শোবার ঘর বাংলাদেশে রান্নাঘর ভারতে !

Indiaরক্তিম দাশ: শোবার ঘর বাংলাদেশে, রান্নাঘর ভারতে! সকাল ৭টায় মাছ ধরেন বাংলাদেশে, সাড়ে ৭টায় বাজার করেন ভারতে! এমন অসম্ভবই সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে। পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চবি্বশ পরগনার বাগদা ব্লকের অন্তর্গত বয়রা গ্রাম। সেখানে বাস করেন রেজাউল মণ্ডল। বয়স ৬৫।
তার অন্য পরিচয়, যশোরের চৌগাছা জেলার ৯ নম্বর স্বরূপদাহ ইউনিয়ন পরিষদের গদাধরপুরের বাসিন্দা তিনি। বিএসএফ আর বিজিবির কাছে পরিচয়, ৩৯/১১ নম্বর পিলারের বাসিন্দা রেজাউল মণ্ডল।
ভারত-বাংলাদেশ মিলিয়ে মোট ১৬ বিঘা জমি রেজাউল মণ্ডলের। ভারতে আট বিঘা, বাংলাদেশে আট বিঘা। জমির খাজনা পায় দু’দেশই। জন্মবিধি মেনে ভারতীয় রেজাউল মণ্ডল। একসময়ের ধনী পরিবারের ছেলে রেজাউল তার বাবা-কাকা-দাদাদের নিয়ে থাকতেন ভারতে। দেশ ভাগের পর সবকিছুই খোয়াতে হয়েছে তাকে। এখন ১৬ বিঘা জমিই তার সম্বল।
নিজের বসতবাড়ির মধ্য দিয়ে চলে গেছে দেশ ভাগের সীমানা। বর্তমানে কাঁটাতার। চাষের জমির অর্ধেক ভারতে তো, অর্ধেক বাংলাদেশে। দুই দেশের সীমান্তরক্ষীর অনুমতি নিয়ে সাড়ে ১০ মণ ধান বাংলাদেশ থেকে আনতে পারতেন তিনি। এখনও সেসব কাগজ সযত্নে রেখেছেন রেজাউল। তিনি সমকালকে বলেন, এখন নানা অসুবিধার কারণে মাঝেমধ্যে ধান নিয়ে আসা বন্ধ হয়ে যায়। ওখানে চাষবাসের জমিও খানিকটা অদল-বদল করা হয়, যদিও তাতে অসুবিধা হয় না তার।
উত্তর বয়রা গ্রামের বিপরীতে বাংলাদেশের গদাধরপুর গ্রাম চৌগাছা উপজেলা; খাতা-কলমে গদাধরপুর গ্রামেরও বাসিন্দা রেজাউল মণ্ডল। তাই সেখানকার ৯ নম্বর স্বরূপদাহ ইউনিয়ন পরিষদে নিয়মিত ট্যাক্স জমা দিতে হয় তাকে। গত বছরের ২৮ আগস্ট ১০০ টাকা জমা দিয়েছেন স্বরূপদাহ ইউনিয়ন পরিষদের ট্যাক্স ও রেট আদায় বাবদ খাতে। এক ছেলে, ছেলের স্ত্রীসহ পাঁচজনের ছোট্ট পরিবার নিয়ে ভালোই চলছে তার।
তিন-তিনবার সার্ভে হয়েছে এখানে। ভারত-বাংলাদেশ সীমানা এমনভাবে হয়েছে, যেখানে রেজাউল মণ্ডলের বসবাসের ঘর, গোয়ালঘর বাংলাদেশের মধ্যে পড়লেও রান্নাঘর ও ধানের গোলা পড়েছে ভারতে। বাড়ির পেছনেই গদাধরপুর বাঁওড় (বিল) প্রায় ৫০ বিঘার মতো। সেখানে দীর্ঘদিন মাছ চাষ করছেন রেজাউল মণ্ডল। বিএসএফ থেকে এক-আধবার বাধা এলেও বিজিবির পক্ষ থেকে কোনো বাধা আসেনি বলে জানান তিনি।
উত্তর বয়রা সীমান্তে প্রায় ৬০ ঘর বাসিন্দার বাস। সবাই ভারতের বাসিন্দা। সীমান্তের পিলার-ঘেঁষা এসব বাড়ি। অর্ধেক ভারত, অর্ধেক বাংলাদেশ_ এমন বাসিন্দা কেবল রেজাউল মণ্ডলই।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button