‘ইনোসেন্স অব মুসলিমস’কে নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্র আদালতের
যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত ইসলামবিরোধী চলচ্চিত্র ‘ইনোসেন্স অব মুসলিমস’ ইউটিউব থেকে সরিয়ে ফেলতে নির্দেশ দিয়েছে গুগলকে। ‘ইনোসেন্স অব মুসলিমস’ ছবিতে অভিনেত্রী সিনডি লি গার্সিয়া মূল ভুমিকায় অভিনয় করেছেন।
বুধবার এ ছবির এক অভিনেত্রীর আবেদনে সান ফ্রান্সিসকোর একটি আদালত এ নির্দেশ দিয়েছে। বৃহস্পতিবার বিবিসি অনলাইনে তথ্যটি প্রকাশ করা হয়েছে।
তথ্যে জানানো হয়েছে, ইসলামের নবী হযরত মোহাম্মদ (স:)-কে কটাক্ষ করে নির্মিত এ বিতর্কিত চলচ্চিত্রের ভিডিও ক্লিপ ২০১২ সালে গুগলের মালিকানাধীন ইউটিউবে প্রচারের পর মুসলিম বিশ্বজুড়ে ব্যাপক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে।
এরই সূত্র ধরে ২০১২ সালে লিবিয়ার বেনগাজীতে মার্কিন কনস্যুলেটে ভয়াবহ হামলার ঘটনাও ঘটে। ওই হামলায় লিবিয়ায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতসহ চার মার্কিন নাগরিক নিহত হন।
সেসময় ভিডিওটি ইউটিউব থেকে সরিয়ে ফেলতে গুগলের প্রতি আহ্বান জানানো হলেও গুগল তা প্রত্যাখ্যান করে। কারণ হিসেবে গুগল জানায়, সিনেমাটির কপিরাইট স্বত্ত্ব একমাত্র এর প্রযোজকের এবং কেবল তিনিই পারেন সিনেমাটি ইউটিউব থেকে সরিয়ে ফেলতে।
পরবর্তীতে বিতর্কিত ওই চলচ্চিত্রের অভিনেত্রী সিনডি লী গার্সিয়া ভিডিওটি ইউটিউব থেকে অপরসারণ করাতে গুগলের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তার দাবি চলচ্চিত্রটির প্রযোজক নাকৌলা ব্যাসেলি নাকৌলা তাকে এমন একটি স্ক্রিপ্ট দিয়েছিলেন যার সঙ্গে মুসলমান সমপ্রদায় বা তাদের নবীর কোনো সম্পর্কই ছিল না।
গার্সিয়ার অভিযোগ চলচ্চিত্রটি নির্মাণ পরবর্তী সময়ে তার সংলাপগুলো এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যাতে মনে হয়েছে তিনি উস্কানিমূলক সংলাপ বলছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নবী মোহাম্মদ (স:)-কে যেকোনো উপায়ে চিত্রিত করা ইসলামের বিশ্বাসের পরিপন্থী, যেখানে ‘ইনোসেন্স অব মুসলিমসে নবী (স:)-কে রীতিমতো কটাক্ষ করা হয়েছে।
সান ফ্রান্সিসকোর আদালত আদেশে বলেছে, অভিনেত্রী গার্সিয়া তার অভিনীত অংশের কপিরাইটের মালিক। চলচ্চিত্রে গার্সিয়ার যে চরিত্র দেখানো হয়েছে তাতে তিনি অভিনয়ের জন্য রাজি হননি। এখানে ভিন্ন্ কিছু দেখানো হয়েছে।
আদেশের মতামত অংশে প্রধান বিচারক অ্যালেঙ কোজিনস্কি লিখেছেন, চলচ্চিত্রে গার্সিয়া যে চরিত্রে অভিনয় করেছেন, তা অত্যন্ত আপত্তিকরভাবে উপস্থাপন করা হয়। এই চলচ্চিত্রে তার উপস্থিতি তাকে শারীরিকভাবে ক্ষতি, এমনকি মৃত্যুর হুমকির মুখে দাঁড় করিয়েছিল। এসব হুমকি এবং কপিরাইট মালিকানার বিষয়ে গার্সিয়ার বিশ্বাসযোগ্য দাবি সত্ত্বেও গুগল ইউটিউব থেকে চলচ্চিত্রটি প্রত্যাহারের বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করে।
বিতর্কিত ওই চলচ্চিত্রের প্রযোজক নাকৌলাকে ২০১২ সালের শেষ দিকে এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পাশাপাশি তাকে কম্পিউটার ও ইন্টারনেট ব্যবহারে ৫ বছরের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ২৩ জুন যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তি পাওয়া ‘ইনোসেন্স অব মুসলিমস’ চলচ্চিত্রটি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন মুসলিম দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশেও ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠে।