়ে হয়রানির শিকার হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে বসবাসরত প্রবাসীরা নিজের দেশের এয়ারলাইন্স দেখে সবসময় ইউনাইটেড এয়ার ওয়েজে ভ্রমণ করে। কিন্তু ইউনাইটেড কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের সঙ্গে প্রায় সময় হয়রানি ও দুর্ব্যবহার করে থাকে।
এ বিষয়ে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের এজিএম (পিআর) কামরুল ইসলাম বলেন, ‘এয়ারওয়েজের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষই জড়িতদের পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে। এর দায়-দায়িত্ব ইউনাইটেড এয়ার বহন করবে না।’