হারাম শরীফ সম্প্রসারণ পরিকল্পনার আওতায় মহানবীর (সা.) জন্মস্থান
সৌদি আরবের কর্তৃপক্ষ মক্কার আল মসজিদ আল হারামের চলমান সম্প্রসারণ কাজের অংশ হিসেবে একটি ঐতিহাসিক স্থান ভেঙে ফেলার পরিকল্পনা নিয়েছে। পবিত্র কাবাঘর থেকে মাত্র কয়েক কদম দূরে ঐ স্থানটিতে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) জন্মগ্রহণ করেছিলেন বলে মনে করা হয়।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইসলামিক হেরিটেজ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ড. ইরফান আল আলাভি দ্য ইন্ডিপেডেন্টকে বলেন, সৌদি আরবে সর্বশেষ যে ঐতিহাসিক স্থানটি রয়েছে তাহলো মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্মস্থান। এটা সম্ভবত সমগ্র বিশ্বের মুসলমান ও শিয়া সম্প্রদায়ের কাছে সবচেয়ে পবিত্র স্থান হিসেবে গণ্য হয়। অধিকাংশ মানুষই হয়তো জানে না এ স্থানটি বর্তমানে ধ্বংস করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
বায়তুল্লাহ শরীফের ইমামের জন্য আবাসিক ভবন এবং সন্নিহিত স্থানে রাজকীয় প্রাসাদ নির্মাণের জন্য আল হারামের অবশিষ্ট প্রতœতাত্ত্বিক স্থানটি ধ্বংস করার কথা বলা হয়েছে নতুন পরিকল্পনায়। ঐ স্থানটিতে এখন একটি ছোট লাইব্রেরি আছে।
১৯৫০-এর দশকে নির্মিত এই লাইব্রেরির স্থানটিই ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) জন্মস্থান বলে মনে করেন ইতিহাসবিদ ও আলেমরা। এর আগে ২০১৩ সালে হজ্জযাত্রীদের সুবিধার জন্য এই ঐতিহাসিক স্থানটিতে মেট্রো রেলস্টেশন কিংবা সাবেক বাদশাহ আব্দুল আজিজের নামে একটি লাইব্রেরি স্থাপনের পরিকল্পনা সৌদী বাদশাহর পরিবার নাকচ করে দিয়েছিল। এরপরও নির্মাণ কোম্পানি এটা নিশ্চিত করেছে যে, একটি রাজকীয় প্রাসাদ ও ইমামের আবাসিক ভবনসহ একটি নতুন আধুনিক কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে বলে দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকার রিপোর্টে বলা হয়েছে।
সৌদী রাজ পরিবার মহানবী (সা.)-এর পবিত্র স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণের বিরোধী। অনেক আলেমের মতে, এতে শিরককে উৎসাহিত করা হয় আর শিরক হচ্ছে মহান আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো উপসনা করার মতো মহা অপরাধ বা পাপকর্ম। আলেম সমাজের অভিমত হচ্ছে মহান আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো অতি প্রাকৃতিক ক্ষমতা আছে বলে মনে করাকে শিরক হিসেবে গণ্য করা হয়। ইসলামে এটাকে ক্ষমার অযোগ্য গোনাহ বলে বিবেচনা করা হয়। বিগত দশকে ইসলামের সবচেয়ে পবিত্র স্থানসমূহে ব্যাপক ভাঙ্গাগড়া চলে। এতে সারা বিশ্বের মুসলমানদের মধ্যে মতদ্বৈততার সৃষ্টি হয়। মক্কার অনেক বাসিন্দা তাদের নগরীকে লাস ভেগাসের সঙ্গে তুলনা করে থাকে। আল মসজিদ আল হারামের আয়তন বাড়ানোর লক্ষ্যে যে সম্প্রসারণ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয় তাতে অনেক ঐতিহাসিক ভবন ভেঙে ফেলতে হয়েছে এবং এখনো নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে একই কাজ করা হচ্ছে। সর্বশেষ যে সম্প্রসারণ পরিকল্পনা বাদশাহ আব্দুল্লাহ অনুমোদন করেছেন তা বাস্তবায়ন হলে ১২ লাখ মুসল্লি এক সঙ্গে নামায আদায় করতে পারবেন এবং এর আয়তন দাঁড়াবে ৪ লাখ বর্গমিটারে। বর্তমানে হারাম শরীফের আয়তন আছে ৩ লাখ ৫০ হাজার বর্গমিটার এবং এখানে ৭ লাখ ৭০ হাজার মুসল্লির স্থান সংকুলান হয়। বায়তুল্লাহর চার পাশে সৌন্দর্যম-িত আকাশচুম্বী ভবন, শপিংমল ও বিলাসবহুল অনেক হোটেল গড়ে উঠেছে।