৯৭ উপজেলার নির্বাচন সম্পন্ন, চলছে গণনা
দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রার্থীদের নির্বাচন বর্জন, ভোটে বাধা প্রদান, অনিয়মের অভিযোগের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে চতুর্থ উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপের ৯৭ উপজেলার নির্বাচন। বুধবার সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে বিকাল ৪টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয় এই নির্বাচন । এখন চলছে ভোট গণনা। উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়া ১৯ দলীয় জোটের সমর্থিত প্রার্থীরা ছাড়াও কারচুপির অভিযোগে কয়েকজন বিদ্রোহী প্রার্থীও নিজেদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেছেন ।
প্রথম ধাপের এই নির্বাচনে ৯৭টি উপজেলা পরিষদে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলায় ভোটগ্রহণকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ইতোমধ্যে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
৯৭টি উপজেলার মধ্যে প্রায় ৪০টিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। এ ছাড়া ৫৪টিতে বিএনপির একাধিক নেতা প্রার্থী ছিলেন। প্রথম দফায় যে ৯৭টি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে সেখানে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান এই ৩টি পদের জন্য এবারে প্রার্থী রয়েছেন এক হাজারের বেশি।
ভোট চলাকালীন সময়ে সকালের দিকে কারচুপির অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয় বরিশালের গৌরনদী, ভোলার লালমোহন ও শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার বিএনপি সমর্থিত ও বিদ্রোহী ৫ প্রার্থী।
সকাল পৌনে ১০টার দিকে জেলার গৌরনদী প্রেসক্লাব চত্বরে আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে সাংবাদিকদের কাছে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন তারা।
প্রার্থীরা হলেন- বিএনপি সমর্থিত চেয়্যারম্যান প্রার্থী আবুল হোসেন মিয়া ও বিদ্রোহী প্রার্থী লোকমান হোসেন খান এবং একই দলের বিদ্রোহী ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী জহির সাজ্জাদ হান্নান।
অন্যদিকে ভোলার লালমোহন উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী আকতারুজ্জামান টিটব ভোট বর্জন করেন। তিনি এ নির্বাচনে দোয়াত-কলম প্রতীক নিয়ে লড়ছিলেন।
সরকারদলীয় প্রার্থীর সমর্থকরা ভোট কারচুপি ও এজেন্টদের বের করে দেয়ার অভিযোগে শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলা বিএনপির সমর্থিত প্রার্থী শাহেদ পারভেজ আব্বাস মোল্লা নির্বাচন বর্জন করেন। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুন্নাহারের কাছে এ অভিযোগে দিয়ে তিনি নির্বাচন বর্জন করেন।
আব্বাস মোল্লা লিখিত অভিযোগে বলেন, সরকারদলীয় সমর্থকরা বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে আমার এজেন্টদের বের করে দিয়ে ভোট কারচুপি করছে।
এরপর জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহিতুল গনি মিন্টু সরদার সাংবাদিকদের বলেন, সরকার দলীয় প্রার্থীর সমর্থকরা বিএনপির প্রার্থীর এজেন্টদের মারধর করে কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়ে ভোট কারচুপি করছে। এতেই বুঝা যায় দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা এ নির্বাচন বয়কট করছি।
অন্যদিকে উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছে। এ নির্বাচন কেমন হচ্ছে তা দেখতে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনাও ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে যান।
নির্বাচন শেষে সকল পর্যবেক্ষকদের নিয়ে বৈঠক করে তারপর আনুষ্ঠানিক মতামত জানাবেন বলেও তিনি সাংবাদিকদের জানান।
ড্যান মজিনা সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার তিনটি ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে আসেন। তিনি মোহনপুর উপজেলার বাকশিমহিল মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মোহনপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও বসন্ত কেদার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র পরিদর্শন করেন।
এদিকে, রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করে বলেন, সাজানো প্রশাসন দিয়ে তামাশার জবরদস্তি নির্বাচন করছে সরকার।
রিজভী বলেন, সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন কেন্দ্রে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টদের বের করে দেয়া হচ্ছে। সরকারদলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন জায়গায় বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালাচ্ছে।
তিনি অভিযোগ করেন, বগুড়া জেলার সোনাতলা ও সারিয়াকান্দি উপজেলার বিভিন্ন কেন্দ্রে সরকার সমর্থক প্রার্থীদের তা-ব, পোস্টার ছেঁড়া এবং পোলিং এজেন্টদের বের করে দেয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, এবারের উপজেলা নির্বাচন এমন এক সময় হচ্ছে যার কিছুদিন আগে গত ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে বড় বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো অংশ নেয়নি এবং ভোটার উপস্থিতি ছিল কম। কিন্তু নির্দলীয় এই নির্বাচনটিতে সবগুলো রাজনৈতিক দলই তাদের প্রার্থী রেখেছে ও সমর্থন দিয়েছে।
৯৭ উপজেলা হচ্ছে : ঢাকার দোহার ও নবাবগঞ্জ, খাগড়াছড়ির রামগড়, সদর, মাটিরাঙ্গা, মহালছড়ি, মানিকছড়ি ও পানছড়ি, ঝিনাইদহ সদর, কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর ও শৈলকূপা, মাগুড়ার সদর ও শ্রীপুর, ভোলার লালমোহন, মানিকগঞ্জের শিবালয়, দৌলতপুর, সিংগাইর ও সাটুরিয়া, গাজীপুরের কাপাসিয়া, রাজবাড়ী সদর, পাংশা ও বালিয়াকান্দি, পঞ্চগড়ের সদর, বোদা, আটোয়ারী ও দেবীগঞ্জ, রংপুরের তারাগঞ্জ, ও মিঠাপুকুর, কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী, ভূরুঙ্গমারী ও উলিপুর, গাইবন্ধার সাঘাটা ও গোবিন্দগঞ্জ, বগুড়ার দুপচাঁচিয়া, ধুনট, নন্দীগ্রাম, সারিয়াকান্দি, শেরপুর ও সোনাতলা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল, নাটোরের সিংড়া, সিরাজগঞ্জ সদর, কাজীপুর, রায়গঞ্জ ও উল্লাপাড়া, মেহেরপুরের সদর, কুষ্টিয়া সদর ও ভেড়ামারা, নড়াইলের কালিয়া, জামালপুরের সদর ও সরিষাবাড়ী, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী ও মকসুদপুর, মাদারীপুরের কালকিনি, শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ, জজিরা, ডামুড্যা ও গোসাইরহাট, নরসিংদীর পলাশ ও বেলাবো, সুনামগঞ্জের দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, দোয়ারাবাজার ও ছাতক, সিলেটের বিশ্বনাথ, জকিগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ, গোয়াইনহাট ও জৈয়ন্তাপুর, হবিগঞ্জের বাহুবল ও মাধবপুর, চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও মিরসরাই, নওগাঁর রানীনগর ও মহাদেবপুর, সাতক্ষীরার আশাশুনি, কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ, বজিতপুর ও নিকলী, রাজশাহীর মোহনপুর, পাবনার সুজানগর, সাঁথিয়া ও আটঘরিয়া, খুলনার দিঘলিয়া ও কয়রা, বরিশালের গৌরনদী ও বাকেরগঞ্জ, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, দিনাজপুরের কাহারোল ও খানসামা, নীলফামারীর ডিমলা, সৈয়দপুর ও জলঢাকা, যশোরের অভয়নগর, নেত্রকোনার দুর্গাপুর ও কেন্দুয়া উপজেলা।