মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্র থেকে নির্মূল করা হচ্ছে মুসলমানদের : জাতিসঙ্ঘ
জাতিসঙ্ঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার অ্যান্টোনিও গুটেরেস বলেছেন, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রের পশ্চিমাঞ্চল থেকে মুসলমানদের নির্মূল করা হচ্ছে এবং আমাদের চোখের সামনেই হাজার হাজার নিরীহ ও অসামরিক মুসলমান হত্যার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদকে তিনি এ কথা বলেন। আলজাজিরা।
খ্রিষ্টানদের চলমান নির্মূল অভিযানের শিকার হয়ে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রের হাজার হাজার মুসলমান নিহত ও লাখ লাখ দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানান গুটেরেস। তিনি বলেন, তারা গত বছরের ডিসেম্বর মাসের গোড়া থেকেই বিশ্ব মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রের পশ্চিমাঞ্চলে ব্যাপকসংখ্যক মুসলিম নিধনের ঘটনা প্রত্য করছে। লাখ লাখ লোক দেশটি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে এবং এদের বেশির ভাগই স্থায়ী হুমকির মুখে পড়েছে।
মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোনগো দাউদো এবং জাতিসঙ্ঘের প্রধান বান কি মুন উভয়ই যখন সেখানে বাড়তি সেনা পাঠানোর জন্য নিরাপত্তা পরিষদের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন তখন এ বক্তব্য দিলেন অ্যান্টোনিও গুটেরেস। তিনি বলেন, ডিসেম্বরের প্রথমভাগ থেকে আমরা মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রের পশ্চিমাঞ্চল থেকে মুসলমানদের বেশির ভাগকে নির্মূল করার ঘটনা স্পষ্ট দেখতে পেয়েছি। তাদের হাজার হাজার দেশ ত্যাগ করেছে এবং যারা রয়ে গেছে, তাদের বেশির ভাগই স্থায়ী বিপদের মধ্যে আছে। দেশটিতে অবস্থানরত আফ্রিকান ও ফরাসি বাহিনীর শক্তি বাড়ানোর জন্য মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোনগো দাউদো ও জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব বান কি মুন উভয়ই বাড়তি সেনা পাঠানোর জন্য নিরাপত্তা পরিষদের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার কোনগো দাউদো বলেন, আমরা আগামীকাল তাদের অভ্যর্থনা জানাবো। তাদের টিকে থাকার জন্য বাড়তি সৈন্যের কোনো বিকল্প নেই। বান কি মুনের ১২ হাজার সৈন্যের একটি জাতিসঙ্ঘ বাহিনী গঠনের প্রস্তাব বিবেচনার জন্য নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক বসে।
কূটনীতিকেরা জানিয়েছেন, এই বাহিনী অনুমোদনের জন্য মার্চের শেষ নাগাদ ফ্রান্স একটি প্রস্তাব উত্থাপন করবে বলে আশা করা যাচ্ছে। জাতিসঙ্ঘের শান্তিরক্ষাবিষয়ক প্রধান হার্ভ লেডসাস বলেন, এই বাহিনী গঠন ও মোতায়েনে ছয় মাসের মতো সময় লাগতে পারে এবং এতে বেশির ভাগই থাকবে বর্তমান প্রায় ছয় হাজার সৈন্যের আফ্রিকান ইউনিয়ন বাহিনীর সদস্য। তাদেরকে পুনর্নিয়োগ দেয়া হবে। মিশন গঠনে দীর্ঘ সময় নেয়ার জন্য জাতিসঙ্ঘের সমালোচনা করেছেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ফিলিপ বলপিন। তিনি বলেন, নিরাপত্তা পরিষদ অনেকটা সময় নষ্ট করেছে। জাতিসঙ্ঘ এ ব্যাপারে নিশ্চিত যে, ফরাসি ও এইউ সৈন্য থাকা সত্ত্বেও দেশটির মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। প্রায় এক বছর আগে প্রধানত মুসলিমদের নিয়ে গঠিত সেলেকা বিদ্রোহীরা দশককালের স্বৈর শাসককে উৎখাত করে এবং বিদ্রোহী নেতা জতোদিয়া প্রেসিডেন্ট হন। তার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে খ্রিষ্টানরা। আন্তর্জাতিক সমঝোতা অনুযায়ী ডিসেম্বরে ক্ষমতা ছাড়েন জতোদিয়া। তখন থেকেই মুসলমানদের ওপর হত্যাকাণ্ড শুরু করে উগ্র খ্রিষ্টানরা। এতে হাজার হাজার মুসলমান খুন হয়েছেন এবং ঘরবাড়ি ছেড়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতে পালিয়ে গেছে কয়েক লাখ। রাজধানী বাঙ্গুই মুসলিম শূন্য হয়ে পড়েছে।