রাজনৈতিক নেতৃত্বে নতুন প্রজন্মের আগমনী বার্তা
প্রস্তুত হচ্ছে নব প্রজন্ম, একজন বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় অন্যজন মরহুম রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ পুত্র তারেক রহমান, প্রস্তুত হচ্ছে ক্ষেত্র, জয়কে এগিয়ে আনতে নানাভাবে সহযোগিতা দিয়ে চলেছেন শেখ হাসিনা। একইভাবে তারেকের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় কার্যকর সমর্থন রয়েছে খালেদা জিয়ার
শামছুদ্দীন আহমেদ: রাজনৈতিক নেতৃত্বের দুয়ারে কড়া নাড়ছে নব প্রজন্ম। দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক শিবির আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। উভয় দলেই জানান দিচ্ছে নতুন নেতৃত্বের আগমনী বার্তা। সজীব ওয়াজেদ জয় ও তারেক রহমান। এই মুহূর্তে রাজনীতিতে বেশ সক্রিয় দু’জনই। একদিকে তারা নিজ নিজ দলকে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছে দিতে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছেন, অন্যদিকে পূর্বসুরীরাও এ দু’জনের নেতৃত্ব বিকাশে সহযোগিতার সব দুয়ার খুলে দিয়েছেন। নেতৃত্ব যেন ‘হঠাত্’ আভির্ভাব না হয়। আগে থেকেই যাতে তার ক্ষেত্র প্রস্তুত হয় সে লক্ষ্যে সচেতনভাবেই এগোচ্ছেন দেশের প্রধান দুই নেত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া। চলছে নব প্রজন্মের নেতৃত্ব বিনির্মাণ পর্ব।
বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় আওয়ামী লীগের একজন সাধারণ সদস্য। এর বাইরে তিনি প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা। অন্যদিকে মরহুম রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ পুত্র তারেক রহমান বিএনপির সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান। তাদের কেউই ঐ-অর্থে সরকার কিংবা বিরোধী দলের চালকের আসনে নেই। অফিসিয়ালি দলের নীতি-নির্ধারকও তারা নন। তারপরেও চারপাশ থেকে দল ও দলের বর্তমান নেতৃত্বকে নানাভাবে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন জয় ও তারেক। বিশ্বরাজনীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজ সংগঠনের জন্য নতুন নতুন কৌশলপত্র প্রণয়ন, ধারণাপত্র তৈরি, সংগঠনকে প্রযুক্তি ও তথ্য সমৃদ্ধ করা, মূল সংগঠন এবং এর অঙ্গ-সংগঠনগুলোর দেশব্যাপী শক্ত নেটওয়ার্ক সৃষ্টি, বিভিন্ন পর্যায়ে নানা মাধ্যমে জরিপ চালিয়ে সর্বশেষ তথ্য সম্পর্কে অবহিত থাকা, প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে সংগঠনের দুর্বলতার দিকগুলো চিহ্নিত করে তা দূর করা, ভালো বিষয়গুলোকে ধরে রাখার নিত্যনতুন কৌশল বের করা এবং নতুন প্রজন্মের কাছে দলের আবেদন বাড়াতে আকর্ষণীয় বিভিন্ন প্যাকেজ প্রোগ্রাম হাজির করতে অত্যন্ত সক্রিয় সজীব ওয়াজেদ জয় ও তারেক রহমান। বিশেষ করে, তিনশ’টি সংসদীয় আসনের যাবতীয় সর্বশেষ তথ্য-উপাত্ত নিজেদের সংগঠনের ভাণ্ডারে সংগ্রহ করার কাজে বেশি মনোযোগী তারা দুজনই। কোন্ আসনে কাকে প্রার্থী করা হলে বিজয় ঘরে আসবে, তা নিশ্চিত করার মাধ্যমে দল বা নিজ জোটকে ক্ষমতায় নিয়ে যেতে কিংবা ক্ষমতার ধারাবাহিকতা ধরে রাখার লক্ষ্যে কাজ করছেন নতুন প্রজন্মের এই দুই প্রতিনিধি। পাশাপাশি বর্তমানে সরকারকে সাফল্যের সঙ্গে পরিচালনায় বিভিন্ন উপায়ে সহযোগিতা দিচ্ছেন জয়, আর সরকার বিরোধী আন্দোলনে সফলতা আনতে কৌশল নির্ধারণে সর্বাত্মক কাজ করছেন তারেক। শুধু নেপথ্যে থেকে কিংবা ঘরোয়াভাবেই নয়, নিজেদের চিন্তা-চেতনার বার্তা নিয়ে সময়ে সময়ে নতুন করে জনসমক্ষেও হাজির হচ্ছেন জয়-তারেক। বর্তমানে ঢাকায় অবস্থানরত সজীব ওয়াজেদ জয় গত ২৩ জুলাই যুবলীগের এক ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘সামনে নির্বাচন, অনেকে ভয়ে আছে, আমাদের সরকার কি আবার ক্ষমতায় আসবে? কিন্তু আমার কাছে তথ্য আছে, সংখ্যা আছে, আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসবেই’। তার এই প্রক্তব্য নতুন প্রাণের সঞ্চার করেছে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মাঝে। অন্যদিকে