সুখে-দুঃখে সারা জীবন

শেষযাত্রাও একসঙ্গে

Sheshএকেই বুঝি বলে সঙ্গী। একেই বুঝি বলে বন্ধু। দাম্পত্য জীবনের দীর্ঘ ৬০টি বছর তাঁরা কাটিয়েছেন একসঙ্গে। সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, খুনসুটিতে তাঁরা ছিলেন পরস্পরের নিত্য ভাগীদার। গাঁটছড়া বাঁধার পর জীবনে কখনো আলাদা হননি।
ভালোবাসার টান এমনই ছিল যে, মৃত্যুও তাঁদের আলাদা করতে পারেনি। পরস্পরের হাতে হাত রেখেই শেষবারের মতো চোখ বুজেছেন তাঁরা। ঘটনাটি ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের বাটাভিয়ায়। স্বামীর নাম এড হেইল (৮৩) ও স্ত্রীর নাম ফ্লোরিন হেইল (৮২)। ফ্লোরিনের মৃত্যুর পর হাসপাতালের বিছানায় তাঁর হাত ধরে থেকেই মাত্র ৩৬ ঘণ্টা পর পৃথিবী ছেড়েছেন এড।
আত্মীয় ও পরিচিতরা জানান, তাঁদের কাছে এড ও ফ্লোরিন দম্পতি ছিলেন আদর্শ প্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। কখনো তাঁদের আলাদা হতে দেখেননি তাঁরা। তাঁদের এই মধুর সম্পর্ক নিয়ে ঠাট্টা করে ফ্লোরিনকে যখন তাঁরা জিজ্ঞেস করতেন, তখন ফ্লোরিনের জবাব ছিল- তাঁর আগে এডকে মরতেই দেবেন না!
৬০ বছর আগে এক পার্টিতে পরিচয় ফ্লোরিন ও এডের। তরুণ প্রকৌশলী এড যখন ফ্লোরিনের বাবা-মায়ের কাছে গিয়ে তাঁদের মেয়েকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেন, তখন তাঁরা বাস্তবিকই সে প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। কারণ মাত্র তিন মাস আগে ফ্লোরিনের বিয়ে হয়েছিল। সড়ক দুর্ঘটনায় তাঁর স্বামীর মৃত্যু হয়েছিল।
ওই দুর্ঘটনায় ফ্লোরিনও প্রচণ্ড আঘাত পান এবং মানসিকভাবে ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন। এমন অবস্থায় এত শিগগির মেয়েকে আবার বিয়ের পিঁড়িতে বসাতে রাজি ছিলেন না তাঁরা। কিন্তু তাঁদের ‘না’কে মানতে পারেননি এড। তিনি ফ্লোরিনকেই বিয়ে করবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেন এবং শেষ পর্যন্ত ১৯৫৩ সালের ১২ মে ফ্লোরিনকেই বিয়ে করেন।
মাসখানেক আগে নিউ ইয়র্কের রোসেস্টারের এক হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এডকে। তাঁর কিডনি বিকল হয়ে গিয়েছিল। ডায়াবেটিসও ছিল। মাঝে হার্ট অ্যাটাকও হয়েছিল। হাসপাতালে তাঁর কিডনি ডায়ালিসিস চলছিল। এডকে ভর্তির দিনকয়েক পরে ৪ ফেব্রুয়ারি ফ্লোরিন হৃদরোগে আক্রান্ত হন।
হাসপাতালের শয্যায় শায়িত এড বললেন, তিনি ফ্লোরিনকে দেখতে চান। কিন্তু এড এতই অসুস্থ ছিলেন যে, তাঁকে হাসপাতাল থেকে নড়াচড়া করানো সম্ভব ছিল না। কিন্তু পরিবারের সদস্যদের অনুরোধে দুই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁদের দুজনকে জীবনের শেষ পর্যায়ে বাটাভিয়ার হাসপাতালের একটি কক্ষে পাশাপাশি বিছানায় রাখার ব্যবস্থা করে।
৭ ফেব্রুয়ারি ফ্লোরিন মারা যান। পাশেই শয্যাশায়ী এড তাঁর হাতে হাত রেখেই ৩৬ ঘণ্টা পর চিরতরে চোখ বোজেন। ১৩ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসের সূচনালগ্নে বাটাভিয়ার সেন্ট মেরি ক্যাথলিক গির্জায় একসঙ্গে তাঁদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হয়। সূত্র : ডেইলি মেইল।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button