ইউআইটিএস’র সমাবর্তন ভাষণে ড. মাহাথির মোহাম্মদ

বিশ্বের নেতৃত্ব আবারও মুসলিম উম্মাহকেই নিতে হবে

Mahathir2আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ বলেছেন, একটি দেশের উন্নয়নের জন্য পূর্বশর্ত হলো রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। কারণ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর বিদেশি বিনিয়োগ নির্ভর করে। তিনি বলেন, বিদেশি বিনিয়াগ বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই সংশ্লিষ্ট দেশের উন্নয়ন হবে। এজন্য রাজনৈতিক দলগুলোরই দায়িত্ব স্থিতিশীলতা বজায় রেখে বিদেশি বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করে দেয়া।
শনিবার বিকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি এন্ড সায়েন্সেস’র দ্বিতীয় সমাবর্তন ভাষণ শেষে আয়োজিত ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। এর আগে, সমাবর্তন ভাষণে ড. মাহাথির বলেন, তথ্য-প্রযুক্তি ও আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে বিশ্বের নেতৃত্ব আবারও মুসলিম উম্মাহকেই নিতে হবে।
ড. মাহাথির বলেন, “মুসলিম উম্মাহকে তার আত্মরক্ষার জন্য জ্ঞান ও বিজ্ঞানে উন্নতি করতে হবে। তাহলেই কাক্সিক্ষত উন্নতি করা যাবে।”
এজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সাবেক মালয়েশীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ত্যাগের মানসিকতা ও তথ্য-প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটিয়ে সগর্বে এগিয়ে যেতে হবে।
মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে ড. মাহাথির আরো বলেন, জাতীয় উন্নতি ও অগ্রগতির মূল অন্তরায় রাস্তায় বিক্ষোভ তথা রাজনৈতিক অস্থিরতা। রাস্তায় বিক্ষোভ বন্ধ করতে না পারলে কখনোই দেশের উন্নতি সাধন সম্ভব হবে না।
প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সাম্প্রতিক জাতীয় নির্বাচন বর্জন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন ও ফলাফল বর্জন কোনো সমাধান নয়। এ ধরনের সিদ্ধান্ত দেশ ও জাতির জন্যও কল্যাণকর নয়। গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে প্রত্যেক রাজনৈতিক দলকে নিজস্ব অবস্থান থেকে অবদান রাখা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক কর্মসূচি দেয়ার ক্ষেত্রে ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি এড়িয়ে চলা উচিত। দেশ ও জাতির স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোকে সহনশীল হওয়ারও পরামর্শ দেন তিনি।
ড. মাহাথির মোহাম্মদ বলেন, গণতান্ত্রিক পদ্ধতির নির্বাচনে একটি দল হারবে, আরেকটি দল জিতবে। এই নীতিতে বিশ্বাস করলে সেখানে গণতন্ত্র জিতবে। কিন্তু যদি নির্বাচন বয়কট করা হয় বা নির্বাচনী ফলাফল প্রত্যাখ্যান করা হয়, তাহলে সেখানে জাতি জয়লাভ করে না। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে জর্জ ডব্লিউ বুশের জয়লাভ নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছিল। তারপরও সেখানে জাতীয় জয়ের প্রয়োজনে সেটা মেনে নেয়া হয়েছিল।
ড. মাহাথির বলেন, আসলে বিশৃঙ্খলা কোনো ফলাফল আনে না। মনে রাখতে হবে, কোনো দেশের উন্নতি করার জন্য স্থিতিশীল পরিস্থিতির প্রয়োজন। যারা নির্বাচনে পরাজিত হয় তাদের  ধৈর্য ধরতে হবে। পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।
তিনি আরও বলেন, উন্নত অনেক দেশে মোট ভোটারের ২৫ ভাগ ভোটাধিকার প্রয়োগ করে।  তার মধ্যে মাত্র ১৫ ভাগ ভোট পেয়ে সরকার গঠন করতে দেখা যায়। সে অবস্থায়ও রাজনৈতিক দলগুলোকে পরবর্তী নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায়। ড. মাহাথির বলেন, জাতীয় ইস্যুতে স্ট্রাইক (হরতাল-ধর্মঘট) হতে পারে। প্রয়োজন মনে করলে জনগণ তাতে অংশ নেবে। কিন্তু কেবলই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত স্ট্রাইক কাম্য নয়।
উন্নয়নশীল দেশে ধর্মঘটকে পশ্চিমা ধাঁচের কৌশল উল্লেখ করে মাহাথির বলেন, মিসর, থাইল্যান্ড, ইউক্রেনসহ অনেক গণতান্ত্রিক দেশেও এমন কর্মসূচি দেখা যায়। সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের রায় নিয়ে গঠিত সরকারও রাজপথের বিক্ষোভের মুখে পড়ে। এটা পশ্চিমা-প্রভাবিত কৌশল। তবে জাতীয় প্রয়োজনে যৌক্তিক স্ট্রাইক ডাকলে সেটা ভিন্নকথা।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি নিজের প্রধানমন্ত্রিত্বের সাফল্যের কথা শোনাতে গিয়ে জানান, তিনি ক্ষমতায় এসে পূর্বমুখী (লুকিং ইস্ট) নীতি গ্রহণ করেন। এক্ষেত্রে পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর উন্নয়নের দৃষ্টান্ত গ্রহণ করা হয়। উন্নয়নের জন্য একটা শক্তিশালী ভিত্তি নিয়ে তিনি সরকার গঠন করেন। মোট ৫টি নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল তার শক্তি।
এর আগে ইউআইটিএস’র সমাবর্তন ভাষণে উপস্থিত সদ্য গ্রাজুয়েট ও অতিথিদের উদ্দেশে ড. মাহাথির বলেন, তথ্য-প্রযুক্তি ও আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে বিশ্বের নেতৃত্ব আবারও মুসলিম উম্মাহকেই নিতে হবে। একটি জাতিকে আত্মরক্ষার জন্য জ্ঞান ও বিজ্ঞানে উন্নতি করতে হবে। তাহলেই কাক্সিক্ষত উন্নতি করা যাবে। এজন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সাবেক মালয়েশীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ত্যাগের মানসিকতা ও তথ্য-প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটিয়ে সগর্বে এগিয়ে যেতে হবে।
তিনি বলেন, মুসলিম বিশ্ব বিগত ৫শ’ বছরের বেশি দিন যাবত জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় পিছিয়ে আছে। চলমান বিশ্বে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে হলে মুসলিম বিশ্বকে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি গভীরভাবে আয়ত্ত করতে হবে।
ইউনিভার্সিটির চ্যান্সেলর ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। বক্তব্য রাখেন ইউআইটিএস’র ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান সূফী মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, প্রোভিসি অধ্যাপক ড. কেএম সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।
সমাবর্তনে আনুষ্ঠানিকভাবে ২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের শিক্ষার্থীদের ডিগ্রি প্রদান করেন রাষ্ট্রপতি। সমাবর্তনে  চ্যান্সেলর, ট্রাস্টি বোর্ড ও ভিসি স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়।
গতকাল শনিবার সকাল সোয়া ১০টায় একটি বিশেষ বিমানে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি। তাকে অভ্যর্থনা জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণপূর্ব এশিয়া অণুবিভাগের মহাপরিচালক আবু জাফরসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ও ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সে’র (ইউআইটিএস) ভাইস চ্যান্সেলর ড. মুহাম্মদ সামাদ। আজ রোববার সকালে তিনি দেশে ফিরে যাবেন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button