সামরিক নিয়ন্ত্রণ আরও সংহত করেছে রাশিয়া

Rusiaপাশ্চাত্যের কড়া হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও ইউক্রেনের ক্রিমিয়া উপদ্বীপে সামরিক নিয়ন্ত্রণ আরও সংহত করেছে রাশিয়া। তবে এ জন্য তাদের একটি গুলিও খরচ করতে হয়নি। ইউক্রেনে পরিস্থিতি ‘স্বাভাবিক’ না হওয়া পর্যন্ত রুশ সেনারা সে দেশে অবস্থান করবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে মস্কো।
হাজার হাজার রুশ সেনাসদস্য ইউক্রেনের ক্রিমিয়া অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন। এই অবস্থায় ইউক্রেন সামরিক বাহিনীকে প্রস্তুত করার পাশাপাশি অধিকতর আন্তর্জাতিক সহায়তার জন্য আবেদন জানিয়েছে। মস্কো ‘ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন’ করায় বিশ্বের শিল্পোন্নত সাতটি দেশ নিন্দা জানিয়েছে।
তবে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেন, তাঁরা রুশ নাগরিক ও মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করছেন। ‘রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত’ ইউক্রেনে রুশ সেনাদের অবস্থান জরুরি।
ক্রিমিয়া এলাকায় রুশ তৎপরতা: ক্রিমিয়ায় অবস্থানরত সাংবাদিকেরা জানান, এলাকাটি এখন কার্যত রুশ বাহিনীর দখলে চলে গেছে। এ জন্য সেখানে তাদের কোনো যুদ্ধ করতে হয়নি। ক্রিমিয়ায় ইউক্রেনের দুটি বড় সামরিক ঘাঁটি ঘিরে রেখেছে রুশ বাহিনী। বিমানবন্দরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো তাদের দখলে। নতুন করে রুশ অভিজাত বাহিনীর হাজার হাজার সদস্য ক্রিমিয়ায় পৌঁছার পর এখন সংখ্যায় তাঁদের সংখ্যা ইউক্রেনের সেনাদের চেয়ে বেশি। রুশ সেনারা ক্রিমিয়ার সঙ্গে অন্যান্য এলাকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে।
ইউক্রেনের সীমান্তরক্ষী বাহিনী খবর দিয়েছে, রাশিয়া ও ক্রিমিয়াকে বিভক্তকারী একটি চ্যানেলের রুশ অংশে সামরিক যানের একটি বহর প্রস্তুত করা হচ্ছে। রুশপন্থী সেনারা ক্রিমিয়ার পূর্ব এলাকায় একটি ফেরি টার্মিনালের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।
রুশপন্থী কিছু কর্মকর্তা ক্রিমিয়ার রাজধানী সিমফারপুলে অবস্থিত ইউক্রেনের নৌ সদর দপ্তরে ঢুকে নৌবাহিনীকে তাঁদের আনুগত্য স্বীকার করানোর চেষ্টা করেন। তবে নৌ কমান্ডাররা গতকাল ইউক্রেনের প্রতি তাঁদের আনুগত্যের কথা নিশ্চিত করেন বলে জানায় রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স-ইউক্রেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের তৎপরতা: ইউক্রেনের অন্তর্বর্তী সরকার রুশ সেনাদের ফিরে যেতে বাধ্য করতে অধিকতর আন্তর্জাতিক সহায়তার আবেদন জানিয়েছে। তিনি জানান, চলমান সংকট সংলাপের মাধ্যমে সমাধানের আশা করলেও কিয়েভ এখন সামরিক বাহিনী সুসংহত করার দিকে জোর দিচ্ছে। ইউক্রেনজুড়ে পুরুষ নাগরিকদের কাছে সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ-সংক্রান্ত কাগজপত্র পাঠানো হচ্ছে, যাতে সোমবার থেকে ১০ দিনের প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে।
কূটনৈতিক তোড়জোড়: ইউক্রেন সংকট সমাধানের উপায় খুঁজে বের করতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টাও জোরদার হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কিছুটা আশার বাণী শুনিয়েছে জার্মানি। দেশটি জানায়, জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যারকেলের সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কথা হয়েছে। এ সময় পুতিন ইউক্রেন নিয়ে আলোচনার জন্য একটি প্রতিনিধিদল গঠন করার বিষয়ে রাজি হয়েছেন।
পশ্চিমা দেশগুলোর জোট ন্যাটো জানায়, তারা ইউক্রেনে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক পাঠাতে এবং মস্কোর সঙ্গে সরাসরি সংলাপে বসতে চায়। তবে এসব প্রস্তাবের ব্যাপারে মস্কোর তাৎক্ষণিক জবাব পাওয়া যায়নি।
জাতিসংঘ গত রোববার জানায়, ‘বাস্তব অবস্থা সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ’ করতে সংস্থার ডেপুটি মহাসচিব জান ইলিয়াসন ইউক্রেনে যাচ্ছেন। মহাসচিব বান কি মুন গতকাল রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম হেগ কিয়েভে আছেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিও আজ মঙ্গলবার কিয়েভে যাচ্ছেন। তিনি রোববার একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে ইউক্রেনে রাশিয়ার ‘অবিশ্বাস্য আগ্রাসনে’র কড়া নিন্দা জানান।
সিবিএস টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কেরি বলেন, ‘এই একুশ শতকে একটি দেশে সামরিক হস্তক্ষেপ করে আপনি উনিশ শতকের মতো আচরণ করতে পারেন না।’

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button