আলোচনার মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন এখন বাংলাদেশের জন্য জরুরী হয়ে দাড়িয়েছে : এ্যান মেইন এমপি
বাংলাদেশের মানবাধিকার ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে চরম উদ্বেগ প্রকাশ করে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা বলেছেন, রাজনৈতিক সমঝোতা না থাকার কারনে এভাবে একটি দেশের মানবাধিকার ভূলণ্ঠিত হতে পারে না। জনগণের মৌলিক অধিকারের দিকে না তাকিয়ে সরকার ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার চিন্তায় মগ্ন থাকলে আইনের শাসন সেখানে থাকে না। বাংলাদেশে এখন সেই পরিস্থিতিই চলছে। বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি অপার সম্ভানাময় দেশ। স্বাধীন হওয়ার তেতাল্লিশ বছর পেরিয়ে গেলেও দেশটিতে রাজনৈতিক স্থিতিলতা আসেনি বললেই চলে। সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে পারস্পরিক হৃদ্যতা পূর্ণ সম্পর্কে অভাব এবং রাজনৈতিক সম্পর্কে ব্যক্তিগত রেষারেষি মিশে গিয়ে পরিস্থতি জটিল আকার ধারণ করেছে। তাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলো মনে করে আর দেরী করা উচিত নয়, এখনই সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে সমঝোতা প্রয়োজন। আন্তরিক পরিবেশে আলোচনার মাধ্যমে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় উভয় দলকে সমজোতার মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হবে।
গত বুধবার ব্রিটেনের সর্ববৃহৎ ওভারসিজ স্টুডেন্ট অর্গানাইজেশন ‘বাংলাদেশী স্টুডেন্ট ইউনিয়ন ইউকের উদ্যোগে আয়োজিত সেমিনারে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য এ্যামেনেষ্টির দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান অব্বাস ফায়েজ।
বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিনিধি, ফরেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক আইনজীবী সাংবাদিক, সুশীল সমাজের প্রতনিধি সহ বাংলাদেশী স্টুডেন্ট ইউনিয়নের স্পেশাল প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।
ব্রিটিশ পার্লামেন্ট এর সদস্য ম্যাথো অফার্ড এমপির সভাপতিত্বে ও সঞ্চালনায় এবং বাংলাদেশী স্টুডেন্ট ইউনিয়ন ইউকের চেয়ারপার্সন আতা উল্লাহ ফারুক এর স্বাগত বক্তব্যেও মাধ্যমে সেমিনারে বক্তব্য রাখেন ব্রিটিশ পার্লামেন্টস এর বাংলাদেশ বিষয়ক অলপার্ট পার্লামেন্টারী গ্রুপের চেয়ারম্যান এ্যান মেইন এমপি, রিচার্ড ফোলার এমপি, এমপি জীম ফিট প্রেট্রিক, এ্যানেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এর দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান আব্বাস ফায়েজ, কমনওয়েলথ এর ভারপ্রাপ্ত হেড অব হিউম্যান রাইটস ক্যারন মেক ক্যানিজ, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী ব্যারিস্টার টবি কেডম্যান, পার্লামেন্টারী রিসার্স স্পেশালিষ্ট মিরা সোনেচা, রিড্রেস এর ডাইরেক্টর লাটিজা পালানি, কূটনৈতিক ফাতিমা আহমদ মানবাধিকার সংগঠক কাপিল, ইউনিভার্সিটি অব ক্যামব্রিজ এর রিসার্স ফেলো ফ্লিক অসবর্ণ, ডিইয়া হু লী, সারা পাইন, রিচেল পিক কেরিং, লন্ডন ইম্প্যারিয়াল কলেজ এর মিঃ নাট, হিউম্যান রাইটস সংগঠক সুমী ব্যাওজামিন প্রমুখ।
সেমিনারে বাংলাদেশের চলমান মানবাধিকার লঙ্ঘন, রাজনৈতিক সহিংসতা, ক্রসফায়ার এবং রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতন-নিপীড়নের একটি ভিডিও ডকুমেন্টারী প্রদর্শিত হয়।
ব্রিটিশ পার্লামেন্ট এর বাংলাদেশ বিষয়ক অল পার্টির পার্লামেন্টারী গ্র“পের চেয়ারম্যান এ্যান মেইন এমপি বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে বলেন, শুধুমাত্র সমঝোতার অভাবে একটি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যে সহিংস আকার ধারণ করতে পারে সেটা বাস্তবেই বাংলাদেশে হচ্ছে। মানবাধিকার পরিস্থিতি বাংলাদেশে এভাবে লঙ্ঘিত হতে পারে সেটা চরম অমানবিক। এইন মেইন বাংলাদেশের গার্র্মেন্টস শিল্পের শ্রমিকদের মানবেতর জীবন যাপন সম্পর্কে বলেন, সরকারের আন্তরিকতার অভাব সেখানে স্পষ্ঠতই পরিলক্ষিত হয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্র্রদায় চরম মানবেতর জীবন-যাপন করছে। রাজনৈতিক কারনে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলা হচ্ছে বলে কর্তৃপক্ষ দায় এড়িয়ে যেতে চাইলেও এখন পর্যন্ত মূল অপরাধিদের আইনের মুখোমুখী আনা হচ্ছে না। তিনি বলেন, সরকার এবং বিরাধীদল গুলোর মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ন আলোচনার মাধমে দ্রুত একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন জরুরী হয়ে দাড়িয়েছে।
এ্যামেনেষ্টি ইন্টারন্যাশনাল এর মহাসচিব আব্বাস ফায়েজ বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের কথা উল্লেখ বরে বলেন, সরকার প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির মুখোমুখী না করে এটা নিয়ে রাজনীতি করছে। আমরা এ বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। তিনি ক্রসফায়ারকে মানবতা বিরোধী উল্লেখ করে বলেন, এটা আইনের শাসনের নমুনা নয়।
সেমিনারে আয়োজক এবং সঞ্চালক বিএসইউর প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট আতা উল্লাহ ফারুক সেমিনারের আয়োজন এবং বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতিকে মানবিক বিপর্যয় উল্লেখ করে বলেন, শিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশে আমরা সুদূর প্রবাসে থাকলেও দেশের সংকটে ভূমিকা রাখা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। বাংলাদেশে রাজনৈতিক কারনে ক্রসফায়ারের নামে যেভাবে জীবন্ত মানুষকে মেরে ফেলা হচ্ছে সেটা শুধু অমানবিকই নয়, চরম মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এক্ষেত্রে যথাযথ ভূমিকা রাখতে হবে। তিনি বলেন, আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জামায়াত, জাতীয়পার্টিসহ অন্যান্য সকল রাজনৈতিক দলের মধ্যে সমজোতার মাধ্যমে দেশে শান্তি স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা আমাদের দাবি।