খেলাফত মজলিসের গোলটেবিল বৈঠকে অভিমত
বিদেশীদের ওপর ভরসা করে বসে থাকলে বিএনপি ভুল করবে
খেলাফত মজলিস আয়োজিত ‘চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট : উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা বলেছেন, যে গণতন্ত্রের জন্য মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, দেশে সে গণতন্ত্র এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। সরকার স্বৈরাচারী কায়দায় জোর করে ক্ষমতা দখল করে রেখেছে। তারা আবারো বাকশাল কায়েম করতে চায়। এ জন্য গুলি করে বিরোধী মত দমন করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে নির্দলীয় সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমেই কেবল দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা সম্ভব।
গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস কাবে এ গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি ছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ। সভাপতিত্ব করেন খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক।
বৈঠকে মূল প্রবন্ধে খেলাফত মজলিসের মহাসচিব অধ্যাপক ড. আহমদ আব্দুল কাদের বলেন, দেশে গভীর রাজনৈতিক সঙ্কট চলছে। মূলত তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের পর থেকেই সঙ্কটের শুরু। এর বিরুদ্ধে মানুষ রাজপথে নেমে এলে তাদের গুলি করে হত্যা করে বিরোধী মত দমন করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ৫ জানুয়ারি যে নির্বাচন হয়েছে তা প্রহসন ছাড়া আর কিছুই নয়। ৩০০ আসনে মাত্র ৩৯০ জন প্রার্থী ছিলেন। এর মধ্যে ১৫৩ জনই কোনো নির্বাচন ছাড়া এমপি হয়েছেন। নির্বাচনে মহাজোট ছাড়া কেউ অংশ নেয়নি। ৪০ দলের মধ্যে মাত্র ১২ দল অংশ নেয়। তিনি আরো বলেন, পশ্চিমা শক্তিগুলো যতই সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করুক না কেন কার্যত দেশের অভ্যন্তরে আন্দোলন সৃষ্টি না হলে সরকার তার পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করার চেষ্টা করবে। কাজেই বিএনপি যদি বিদেশীদের ওপর ভরসা করে বসে থাকে তাহলে মারাত্মক ভুল করবে। সরকারের বিরুদ্ধে কার্যকর আন্দোলন গড়ে তোলার প্রস্তুতি নিতে হবে এবং যত দ্রুত সম্ভব রাজপথে নামতে হবে।
অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, আফগান বা তালেবান জঙ্গিদের সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা মুসলিম বলেই পূর্ব পাকিস্তান সৃষ্টি হয়েছিল। আর সেই ধারাবাহিকতায় পরে বাংলাদেশের সৃষ্টি। বাংলাদেশ কখনো নষ্ট হবে না। তিনি আরো বলেন, যেকোনো আন্দোলনে ল্য অর্জনের জন্য জনসমর্থনের বিকল্প নেই। তাই উদ্দেশ্য সফল করার লক্ষ্যে জনসমর্থন তৈরি করতে হবে।
বৈঠকে বিশেষ অতিথি ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী বলেন, সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য নির্বাচন হলেও সরকার গায়ের জোরে ক্ষমতায় রয়েছে। তিনি বলেন, ধর্মনিরপেক্ষতা নয়, গণতন্ত্রের জন্য মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। সে গণতন্ত্র না থাকায় দেশে সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের মাধ্যমেই এ সঙ্কট দূর করা সম্ভব।
বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব:) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, গণতন্ত্রকে সম্মান দেখিয়েই আমরা মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমরা কি সেই কাক্সিত গণতন্ত্র পেয়েছি? তিনি বলেন, আপনারা কি ভেবেছেন বর্তমান সরকার আমাদের গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা দেবে? কখনই না। হারানো গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হলে নিজেদেরই আন্দোলন করতে হবে।
সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি বলেন, রাজপথে নামলে পুলিশ গুলি করবেই। তাই পুলিশের গুলির পাল্টা কি হবে তার প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় বর্তমান সঙ্কট থেকে জাতির মুক্তি মিলবে না। তিনি বলেন, মতায় টিকে থাকতে সরকার তার সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করবে এটাই স্বাভাবিক, যেকোনো সরকারই তা চায়। কিন্তু জনগণের মুক্তি আর গণতন্ত্র রায় সব অপশক্তিকে রুখে দিতে জনগণকেই এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, রাজপথে নেমে শুধু আন্দোলন করলেই হবে না, সেই সাথে বিদেশী গণতান্ত্রিক শক্তির সাহায্য-সমর্থনও দরকার। আওয়ামী লীগের সাবেক এই আলোচিত এমপি বলেন, যে সরকার জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় তার অস্তিত্বে ধীরে ধীরে ক্যান্সার ছড়ায়। ক্যান্সার নিরাময়যোগ্য নয়। দল মতায় গেলে রাষ্ট্র, দল, সরকার ও আইনশৃঙ্খলা সব এক হয়ে যায়। সরকারের মতা সম্পর্কে তিনি বলেন, দেশের জনগণ যতদিন পর্যন্ত চাইবে ঠিক ততদিন পর্যন্ত সরকার মতায় থাকতে পারবে। পাঁচ বছর কিংবা পাঁচ মাস এটা সরকারের ওপর নয়, জনগণের ইচ্ছার ওপরই নির্ভর করবে। বৈঠকে আরো বক্তব্য রাখেন এলডিপির মহাসিচব ড. রেদওয়ান আহমেদ, ইসলামিক পার্টির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আব্দুল মোবিন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবদুল লতিফ মাসুম, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির অধ্যাপক মাওলানা জোবায়ের আহমদ চৌধুরী প্রমুখ।