ওয়ান ইলেভেনের পট পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর লন্ডনে যাওয়ার পর সম্প্রতি সেখানে দু’দফায় দুটি অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক বক্তব্য রেখেছেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তাকের রহমান। সর্বশেষ ২৫ জুলাই লন্ডনে যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত এক ইফতার পার্টিতে তারেক রহমান বলেছেন, ‘নির্বাচন নয়, এখন আমাদের প্রধান লক্ষ্য হলো নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিষয়টি নিশ্চিত করা। দীর্ঘ এক ঘণ্টার বক্তব্যে তারেক রহমান ভবিষ্যত্ বাংলাদেশের জন্য একটি উন্নয়নের রূপরেখা উপস্থাপন করেন। যে রূপরেখায় তিনি বলেছেন ‘অতীতমুখিতা নয়, দৃষ্টি দিতে হবে ভবিষ্যত্ বাংলাদেশের দিকে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়ার বক্তব্য-মন্তব্যে যেমন রাজনীতিতে ব্যাপক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়, তেমনি সজীব ওয়াজেদ জয় ও তারেক রহমানের বক্তব্য-মন্তব্যেও রাজনীতিতে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়। জয়ের কোনো কোনো বক্তব্য নিয়ে যেমন বিরোধী দল তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখায়, তেমনি তারেকের কোনো কোনো বক্তব্য নিয়ে সরকারি দলও সংসদের ভেতর-বাইরে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। বিরোধী দল জয় সস্পর্কে নেতিবাচক কিছু বললে আওয়ামী লীগ ও এর ভ্রাতৃপ্রতীম সকল সংগঠন একযোগে প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে। একইভাবে তারেক রহমান সম্পর্কে সরকার পক্ষ নেতিবাচক কোনো কথা বললে ফুঁসে ওঠে বিএনপি।
জয়ের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় শেখ হাসিনা যেমন নানাভাবে সহযোগিতা করে চলেছেন, সমানভাবে খালেদা জিয়াও তারেক রহমানের নেতৃত্ব বিকাশে সব ধরনের সহযোগিতার যোগান দিচ্ছেন। জয় সম্পর্কে সংসদের ভেতর-বাইরে সমালোচনার জবাব দিচ্ছেন শেখ হাসিনা। অন্যদিকে খালেদা জিয়াও তারেক সমান সম্পর্কে সমালোচনার জবাব দিচ্ছেন কখনও কখনও। যেমন ‘আমার কাছে তথ্য আছে, সংখ্যা আছে, আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসবেই’ জয়ের এই বক্তব্য নিয়ে যখন বিরোধী দল থেকে আগামী নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করা হল তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুত্র জয়কে সমর্থন করে বলেছেন ‘ষড়যন্ত্র নয়, জরিপ ও তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতেই জয় ঐ কথা বলেছে। একইভাবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও সরকারি দলের সমালোচনার জবাবে একাধিকবার বলেছেন ‘তার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করা হচ্ছে, সে দেশে-বিদেশের ষড়যন্ত্রের শিকার’। এভাবে যোগ্য উত্তরসুরী বিনির্মাণে কাজ করছেন দেশের শীর্ষ দুই নেত্রীও। নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বকে গ্রহণযোগ্য করে তুলতেও দুই নেত্রী কৌশলে এগোচ্ছেন। শুধু প্রধান দুটি দলের নেতৃত্বেই নয়, সামগ্রিক রাজনীতিতেও জাগরণ সৃষ্টি হচ্ছে নতুন প্রজন্মের। ওয়ান ইলেভেনের পট পরিবর্তনে রাজনীতিতে, সংসদে, মন্ত্রিসভায় আগমন ঘটেছে নব প্রজন্মের প্রতিনিধির। ধারণা করা হচ্ছে, দল ও সরকারে আগামীতে নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধিত্ব ক্রমান্বয়ে আরও বাড়তে থাকবে।
এদিকে, নির্বাচন কমিশন প্রণীত ভোটার তালিকার দিকে দৃষ্টি ফেললেও নতুন প্রজন্মের প্রাধান্যেরই বার্তা মেলে। নির্বাচন কমিশনের হিসাব অনুযায়ী প্রতিবছর প্রায় ২৩ লাখ নতুন ভোটার যোগ হচ্ছে তালিকায়, যাদের সবাই তরুণ। বর্তমান ৯ কোটি ২১ লাখ ভোটারের মধ্যে ৪ কোটিরও বেশি ভোটারের বয়স ৪০ বছরের নিচে। ভোটার তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, মোট ভোটারের প্রায় ৪০ শতাংশই নতুন প্রজন্মের। ভোটার তালিকায় নতুন প্রজন্মের প্রাধান্য। এমন অবস্থায় রাজনৈতিক নেতৃত্বেও নতুন প্রজন্মের অভিষেক মোটেও অপ্রত্যাশিত নয়।