জেনারেল সিসি’র আসল উদ্দেশ্য কি!
মিশরের রাষ্ট্রক্ষমতায় সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি কি নতুন হিরো হয়ে উঠছেন! তার সামপ্রতিক কর্মকাণ্ডে এমনই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে বিশ্লেষকদের মধ্যে। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত মিশরের প্রথম প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করেছেন তিনি। নিজে রাষ্ট্র ক্ষমতায় কে কে থাকবে, কে কোন পদ পাবে অন্তর্বর্তী সরকারে তা নির্ধারণ করেছেন তিনিই। তার সেনারা মুরসি সমর্থকদের ওপর গুলি করে কমপক্ষে ১৫০ জনকে হত্যা করেছে শনিবার। তিনি আকারে ইঙ্গিতে মুরসি সমর্থকদের ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে সেনাদের ব্যবহার করেছেন। তারা রাজধানী কায়রোর একটি মসজিদে শান্তিপূর্ণ অবস্থান ধর্মঘট করছিল। সেখানে সেনাদের উপস্থিতিতে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। মুরসি সমর্থকরা সেনা ও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে। জবাবে সেনা ও পুলিশ তাদের দিকে প্রকাশ্যে গুলি ছোড়ে। গুলি ছোড়ার এ দৃশ্য বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল সমপ্রচার করে। রাজপথ ভেসে যায় রক্তে। অন্যদিকে তাহরির স্কয়ারে সেনাদের সমর্থনে যারা অবস্থান করেন তারা ছিল নির্বিঘ্ন। এতসব, এত পক্ষপাতিত্বের পরও সেনাপ্রধান নিজেকে কিভাবে নিরপেক্ষ দাবি করতে পারেন! তিনি প্রেসিডেন্ট মুরসিকে উৎখাত করে তাকে আটক রেখে বিবৃতিতে বলছেন, মিশরে সেনা অভ্যুত্থান ঘটেনি। তাহলে মুরসি কি স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছেন? যদি তা-ই হতো তাহলে মুরসি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতেন। নিজের ব্যর্থতা স্বীকার করে তিনি পদত্যাগ করতেন। উল্টো সেনাবাহিনী যখন গত ৩রা জুলাই তাকে উৎখাতের সরাসরি হুমকি দেয় তখনও মুরসি নিজের অবস্থানের পক্ষে কথা বলেন। তিনি পদত্যাগ না করে মিশরের জনগণের জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এ ঘোষণার পর গভীর রাত পর্যন্ত নানা নাটক সাজাতে থাকেন জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি। এক পর্যায়ে তিনিই ঘোষণা দেন- মুরসি আর মিশরের প্রেসিডেন্ট নন। তিনি আর মিশরের নেতা নন। এর অর্থ কি? এটা কি অভ্যুত্থান নয়! তিনি মুরসিকে শুধু ক্ষমতাচ্যুতই করেননি, তাকে কোন কারণ ছাড়াই দীর্ঘ প্রায় তিন সপ্তাহ অজ্ঞাত স্থানে আটকে রাখেন। কোথায় কি অবস্থায় ওই দিনগুলো মুরসি রয়েছেন কেউ জানেন না। ৩রা জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত মুরসি কোথায় আছেন, কেমন আছেন তা জানে না তার পরিবার। তাদের সঙ্গে কোন যোগাযোগ নেই তার। জেনারেল সিসি এখানেই থেমে যাননি। তিনি মিশরের জনগণকে গত শুক্রবার রাজপথে নেমে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানান। একজন সেনাপ্রধান এমন আহ্বান জানাতে পারেন কিনা তা ইতিহাসই বিশ্লেষণ করবে। তিনি আহ্বানে বললেন, জনগণ রাজপথে নেমে বিক্ষোভ করলে তা থেকে তারা ‘সন্ত্রাসীদের’ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার অনুমোদন পাবেন। কিন্তু তীক্ষ্ন মাথায় চিন্তা করলে সহজেই বেরিয়ে আসে যে, এর মধ্য দিয়ে তিনি জনগণকে সরাসরি বিভ্রান্তির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছেন। তাদের সংঘাতের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন। ফলে তার আহ্বানে শুক্রবার তাহরির স্কয়ারে সমবেত হয় মুরসি বিরোধীরা। এর জবাবে মুরসি সমর্থকরা অবস্থান নেন একটি মসজিদে। ভোরে ফজরের নামাজের ঠিক আগে সেনারা তাদের ওপর নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে ১৫০ জনকে। জনগণ কি তাহলে তাকে এই ম্যান্ডেট দিয়েছে? এ প্রশ্ন উঠবেই। তবে এতসবের মধ্য দিয়ে যে কথাটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে তাহলো- সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি এখন মিশরে নতুন এক হিরো হয়ে উঠেছেন। এর পরিণতি কোন দিকে তা কেউ এখনও জানে না। তবে এতটুকু সবাই জানেন, ক্ষমতায় সেনাবাহিনী আসীন হলে তার পরিণতি কখনও সুখকর হয় না। সাময়িক সময়ের জন্য দেশবাসী বাহবা দিতে পারে। কিন্তু দীর্ঘ পথযাত্রায় ক্রমে তারা দুর্বল হয়ে পড়ে। ইতিহাস এ শিক্ষাই দেয়।