সিডনিতে জি-২০ মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন
৫ বছরে ২ ট্রিলিয়ন ডলারের অতিরিক্ত প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ
নতুন কয়েক লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি আগামী পাঁচ বছরে ২ ট্রিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অতিরিক্ত প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা রেখে শেষ হলো জি-২০ভুক্ত দেশগুলোর মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন। দুদিনের সম্মেলনের শেষদিন গত রোববার সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোর একটি সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন অস্ট্রেলিয়ার অর্থমন্ত্রী জো হকি। প্রথমবারের মতো এবার অস্ট্রেলিয়ায় সিডনিতে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো। খবর রয়টার্স ও সিনহুয়ার।
জি-২০ভুক্ত শিল্পোন্নত দেশগুলোর অর্থমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নররা এবার বিশ্ব অর্থনীতিতে জোরালো, টেকসই ও ভারসাম্যপূর্ণ প্রবৃদ্ধির ওপর জোর দিয়েছেন। আগামী পাঁচ বছরে জি-২০ দেশগুলোর সামষ্টিক জিডিপিতে বর্তমান প্রবৃদ্ধির সঙ্গে আরও ২ শতাংশ যোগ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যার অর্থ জিডিপিতে সব মিলিয়ে আরও ২ ট্রিলিয়ন ডলার যুক্ত হওয়া এবং কয়েক লাখ মানুষের কর্মসংস্থান। জি-২০ এর যৌথ ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, ‘সামষ্টিক জিডিপি বাড়াতে আমরা উচ্চাকাঙ্ক্ষী কিন্তু বাস্তবসম্মত নীতিনির্ধারণ করতে যাচ্ছি।’
সংবাদ সম্মেলনে জো হকি বলেন, প্রথমবারের মতো আমরা লক্ষ্যমাত্রায় সংখ্যা বসাচ্ছি। সুতরাং অর্জনযোগ্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের বিষয়টি প্রতিটি সদস্য দেশের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাদের উত্পাদন বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ রাশিয়ার জিডিপির চেয়েও বেশি।
এ লক্ষ্য অর্জন নিয়ে কিছুটা নিরাশার সুর ছিল ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ জার্মানির কণ্ঠে। দেশটির অর্থমন্ত্রী ভলফগাং শয়েব্ল বলেন, প্রবৃদ্ধির কোন লক্ষ্যমাত্রা পূরণযোগ্য আর কোনটি নয়, তা একটি জটিলতর প্রক্রিয়ার ফল। এ প্রক্রিয়ার সাফল্যের গ্যারান্টি রাজনীতিবিদরা দিতে পারেন না।
নভেম্বরে অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনে অনুষ্ঠিত হবে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন। প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে সেখানে প্রতিটি সদস্য দেশই একটি সামগ্রিক প্রবৃদ্ধির কৌশলপত্র উপস্থাপন করতে সম্মত হয়েছে। এছাড়া টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য অর্থনীতির কাঠামোগত সংস্কারের ওপরও জোর দেন দেশগুলোর প্রতিনিধিরা।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলকে উদ্ধৃত করে জি-২০ মন্ত্রীরা বলেন, কাঠামোগত সংস্কার আগামী পাঁচ বছর ধরে দশমিক ৫ শতাংশ করে বাড়িয়ে দিতে পারে বার্ষিক বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি। ডলারের হিসাবে বললে, ২ দশমিক ২৫ ট্রিলিয়ন করে বাড়বে বৈশ্বিক উত্পাদন।
মুদ্রানীতির বিষয়ে বলা হয়, উন্নত অর্থনীতিগুলোয় প্রবৃদ্ধি সহায়ক মুদ্রানীতি থাকা প্রয়োজন। এছাড়া মন্দার প্রতিকারে গৃহীত সহজ মুদ্রানীতি স্বাভাবিক করে আনতেও যথাযথ বিবেচনা আবশ্যক।
প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি বাণিজ্য, প্রতিযোগিতা, যোগাযোগ, কর্মসংস্থানের সুযোগ, বিনিয়োগ (বিশেষ করে অবকাঠামোয়) বাড়াতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার অঙ্গীকার করেছে দেশগুলো। আর্থিক বাজারগুলোয় স্থিতিশীলতা বাড়ানোর বিষয়েও একমত তারা।
আর্থিক বাজার নিয়ে উন্নয়নশীল সদস্যদের মধ্যে উদ্বেগ তুলনামূলক বেশি ছিল। এছাড়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলে (আইএমএফ) চীন, ভারত, ব্রাজিল ও রাশিয়ার ভোটিং শেয়ার বাড়ানোর প্রস্তাবটি আবারও বিবেচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানায় জি-২০। ২০১০ সালে এ বিষয়ে একটি ঐকমত্য হলেও মার্কিন বাধার মুখে তা কার্যকর হয়নি।
বর্তমানে বিশ্ব জিডিপির ৮৫ শতাংশ এবং বাণিজ্যের ৭৫ শতাংশই জি-২০ দেশগুলোর দখলে।