‘মুসলমানের মানবাধিকার থাকতে নেই’ বইয়ের প্রকাশনা উত্সব

দেশে বর্তমানে ফ্যাসিবাদ বনাম গণতন্ত্রের লড়াই চলছে উল্লেখ করে বইয়ের প্রকাশনা উত্সবে বিশিষ্টজনরা বলেছেন, এ লড়াইয়ে নির্যাতিত জনগণের পক্ষে সাহসিকার সঙ্গে সত্য উচ্চারণ করায় আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বিনা বিচারে ১০ মাস ধরে কারারুদ্ধ রয়েছেন। ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে মুসলমানদের পক্ষে কথা বলাই তার জন্য কাল হয়েছে। দেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, একদলীয় মিডিয়া ও শাসনে গণমাধ্যমের ওপর বর্তমানে সেলফ সেন্সরশিপ চলছে।
শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে আমার দেশ-এর কারারুদ্ধ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের লেখা ‘মুসলমানের মানবাধিকার থাকতে নেই’ শীর্ষক বইয়ের প্রকাশনা উত্সবে দেশের রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, আইনজীবীসহ বিশিষ্টজনরা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ এ প্রকাশনা উত্সবের আয়োজন করে। ২০৮ পৃষ্ঠার এ বইটি প্রকাশ করেছে কাশবান প্রকাশন। বইটি একুশে বইমেলার কাশবন প্রকাশনের ৩৯৪ নম্বর স্টলে পাওয়া যাচ্ছে।
সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর সভাপতিত্বে প্রকাশনা উত্সবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ, বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, রাষ্ট্র ও সমাজচিন্তক কবি ফরহাদ মজহার, বিশিষ্ট
সাংবাদিক শফিক রেহমান, ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইউট্যাব) আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (আইইবি) ঢাকা কেন্দ্রের সভাপতি প্রকৌশলী মহসিন আলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আখতার হোসেন, আমার দেশ-এর ফিচার সম্পাদক কবি হাসান হাফিজ, বইটির প্রকাশক ও কাশবন প্রকাশনার স্বত্বাধিকারী আমিনুল ইসলাম প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। এ সময় অন্যদের মধ্যে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, আমার দেশ-এর বার্তা সম্পাদক জাহেদ চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় আমার দেশ পত্রিকা বন্ধ ও সম্পাদক মাহমুদুর রহমান জেলে কেন প্রশ্ন রেখে ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, নির্যাতিত জনগণের পক্ষে সাহসিকার সঙ্গে সত্য উচ্চারণ করায় আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বিনা বিচারে ১০ মাস ধরে কারারুদ্ধ রয়েছেন। ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে মুসলমানদের পক্ষে কথা বলাই তার জন্য কাল হয়েছে। তিনি এই অবৈধ সরকারের বিচার বিভাগের কাছে নিজের জামিন পর্যন্ত চাননি। আসলে ফ্যাসিবাদী এ সরকার চায় না সত্য প্রকাশ হোক।
৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদ পরিষ্কারভাবে সংবিধানের পরিপন্থী উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ সংসদে জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব নেই। সংবিধানে উল্লেখ রয়েছে, জনগণের ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে হবে। কিন্তু বর্তমান এমপিরা নির্বাচিত নন। এজন্য ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের সংসদ বলেছে এ নির্বাচন অগ্রহণযোগ্য। সরকারকে দখলবাজ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ভোটবিহীন নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তারা ক্ষমতা দখল করেছে। এ সরকার ক্ষমতার অপব্যবহার করে পুরো দেশটাকেই কারাগার বানিয়েছে। বর্তমান সংসদ জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি দ্বারা পরিচালিত হয় না।
