মহাতারকাদের ইসলাম গ্রহণ
ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। এর ছায়াতলে এসে জীবনের মানে খুঁজে চলেছেন নানান ধর্মের হাজারো মানুষ। তারকা থেকে মহাতারকারাও জীবনের একটা পর্যায়ে বেছে নিয়েছেন, নিচ্ছেন শান্তির ধর্ম ইসলাম। ইসলামে দীক্ষিত এমনই কয়েকজন মহাতারকার জীবনে ইসলামের প্রভাব তুলে দেওয়া হলো;
হান্স রাজ হান্স: ভারতীয় শিল্পী হান্স রাজ হান্সের ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার খবর নিয়ে পাকিস্তানী মিডিয়ায় ব্যাপক মাতামাতি শুরু হয়ে যায়। জন্মসূত্রে শিখ এই শিল্পীর জনপ্রিয় হিট গানগুলোর মধ্যে আছে- আজা নাচলে, দিল টোটে টোটে এবং দমা দম মাস্ত কালান্দার। তিনি তার ইসলাম গ্রহণ নিয়ে গর্বিত বলে অসংখ্যবার জানিয়েছেন।
সম্প্রতি হান্স রাজা হান্স মদিনা মোবারক জিয়ারত করার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন। এছাড়া তিনি গত কিছুদিন থেকে ইসলামী সাহিত্য পড়াশুনা করছেন। ইসলামের মূল্যবোধে গভীর বিশ্বাস স্থাপন করেছেন। তার ধর্ম প্রীতি নিয়ে আরও নিশ্চিত হওয়া গেছে যখন তিনি শুধু সুফি ঘরানার গানে যুক্ত থাকতে চাচ্ছেন। সুফি ঘরানার গান ইসলামী ঐতিহ্যের একটি অংশ।
ধর্মেন্দ্র: ভারতীয় সিনেমার সবচেয়ে ক্যারিসম্যাটিক অভিনেতাদের একজন ধর্মেন্দ্রর আদি নাম ছিল ধারাম সিং দেওল। এই ড্যাশিং রোমান্টিক ও অ্যাকশন হিরো ১৯৭৯ সালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। হেমা মালিনীর সঙ্গে দেখা ও প্রেমে জড়িয়ে পড়ার সময় তিনি ছিলেন বিবাহিত। তার স্ত্রী প্রকাশ কৌরের গর্ভে ছিল চার সন্তান। যেহেতু তিনি হিন্দু রীতি অনুযায়ী ডিভোর্স দিতে পারবেন না এবং হিন্দু বিবাহ আইন অনুযায়ী আবার পুনরায় বিয়ে করতে পারবেন না।
এই কারণে তিনি ইসলামে ধর্মান্তরিত হন এবং হেমাকে বিয়ে করেন। এরপর থেকে তিনি এক সঙ্গে দুটি পরিবারের দেখভাল করেছেন। বলা হয়, তার দ্বিতীয় বিয়ের সময় অনেক বিক্ষোভ, প্রতিবাদ হয়। এ কারণে হেমা মালিনীর সঙ্গে দ্বিতীয় বিয়েকে বৈধতা দেয়ার জন্য ধর্মান্তরিত হওয়া ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না।
শর্মিলা ঠাকুর: ২০১৩ সালে পদ্মভূষণ বিজয়ী এই অনিন্দসুন্দরী অভিনেত্রীও ইসলামে ধর্মান্তরিত হন ভালবাসার কারণে। তিনি মরহুম মানসূর আলী খান পতৌদির প্রেমে পড়েছিলেন এবং বিয়ের আগে ইসলামে ধর্মান্তরিত হন। ১৯৪৬ সালে জন্ম নেয়া শর্মিলা ছিলেন হিন্দু। কিন্তু বিয়ের পর তার নাম পাল্টে রাখা হয় আয়েশা বেগম।
এই যুগলের তিন সন্তান- অভিনেতা সাইফ আলী খান, অলংকার নকশাকার সাবা আলী খান এবং অভিনেত্রী সোহা আলী খান। তার স্বামী মানসূর আলী খান পতৌদি ২০১১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর মারা যান।
এ আর রহমান (আল্লা রাখা রহমান): তার সংগীত নিয়ে পুরো বিশ্ব জানলেও তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে বেশি জানা যায় না। ভারতের সবচেয়ে বিখ্যাত সুরকার, গায়ক, গীতিকার, সংগীত প্রযোজক এবং বাদক জন্মসূত্রে হিন্দু। তার নাম ছিল এ এস দিলীপ কুমার। পরবর্তীতে তিনি ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন।
১৯৮৪ সালে তার ছোট বোন মারাত্মভাবে অসুস্থ হলে তিনি কাদরী ইসলামের সঙ্গে পরিচিত হন। বিয়ের পূর্বে একটি ইসলামিক পরিবারের সদস্য হিসেবে তার মা ছিলেন সুফিজম দ্বারা প্রভাবিত। শৈশবে এর আর রহমান একজন অবিশ্বাসী ছিলেন। কিন্তু তিনি পরিপূর্ণ বিশ্বাসের সঙ্গেই ইসলাম গ্রহণ করেন।
অমৃতা সিং: অমৃতা সিং একটি শিখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮৩ সালে ‘বেতাব’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে আগমন করেন। সানি, মার্দ, সাহেবসহ কয়েকটি হিট সিনেমা উপহার দেন। ছোটবেলা থেকেই শিখ ধর্ম অনুসরণ করে আসছিলেন অমৃতা।
কিন্তু অভিনেতা সাইফ আলী খানকে বিয়ে করার পূর্বে ধর্মান্তরিত হন। ১৩ বছরের বিবাহিত জীবনের পর তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ হয় ২০০৪ সালে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল সাইফ আলী খানের বর্তমান স্ত্রী কারিনা কাপুর কিন্তু ধর্মান্তরিত হননি।
মাইকেল জ্যাকসন: অনন্য গায়কী ও নান্দনিক ড্যান্সের মাধ্যমে পুরো বিশ্বকে মাতাল করে দেয়া এই মহান শিল্পী ইসলামে দীক্ষিত হয়ে নাম রাখেন মীকাইল (Mikaeel)। লস এঞ্জেলেসের একটি বন্ধুর বাড়িতে পবিত্র কুরআনের উপরে আনুগত্য স্বীকার করেন তিনি। তার প্রযোজক এবং গীতিকার ডেভিড হোয়ার্নসবি ও ফিলিপ বুবা তাকে ইসলাম গ্রহণ করতে অনুপ্রাণিত করেন।
তারা মনে করেছিল, ইসলাম ধর্ম গ্রহণে তিনি ভালো মানুষে পরিণত হবেন, নিয়মানুবর্তি হবেন। এটা জানা যায়, মসজিদ থেকে একজন ইমাম বাসায় নিয়ে এসে তার কাছে কালেমা শাহাদাত পড়েন মাইকেল জ্যাকসন। এটা মুসলমানদের বিশ্বাসের ঘোষণা।