শরণার্থীদের সৌহার্দ্যপূর্ণ সমাধানের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

Hasinaপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে শরণার্থীদের ফিরিয়ে নিতে সে দেশের সরকারের প্রতি সৌহার্দ্যপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী সোমবার বিকেলে মায়ানমারের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে সে দেশের রাষ্ট্রপতি থেইন সেইনের সাথে বৈঠকে এ অনুরোধ জানান।
শেখ হাসিনা তৃতীয় বিমসটেক সম্মেলনে যোগদানের উদ্দেশে দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে বর্তমানে মিয়ানমারের রাজধানী নেইপিতোয় অবস্থান করছেন। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
আলোচনায় উভয় নেতা এ অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতার ওপর জোর দেন। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি সব সময়ই অব্যাহত থাকবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মাটি কখনোই কোনো বন্ধুরাষ্ট্র বা অন্য কোনো দেশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হবে না।
প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমারকে ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী উল্লেখ করে এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে একসাথে কাজ করার অঙ্গীকার করেন। তিনি দারিদ্র্যকে এ অঞ্চলের প্রধান ও অভিন্ন শত্র“ হিসেবে বর্ণনা করেন এবং আঞ্চলিক কানেকটিভিটির মাধ্যমে এ অঞ্চলের দেশগুলো অর্থনৈতিকভাবে আরো শক্তিশালী হতে পারে বলে উল্লেখ করেন।
প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন উভয় দেশের বাণিজ্যসুবিধা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে বলেন, ভারত, থাইল্যান্ড ও মিয়ানমার সংযোগ সড়ক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে, বাংলাদেশ চাইলে এতে অংশীদার হতে পারে।
শেখ হাসিনা মিয়ানমারের প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানালে তিনি তা গ্রহণ করেন এবং সুবিধাজনক সময়ে এই সফরে আসার আগ্রহ ব্যক্ত করেন।
বৈঠকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, অ্যাম্বাসেডর এট লার্জ এম জিয়াউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব এম আবুল কালাম আজাদ, পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমারের স্থানীয় সময় সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে নেইপিতো আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছলে তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেয়া হয়। দণি এশিয়া ও দণি-পূর্ব এশিয়ার সাতটি দেশের এই শীর্ষ সম্মেলন আজ নেইপিতোয় মিয়ানমার আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে।
বিমসটেক (বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেকটরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকনোমিক কো-অপারেশন) গ্র“পের দেশগুলো হচ্ছেÑ বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, মিয়ানমার, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ড।
হাসিনা-সু চি বৈঠক : বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অসামান্য সাফল্যের কথা উল্লেখ করে মিয়ানমারের বিরোধীদলীয় নেতা ও নোবেলবিজয়ী অং সান সু চি বলেন, মিয়ানমারের বাংলাদেশ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।
তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দারিদ্র্য বিমোচন, গরিব মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন, বিশেষ করে নারীর মতায়নে শেখ হাসিনার উদ্যোগ ও প্রচেষ্টার ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, ‘আমি তার কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পাই।’
সোমবার বিকেলে মিয়ানমারের বিরোধীদলীয় নেতা ও সংসদীয় কমিটির চেয়ারপারসন এবং শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সু চি পার্লামেন্ট অফিসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সাথে সাক্ষাৎকালে এসব মন্তব্য করেন। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
সু চি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তিনি দু’জনেই নিজ নিজ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছেন।
মিয়ানমারের বিরোধীদলীয় নেতা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, বাংলাদেশ দরিদ্র জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের ভাগ্য উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচি তার কাজে অনুপ্রেরণা জোগায়।
এ প্রসঙ্গে তিনি ‘একটি বাড়ি, একটি খামার’ ও ‘ঘরে ফেরা’ কর্মসূচি এবং মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত বিনামূল্যে বই বিতরণ ও উপবৃত্তি প্রদান কর্মসূচি ‘যেকোনো দেশের জন্য অনুকরণীয়’ দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হবে বলে উল্লেখ করেন। এ েেত্র প্রধানমন্ত্রী তার সরকার গ্রামীণ মহিলাদের সঞ্চয় বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেছে উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা গ্রামীণ নারীদের আত্মনির্ভরশীল ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার পদপে গ্রহণ করেছি।
সু চি বলেন, তিনিও তার নির্বাচনী এলাকায় শিশুদের জন্য ‘সেভিং বন্ড’ চালু করেছেন, যাতে তারা সঞ্চয়ী হতে শিখে। এর আগে মিয়ানমারের বিরোধী নেতা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে তার পার্লামেন্ট ভবনে স্বাগত জানান ও আলিঙ্গন করেন। পরে শেখ হাসিনা তার সফরসঙ্গী ও পরিবারের সদস্যদের সু চির সাথে পরিচয় করিয়ে দেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমারের স্পিকার শুয়ে মানের সাথে তার দফতরে দুই দেশের গণতন্ত্র শক্তিশালী করার বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
মিয়ানমারের আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মিয়ানমারের রাষ্ট্রপতি ও তার স্ত্রীর দেয়া নৈশভোজে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অন্যান্য দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সাথে অংশগ্রহণ করেন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button