অনৈতিক সম্পর্কের নির্মম পরিণতি !
শহিদুল ইসলাম রাজী : ওরা দুইজনই বিবাহিত। রং নম্বরে পরিচয়। তারপর ওদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে, যা গড়ায় দৈহিক সম্পর্কে। আর এই দৈহিক সম্পর্ক ও ব্ল্যাক মেইলের কারণে ক্ষোভ থেকেই খুনি বনে যায় ফারহানা বেগম মিষ্টি। দক্ষিণ কাফরুলে একটি বেসরকারি কোম্পানির অ্যাকাউন্টস কর্মকর্তা সরদার রফিকুজ্জামান ওরফে বাচ্চু হত্যার রহস্য উন্মোচন করতে গিয়ে এসব তথ্য পায় গোয়েন্দারা। বাচ্চু হত্যার অভিযোগে মিষ্টিকে গ্রেফতারও করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
গোয়েন্দারা জানায়, বাচ্চুর সাথে অবৈধ সম্পর্ক থাকায় বাচ্চু মিষ্টিকে তার বন্ধুদের সাথেও দৈহিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করে। দৈহিক সম্পর্ক স্থাপনের দৃশ্যগুলো গোপনে ভিডিও করে সেসব ফুটেজ ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে বাসায় ডেকে নিয়ে প্রায়ই অবৈধ মেলামেশা করত। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় মিষ্টির পার্স থেকে টাকা-পয়সা ও স্বর্ণালঙ্কার ছিনিয়ে নিত বাচ্চু। ব্ল্যাক মেইল করার এসব ঘটনায় অতিষ্ঠ হয়ে পুঞ্জিভূত ােভে পূর্বপরিকল্পিতভাবে বাচ্চুকে হত্যা করেছে বলে স্বীকার করেছে মিষ্টি।
গতকাল দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, গোয়েন্দা পুলিশের এডিসি মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ও সিনিয়র এসি মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি দল রোববার রাত ১২টার দিকে খিলগাঁওয়ের মাটির মসজিদ এলাকার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে বাচ্চু হত্যার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে মিষ্টিকে গ্রেফতার করে। এ সময় তার কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডের সময় খোয়া যাওয়া দৈহিক সম্পর্ক স্থাপনের দৃশ্যসংবলিত ল্যাপটপ, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মিষ্টির একটি ওড়না এবং একটি মোবাইল সেট জব্দ করেছে পুলিশ।
যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রফিকুজ্জামান বাচ্চুকে হত্যার কথা মিষ্টি স্বীকার করেছে। দৈহিক সম্পর্কে বাধ্য করা এবং পরে তার ভিডিওফুটেজ নিয়ে ব্ল্যাক মেইল করায় বাচ্চুর প্রতি অতিষ্ঠ হয়ে মিষ্টি বাচ্চুকে খুন করে।
উল্লেখ্য, গত ৩১ ডিসেম্বর মঙ্গলবার দক্ষিণ কাফরুলের ৪৫৯/১ নম্বর বাড়ির পাঁচতলার একটি রুম থেকে হাত-পা বাঁধা ও গলাকাটা অবস্থায় সিকিউরেক্স সিকিউরিটি কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার সরদার রফিকুজ্জামান ওরফে বাচ্চুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। চাঞ্চল্যকর এই হত্যায় থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশের ৭ নম্বর টিম ছায়া তদন্ত শুরু করে। তদন্তের ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনায় একপর্যায়ে মিষ্টিকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
মিষ্টি জানায়, বাচ্চুর সাথে চার থেকে পাঁচ বছর আগে রং নম্বরে পরিচয় হয়। তারপর তাদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠে এবং একপর্যায়ে তা শারীরিক সম্পর্কে গড়ায়। তারা দু’জনই বিবাহিত। এই কয় বছরে অসংখ্য বার বাচ্চুর স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে তার বাসায় উভয়েই দৈহিক সম্পর্কে মিলিত হয়েছে। এর একপর্যায়ে রফিক তার বন্ধুদের সাথেও দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করতে মিষ্টিকে বাধ্য করে। এসব দৈহিক সম্পর্ক স্থাপনের দৃশ্যগুলো বাচ্চু গোপনে ভিডিও ক্যামেরায় ধারণ করে।
পরে ওই সব ভিডিও ক্লিপ ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে রফিক মিষ্টিকে বাসায় ডেকে নিত এবং ব্ল্যাক মেইল করার চেষ্টা করত। বাচ্চু বিভিন্ন সময় মিষ্টির পার্স থেকে টাকা পয়সা ছিনিয়ে নিত। এ ছাড়া একদিন মিষ্টির হাতে পরা দেড় ভরি ওজনের স্বর্ণের এক জোড়া বালাও নিয়ে নেয় বাচ্চু। বিভিন্ন সময়ে বাচ্চু মিষ্টির কাছ থেকে সর্বমোট ৮০ হাজার টাকা ধার নেয়। বাচ্চু এভাবে মিষ্টিকে ব্ল্যাক মেইল করার ফলে সে অতিষ্ঠ হয়ে রফিককে খুন করার পরিকল্পনা করে।
মিষ্টি আরো জানায়, পরিকল্পনা করার কয়েক দিন পরে দুইজনে বনানী থেকে বাচ্চুর বাসায় যায়। বাচ্চুর বাসায় যাওয়ার পর মিষ্টি বাচ্চুকে বলে তারা আজ ভিন্ন পন্থায় দৈহিক সম্পর্কে মিলিত হবে। এ সময় সে বাচ্চুকে বলে তার হাত-পা চেয়ারের সাথে বাধা থাকবে এবং এই হাত-পা বাধা অবস্থায় তারা দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করবে। এতে বাচ্চুও সম্মতি দেয়। ফলে বাচ্চুর হাত ও দুই পা গামছা দিয়ে এবং হাত দু’টি মিষ্টি তার ওড়না দিয়ে চেয়ারের সাথে বেঁধে ফেলে। এরপর মিষ্টি বাচ্চুকে চোখ বন্ধ করতে বলে। বাচ্চু চোখ বন্ধ করলে মিষ্টি গোপনে তার পার্সে রাখা একটি স্টিলের ছুরি বের করে বাচ্চুর ঘাড়ে ও বুকে এলোপাতাড়ি কোপ দিতে থাকে। একপর্যায়ে বাচ্চু তার হাত ধরে ফেললে মিষ্টি হাতে কামড় দিয়ে তার হাত ছাড়িয়ে নেয়। পরে আবারো বাচ্চুকে এলোপাতাড়ি কোপায়। পরে বাচ্চু দ্রুত দুর্বল হয়ে গেলে তাকে গলাকেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে মিষ্টি। তারপর সে বাথরুমে গিয়ে হাত-পা ধুয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে বাচ্চুর লাশটি ভেতরে রেখে বাসায় তালা মেরে বেরিয়ে যায়। যাওয়ার সময় বাচ্চুর মোবাইল ফোন ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরিটি রাস্তায় ফেলে দেয় এবং ল্যাপটপটি নিয়ে যায়। মিষ্টি ল্যাপটপটি নিয়ে খিলক্ষেতের বাসায় যায় এবং ল্যাপটপে থাকা গোপনে ধারণকৃত তার শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের দৃশ্যসংবলিত ভিডিওফুটেজ ডিলিট করে দেয়, যা পরে মিষ্টির বাসা থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।