গণহত্যার পরেও বিক্ষোভে অনড় মুরসি সমর্থকরা

Egyptসেনা অভ্যুত্থানে গত ৩ জুলাই মিশরের ইতিহাসে প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে উৎখাতের পর তার সমর্থকদের ওপর গত ৮ ও ২৬ জুলাই রাতভর দুই দফা গণহত্যা চালিয়েছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী।
দুই দফা গণহত্যায় কয়েকশ’ সমর্থক নিহত হওয়ার পরেও বিক্ষোভ অব্যাহত রাখার ব্যাপারে অনড় অবস্থানের কথা জানিয়েছে মুরসির সমর্থক মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতৃত্বাধীন ইসলামী জোট।
সর্বশেষ শুক্রবার রাতভর মুরসি সমর্থকদের ওপর গণহত্যা চালায় সেনা সমর্থিত অন্তর্বর্তী সরকার। এতে দেড় শতাধিক নিহত ও সহস্রাধিক আহত হয়েছে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে মিশরের সেনাবাহিনীর পৃষ্ঠপোষক যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।
গণহত্যা চালানোর পর মুরসি সমর্থকদেরকে ‘দ্রুততম সময়ে’ নসরসিটির রাবা আল-আদাবিয়া স্কয়ার থেকে উৎখাতের হুমকি দিয়েছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে এই হুমকি এবং দেশজুড়ে সহিংসতা সেখানে বিক্ষোভরত হাজার হাজার সমর্থকের ওপর তেমন প্রভাব ফেলেনি।
মুসলিম ব্রাদারহুডের মুখপাত্র জেহাদ আল-হাদ্দাদ বলেন, শনিবারের হতাহতের ঘটনায় সমর্থকরা ক্ষুব্ধ, তবে তারা ‘খুবই দৃঢ়প্রত্যয়ী’।
‘সর্বত্র শোকাবহ এবং ক্ষোভ, কিন্তু দৃঢ়প্রত্যয়ের একটা অনুভূতিও বিরাজমান। বিক্ষোভের ব্যাপারে সাধারণ মানুষ অনড় রয়েছে. এএফপি-কে বলেন তিনি।
‘যদি আমরা মৃত্যুবরণ করি, আমরা আমাদের স্রষ্টার সান্নিধ্য পাচ্ছি এবং আমরা একটি ন্যায়সঙ্গত কারণেই এটা করছি। হয় আমরা মৃত্যুকে আলিঙ্গন করবো, অথবা সফল হবো’ বলেন হাদ্দাদ।
এদিকে, শুক্রবারের গণহত্যার পর দেশটির বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে। পোর্ট সৈয়দে কায়রোয় নিহত এক মুরসি সমর্থকের জানাজাও হামলার শিকার হয়। এতে অন্তত একজন নিহত ও ১৫ জন আহত হয়।
অন্যদিকে, মুরসি সমর্থকদের ওপর গণহত্যার ঘটনায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ ঘটনায় ‘গভীর উদ্বেগ’ জানিয়েছে। জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে বৃটেন।
তুর্কি প্রধানমন্ত্রী রেসেপ তাইয়িপ এরদোগান এই ঘটনাকে মিশরের গণতন্ত্র, গণমানুষের প্রত্যাশা ও পুরো জাতির ওপর গণহত্যা বলে আখ্যায়িত করেছেন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিরবতারও নিন্দা জানিয়েছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি সহিংসতা বন্ধ করে মিশরীয়দের ‘খাদের কিনারা থেকে সরে আসার’ আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি সেনা সমর্থিত সরকারের ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহামেদ আল-বারাদিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন।
মুরসি সমর্থকদের ওপর ‘মাত্রাতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের’ নিন্দা জানিয়েছে মুরসি বিরোধী এপ্রিল-৬ মুভমেন্ট এবং সংগঠনটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছে। ম্যান্ডেটের নামে ‘অতিমাত্রায় কিছু সংঘটিত’ করার ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছে সেনা অভ্যুত্থান সমর্থক তামারোদ (বিদ্রোহী)।
বিক্ষোভকারীদের ওপর ‘মাত্রাতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের’ নিন্দা জানিয়েছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহামেদ আল-বারাদি এবং আল-আজহারের গ্রান্ড মুফতি আহমেদ আল-তায়েব। অবশ্য ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল সলভেশন ফ্রন্ট এজন্য ব্রাদারহুডের উস্কানিকে দায়ী করেছে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button