দলমত নির্বিশেষে সবাইকে মাহমুদুর রহমানের লেখা ‘মুসলমানের মানবাধিকার থাকতে নেই’ বইটি পড়ার আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, সারা বিশ্বেই বর্তমানে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। তার বিবরণ মাহমুদুর রহমানের এ বইটিতে রয়েছে। কিন্তু চূড়ান্ত পর্যায় পর্যন্ত ষড়যন্ত্র ষড়যন্ত্রই থেকে যায়, তা বাস্তবায়ন হয় না। মাহমুদুর রহমানের মুক্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জনগণের সহ্য শক্তির ওপর নির্ভর করে অন্যায়কারী সরকার কতদিন ক্ষমতায় থাকবে। প্রধানমন্ত্রী বিবেকবান হলে এতোদিন মাহমুদুর রহমান কারাগারে থাকতেন না। তাকে দীর্ঘদিন জেলে রাখা অত্যাচারী শাসকের জন্য কাল হতে পারে।
অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, দেশের জনগণ এই স্বৈরাচারী সরকারকে চায় না। সরকার জনগণের মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করেছে। সত্ সাহস নিয়ে সত্য বলার কারণেই আজ মাহমুদুর রহমানকে জেলে আটকে রেখেছে এই অবৈধ সরকার। মাহমুদুর রহমানকে বাংলাদেশের বাক স্বাধীনতার সাহসী সৈনিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা সরকারকে বলবো, অবিলম্বে তার মুক্তি ও আমার দেশ পত্রিকা খুলে দেয়ার ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় রাজপথে জোর আন্দোলনের মাধ্যমেই দাবি আদায় করা হবে।
দেশে বর্তমানে ফ্যাসিবাদ বনাম গণতন্ত্রের লড়াই চলছে উল্লেখ করে কবি ফরহাদ মজহার বলেন, ৯০ ভাগ মুসলমানের ধর্মকে বর্তমানে ক্রমাগতভাবে অবমাননা করা হচ্ছে। প্রত্যেক মানুষের ধর্ম নিয়ে চিন্তার অধিকার রয়েছে। অথচ বাংলাদেশে মুসলমানদের পক্ষে কথা বললেই কথিত বুদ্ধিজীবীরা তাকে মৌলবাদী আখ্যা দেয়। বিএনপির উদ্দেশে তিনি বলেন, এ দেশে যারা গণতন্ত্র ও ইসলামের জন্য লড়াই করে তাদের সঙ্গে ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। দেশের জনগণ বিএনপিকে এখন আর তত্ত্বাবধায়কের দাবিতে আন্দোলন করে ক্ষমতায় বসাতে চায় না। জনগণ বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থান সম্পর্কে জানতে চায়। আপনারা ইসলামের পক্ষে আছেন কিনা? আপনারা জনগণের সামনে আপনাদের রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করুন। তিনি বলেন, দেশের মানুষ এ সরকারের ওপর কতটা ক্ষুব্ধ তা দু’-একটি মিডিয়া দেখলে বোঝা যাবে না। এজন্য গ্রামগঞ্জে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলতে হবে।
সাংবাদিক শফিক রেহমান বলেন, মুসলমানদের নিয়ে কেউ কিছু লিখলেই তাকে নির্যাতন করা হচ্ছে। মাহমুদুর রহমান নির্যাতিত মুসলমানদের পক্ষে কথা বলায় তাকে কারারুদ্ধ করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমার দেশ, দিগন্ত ও ইসলামিক টিভি বন্ধ, টকশোর ওপরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং দেশে একদলীয় মিডিয়া ও একদলীয় শাসন চলছে। কেউ তার কথা সঠিকভাবে উচ্চারণ করতে পারছে না। গণমাধ্যমসহ সবকিছুর ওপর সেলফ সেন্সরশিপ চলছে।
তিনি বলেন, মাহমুদুর রহমান আর কতদিন জেলে থাকবেন তা কেউ বলতে পারবেন না। তাকে মুক্ত করতে হলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আন্দোলন করতে হবে। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে এতো দলীয় মিডিয়া রয়েছে, তারপরও মাহমুদুর রহমানের লেখার জবাব দিতে পারছেন না। জবাব দিতে না পারলে গুডবাই বলে ক্ষমতা ছেড়ে বেরিয়ে যান।
রুহুল আমিন গাজী বলেন, মাহমুদুর রহমান সত্য ও বস্তুনিষ্ঠতার প্রতীক। কিন্তু আমরা অকৃতজ্ঞ যে তার মুক্তির জন্য কিছু করতে পারিনি। তিনি বলেন, আমার দেশ, দিগন্ত ও ইসলামিক টিভি বন্ধ। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশে আজ মুসলমানরা নির্যাতিত হচ্ছে। তাদের মানবাধিকার বলতে কিছু নেই।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button