ব্রিটিশ পার্লামেন্টে নিকাব নিষিদ্ধে দীর্ঘ বিতর্ক
কামাল আহমেদ: ব্রিটেনে জনসমক্ষে নিকাব নিষিদ্ধ করার জন্য গত শুক্রবার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সে একটি বিল উত্থাপিত হয়েছে। ক্ষমতাসীন জোটের প্রধান শরিক, কনজারভেটিভ পার্টির এমপি ফিলিপ হলোবোর্ন বিলটি উত্থাপন করেন। বিলটির ওপর শুক্রবার দীর্ঘ বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এবং মুসলিম নারী এমপি রুশনারা আলীসহ আলোচনায় অংশগ্রহণকারী এমপিদের অধিকাংশই এই বিলের বিরোধিতা করেন। প্রায় দুই ঘণ্টার বিতর্কে বিলের বিরুদ্ধে সবচেয়ে জোরালো ভূমিকা নেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়বিষয়ক সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান লেবার পার্টির ভারতীয় বংশোদ্ভূত এমপি কিথ ভাজ। এ ছাড়া বিপক্ষে বক্তব্য দেন লেবার পার্টির জেরাল্ড কফম্যান, লিন ব্রাউন, জোনাথন অ্যাশওয়ার্থ, মিসেস শ্যারন হজসন ও জেরেমি করবিন এমপি। অন্যদিকে বিষয়টিতে বিতর্কের প্রয়োজনীয়তার কথা বললেও বিলটির পক্ষে উদ্যোক্তা ফিলিপ হলোবোর্ন ছাড়া আর কেউই সমর্থন দেননি। বিতর্কটি আগামী ১৬ মে পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে।
ফিলিপ হলোবোর্ন বিক্ষোভ-সমাবেশে মুখোশ এবং ইসলামি বোরকার ক্রমবর্ধমান ব্যবহার নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণ হলেও রাজনৈতিক কারণে সরকার সে বিষয়ে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করছে না উল্লেখ করে এগুলোর ব্যবহার নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব করেন। ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে ফ্রান্সে ইতিমধ্যেই মুখ ঢেকে রাখা বোরকা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
প্রস্তাবের বিরোধিতাকারীরা এ ধরনের আইন ব্যক্তিস্বাধীনতার পরিপন্থী এবং সামাজিক সম্প্রীতি ক্ষুণ্ন করবে বলে মন্তব্য করে বলেন, নাগরিকেরা ব্যক্তিজীবনে কী ধরনের পোশাক-পরিচ্ছদ পরবেন, সে বিষয়ে রাষ্ট্র কোনো নির্দেশনা চাপিয়ে দিতে পারে না।
কিথ ভাজ তাঁর নির্বাচনী এলাকার মসজিদসমূহের ইমাম ও বিভিন্ন ইসলামি সংগঠনের পক্ষ থেকে সহস্রাধিক ব্যক্তির আপত্তি জানিয়ে লেখা চিঠির উল্লেখ করে বলেন, এসব মুসলিম নারী ধর্মবিশ্বাসের কারণেই নিকাব পরে থাকেন।
রুশনারা আলী বলেন, একজন মুসলিম হিসেবে তিনি সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় বিশ্বাস করেন এবং ব্রিটিশ সমাজের বহুমুখীনতায় গর্ববোধ করেন। তিনি বলেন, যখন ব্রিটেনে মুসলমানদের বিরুদ্ধে বর্ণবাদী হামলার ঘটনা বাড়ছে তখন এ ধরনের আইন দেশটিতে ইসলামবিদ্বেষী মনোভাবকে আরও উসকে দেবে।
জেরাল্ড কফম্যান বলেন, গণতন্ত্রের অর্থ সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন হলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে সংখ্যালঘুদের অধিকারকে নাকচ করে দেওয়া যায় না।