পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন
বিএনপি প্রার্থী নূর মোহাম্মদ মণ্ডল চেয়ারম্যান নির্বাচিত
রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৯ দল-সমর্থিত নূর মোহাম্মদ মণ্ডল বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। সোমবার অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির এই প্রার্থী আনারস প্রতীকে ৭৪,৯৫২ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মতাসীন আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী এ কে এম সায়াদাত হোসেন বকুল কাপ-পিরিচ প্রতীকে পান ৭০,৮৭৭ ভোট। ফলে নূর মোহাম্মদ মণ্ডল ৪,০৬৫ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন। ১০৬টি কেন্দ্রের সবগুলোর ভোটগণনা শেষে সহকারী রিটার্নিং অফিসার এ টি এম জিয়াইল ইসলাম এই ফলাফল ঘোষণা করেন।
সোমবার শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ শেষে শুরু হয় ভোট গণনা। সকালের দিকে ভোটার উপস্থিতি কম থাকলেও দুপুর ১২টার পর কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। রিটার্নিং কর্মকর্তা ৭০ থেকে ৭৫ ভাগ ভোটার ভোট দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
এ দিকে ভোটগ্রহণকে কেন্দ্র করে পুরো উপজেলাকে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব, পুলিশ, আনছার, আনছার ব্যাটালিয়নসহ বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য দিয়ে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হয়। নানা কারণে এই উপজেলা নির্বাচনটি ছিল বিশেষভাবে আলোচিত।
সোমবার সারা দেশে মাত্র এই একটিই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি পীরগঞ্জে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা থাকলেও তা পিছিয়ে ২৪ জানুয়ারি নির্ধারণ করা হয়। দশম সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমপি নির্বাচিত হয়ে পরে তিনি তা ছেড়ে দিলে এখানে উপনির্বাচন হয়। এতে অন্য কোনো প্রার্থী না থাকায় ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হয়ে স্পিকার হিসেবে শপথ নেন।
সকাল ৮টায় ভোট গ্রহণের শুরুতে বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায় একজন ভোটারও নেই। অনেক কেন্দ্রে প্রার্থীর এজেন্টরাও আসেননি। তবে দুপুর ১২টার পর থেকে কেন্দ্রগুলোতে ভোটার আসতে থাকে দলে দলে। বেলা ৪টায় ভোট গ্রহণের সময়সীমা শেষ হলেও অনেক গ্রেন্দ্র নিয়মানুযায়ী উপস্থিত ভোটারদের ভোট গ্রহণ করেন প্রিজাইডিং অফিসারেরা।
বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটে বোর্ডের ঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে ভোট গ্রহণ চলছে। এই কেন্দ্রে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে পুলিশ প্রিজাইটিং অফিসারকে চাপ দিয়ে একই রুমে তিনটি বুথ বসিয়ে ভোট নেয়ার চেষ্টা করলে আনারস প্রতীকের এজেন্টদের বাধার মুখে তা হয়নি। এ ছাড়া ভোট গ্রহণ চলাকালে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
উপজেলার ১৫ ইউনিয়নের ১০৬ কেন্দ্রে মোট ভোটার ২ লাখ ৬২ হাজার ৭৩৫। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৩০ হাজার ১৫৩ ও মহিলা ভোটার ১ লাখ ৩২ হাজার ৫৮২ জন।
নির্বাচনে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ ও মহিলা) পদে ১৫ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
চেয়ারম্যান পদের তিন প্রার্থী হলেন- বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী সাবেক এমপি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নূর মোহাম্মদ মণ্ডল (আনারস), আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ভাতিজা একেএম ছায়াদত হোসেন বকুল (কাপ-পিরিচ), আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মেসকোয়ারা হাবিব মুক্তি (মোটরসাইকেল)।
ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৮ প্রার্থী। তারা হলেন- আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোনায়েম সরকার মানু (টিয়া পাখি), জাসদ নেতা শাহাদৎ হোসেন সাদা (বৈদ্যুতিক বাল্ব), জাপা নেতা জাইদুল ইসলাম (মাইক), বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী সৈয়দ আসাদুজ্জামান লিটন (নলকূপ), স্বতন্ত্র প্রার্থী আনওয়ারুল ইসলাম (বই), উত্তম কুমার সাহা (উড়োজাহাজ), নূরুল হুদা লিটন (চশমা) ও পীরগঞ্জ ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান নূরুল হোসেন মিনু খান (তালা)।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন চার প্রার্থী। তারা হলেন- আওয়ামী লীগ সমর্থিত রওশন আরা রীনা (কলস), আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ইসমত আরা শেলী (ফুটবল) ও আক্তার বানু লিপি (পদ্মফুল), স্বতন্ত্র প্রার্থী হাবিবা শাহীন মিথি (হাঁস)।
উল্লেখ্য, ২০ ফেব্রুয়ারি দশম সংসদের রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসনে উপনির্বাচনের তারিখ ঘোষণার কারণে প্রথম দফায় ১৯ ফেব্রুয়ারির পরিবর্তে নির্বাচন কমিশন ২৪ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠানের তারিখ পুনঃনির্ধারণ করে।