ভাষা দিবসে তমদ্দুন মজলিসের আলোচনা সভা
সরকারের নৈতিকভাবে ক্ষমতায় থাকার অধিকার নাই
বর্তমান সরকারের নৈতিকভাবে ক্ষমতার থাকার অধিকার নাই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া। তিনি বলেন, আইনের চোখে এ সরকার নির্বাচিত সরকার নয়। এমনকি সাংবিধানিক সরকারও নয় বলে আমি মনে করি।
তিনি শুক্রবার বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ভাষা আন্দোলনের স্থপতি সংগঠন তমদ্দুন মজলিসের উদ্যোগে “ভাষা আন্দোলনের ঐতিহাসিক পটভূমি ও তাৎপর্য” শীর্ষক আলোচনা সভায় একথা বলেন।
ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, ভাষা আন্দোলনের চূড়ান্ত লক্ষ্য আজো অর্জিত হয়নি। সাতচল্লিশে ভাষা আন্দোলনের সূচনা হয় ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবের মর্মবাণীর আলোকে আমাদের স্বাধীনতাকে পূর্ণাঙ্গ রূপদানের লক্ষ্যে। একাত্তরের পূর্বাপর গণতন্ত্রের বিকাশ বারবার বাধাগ্রস্ত হওয়ায় স্বাধীনতার সুফল লাভ থেকে জনগণ বঞ্চিত হচ্ছে।
বিএনপির শীর্ষ এ নেতা বলেন, গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জনগণ ভোট দেয়নি। জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেনি। জনগণ নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে। তারা গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। তাদের ক্ষমতায় থাকার কোন নৈতিক অধিকার তাদের নেই।
তিনি বলেন, আইনের চোখে এ সরকার নির্বাচিত সরকার নয়। এমনকি সাংবিধানিক সরকারও নয় বলে আমি মনে করি। তিনি আরো বলেন, ভাষা আন্দোলনের স্থপতি সংগঠন তমদ্দুন মজলিস সৎ চরিত্রবান লোক তৈরি করে। এর একটা ঐতিহ্য রয়েছে। আমি এর সমৃদ্ধ কামনা করি।
আলোচনা সভায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন বলেন, ভাষা আন্দোলন আর বাংলাদেশের স্বাধীনতা রাহুমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত ভাষা আন্দোলনের চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জিত হতে পারে না। তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলনকালে বিভিন্ন মত ও পথের মানুষের মধ্যে যেভাবে নজিরবিহীন ঐক্য গড়ে উঠেছিল, আজো ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের অর্জনকে স্বার্থক করে তুলতে সমগ্র জাতিকে সা¤্রাজ্যবাদ, আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সিসা-ঢালা ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, দেশে আজ অসততার রাজত্ব কায়েম হয়েছে। এর জন্য আমাদের ব্যর্থতা স্বীকার করতে হবে।
মঈনুল হোসেন বলেন, একুশ মানে মাথা নত না করা। কিন্তু আজ আমরা পদে পদে মাথা নত করছি। মাথা নত করে স্যালট দিচ্ছি। তিনি বলেন, একুশ আমাদের সাহস যোগায়, কিন্তু এগুলো আজ কোথায় যেন হারিয়ে গেছে ? আসলে সৎ না থাকলে সাহস থাকে না।
তিনি আরো বলেন, আমার পিতা মরহুম তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া আওয়ামী লীগের সংগঠক ছিলেন। ইত্তেফাক বের করার পর দলীয় পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন তিনি। কখনো দলীয় চিন্তা করে সাংবাদিকতা করেননি। তিনি সত্য কথা সাহসের সাথেই বলেছেন। সত্য প্রকাশের জন্য বেশ কয়েকবার তাকে জেল কাঠতে হয়েছে। আর আজকে আমরা কি দেখছি।
সিনিয়র এ আইনজীবী বলেন, বঙ্গবন্ধুর গুণ-গান এখন শুনা যায় না। বঙ্গবন্ধুর নাম ব্যবহার করে জনগণের সম্পদ চুরি করে বিদেশে পাচার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, নোবেল জয়ী ড. ইউনূসের পক্ষে কথা বলা যাবে না। সম্মানিকে আমরা সম্মান দিতে জানি না।
সভায় প্রফেসর ড.এমাজ উদ্দীন আহমদ বলেন, বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী আন্দোলন তমুদ্দন মজলিসের মাধ্যমেই প্রথম এদেশে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছিল। সে আন্দোলনের ধারা আজো অব্যাহত রয়েছে। কারণ এদেশে যারা সেক্যুলার বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের কথা বলেন, তারা ক্ষমতায় থাকুন বা না থাকুন এ দেশের জনগণের আদর্শিক তথা ধর্মীয় চেতনাকে উপেক্ষা করতে পারে না। তিনি বলেন, যারা ভাষার জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো সকলের প্রয়োজন। তাদের সম্মান জানানোর ভাষা আমার নাই। তারা অমর হয়ে থাকবেন।
তমদ্দুন মজলিসের সভাপতি অধ্যাপক এম এ সামাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাবির সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. এমাজ উদ্দীন আহমদ। বক্তব্য রাখেন, বিশিষ্ট ভাষা সৈনিক ও সাংবাদিক অধ্যাপক আব্দুল গফুর, কলামিস্ট ও সাংবাদিক আব্দুল আওয়াল ঠাকুর, বিশিষ্ট আইনজীবী এডভোকেট আব্দুল মোবিন ও মোহাম্মদ শাহাবুদ্দীন খান প্রমুখ। সভায় ৫ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে মাতৃভাষা পদক দেয়া হয়। এরা হচ্ছেন- তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া (মরণোত্তর, সাংবাদিকতা), ড. গোলাম মকসুদ হিলালী (মরণোত্তর, বাংলা ভাষা গবেষণা), ড. আশরাফ সিদ্দিকী (সাহিত্য), আব্দুর রাজ্জাক সন্যামত (মরণোত্তর, ভাষা আন্দোলন), অধ্যক্ষ মোহাম্মদ হোসেন খান (মরণোত্তর, ভাষা আন্দোলন)।