এক নিঃস্ব প্রধানমন্ত্রীর গল্প
বলছি একজন প্রধানমন্ত্রীর কথা। তার বয়স ৭৫ বছর। নেই নিজস্ব কোন জমিজমা, বাড়িঘর। নেই ব্যাংকে কোন অর্থ। এমন কি একটি ব্যাংক একাউন্টও নেই তার। বিয়ে করেন নি। কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা কোন কোম্পানিতে তার নেই কোন বিনিয়োগ। জীবনের সবটা সময় একা একা কাটিয়ে দিচ্ছেন। সম্পদ বলতে আছে মাত্র তিনটি মোবাইলফোন।
অনেকেই বিস্মিত হতে পারেন এ খবরে। কিন্তু ঘটনা সত্য। তিনি হলেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালা। অভিজাত কৈরালা পরিবারের সন্তান। একজন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার মাত্র তিনটি মোবাইলফোন থাকায় তাকে বলা হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে গরিব প্রধানমন্ত্রী। এ কথা প্রকাশিত হয়েছে বৃহস্পতিবার। তিনি জনগণের কাছে প্রকাশের জন্য সহায় সম্পত্তির বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। তবে তা এখনও সরকারিভাবে প্রকাশ করা হয় নি। প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে এ বিষয়ে বিস্তারিত ঘোষণা দেয়া হবে।
তবে শুক্রবার তার এক সহকারী প্রধানমন্ত্রীর সম্পদের ওই বিবরণ দিয়েছেন একটি সংবাদ সংস্থার কাছে। তাতে সুশীল কৈরালা দেখিয়েছেন তার স্থাবর বা অস্থাবর বলতে কোন সম্পদ নেই। সারা জীবনে তিনি কোন অর্থ জমা করেন নি। এ জন্য তাকে নেপালের রাজনীতিতে ‘সন্ন্যাসী’ হিসেবে ডাকা হয়। তার জীবনধারায় সরলতা একজন সাধারণ মানুষের জীবনকেও হার মানায়।
গত মাসে ৭৫ বছর বয়সে তাকে নেপালের নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করা হয়। ফলে প্রধানমন্ত্রী পদে তার দায়িত্ব পালনের এক মাস পূর্ণ হয়েছে। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তিনি বেতন পান নি। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সমন্বয়কারী প্রকাশ অধিকারী বলেছেন, যখন তিনি বেতন গ্রহণ করবেন তখন আমরা তার নামে একটি ব্যাংক একাউন্ট খুলবো। তিনিই মিডিয়ার কাছে প্রধানমন্ত্রীর সম্পদের দুর্দশা প্রকাশ করেছেন।
বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর তিনটি মোবাইলফোনের মধ্যে একটি সর্বশেষ ভার্সনের আইফোন, দুটি অতি সাধারণ মোবাইল ফোন সেট। এর মধ্যে আবার একটি মোবাইল নষ্ট। কোন কাজ করে না সেটি। এর বাইরে তার কোন সম্পদ নেই। তিনি এর আগে কখনও সরকারি দায়িত্ব পালন করেন নি। বসবাস করেন কাঠমান্ডুতে একটি ভাড়া বাসায়। এ বাড়িটির ভাড়া পরিশোধ করে তার দল নেপালি কংগ্রেস। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার আগে তিনি একটি গাড়ি ব্যবহার করতেন। এটি দিয়েছেন দলের এক শুভাকাঙক্ষী।
প্রধানমন্ত্রীর অফিসের এক কর্মকর্তা বলেছেন, তিনি প্রথম যখন প্রধানমন্ত্রীর সম্পদের তালিকা হাতে পান তখন বিস্মিত হয়েছেন। বলেছেন, আমি বিশ্বাসই করতে পারি নি। তার এক সহকারীর সঙ্গে যখন ওই তালিকা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিলাম তখন হতাশ হয়েছি। আমি দেখলাম তার দেয়া তথ্য সঠিক। শেষ পর্যন্ত মেনে নিলাম যে, আমাদের প্রধানমন্ত্রী একেবারে সাধারণ মানুষ।
সুশীল কৈরালার বাড়ি পশ্চিম নেপালের ব্যাংকি জেলায়। সেখানে তার ভাইয়েরা ও আত্মীয়রা বসবাস করেন। সেখানে রয়েছেন তার ৬ ভাই। তাদের রয়েছে বিপুল ভূ-সম্পত্তি। যখন ভাইদের মধ্যে সম্পদ ভাগাভাগি হয় তখন তিনি তা নিতে রাজি হন নি।
প্রকাশ অধিকারী বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর সম্পদের তালিকা হাতে পাওয়ার পর তার এক সহযোগী তার কাছে জানতে চেয়েছিলেন যে, তার অন্য কোন সম্পত্তি আছে কিনা যা এই তালিকার সঙ্গে যোগ করা যায়। জবাবে সুশীল কৈরালা বলেন, না। আমার আর কোন সম্পত্তি নেই। তবে সম্পদ বলতে আমার যা আছে তা হলো তিনটি মোবাইলফোন। তিনি ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই মন্ত্রিপরিষদের সবাইকে তাদের অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা রক্ষা, নীতিপরায়ণ হতে ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার নীতি গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছেন।
এ মাসের প্রথম সপ্তাহে মিয়ানমারে অনুষ্ঠিত হলো বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন। তিনি এতে যোগ দেন একটি ছোট্ট দল নিয়ে। সুশীল কৈরালা পরেন একটি সাধারণ ঘড়ি ও স্বর্ণের আংটি। প্রকাশ অধিকারী বলেন, তিনি নিশ্চিত নন যে, প্রধানমন্ত্রীর হাতের আংটিটি খাঁটি স্বর্ণের কিনা। এ জন্যই হয়তো তা তিনি সম্পদ বিবরণীতে দেখান নি। নেপালের দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৯২ অনুসারে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদ, রাষ্ট্রদূত, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও অন্য যারা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বেতন উত্তোলন করেন তাদের সবাইকে সম্পদের পূর্ণ বিবরণী প্রকাশ করতে হবে। এর মধ্যে উল্লেখ থাকতে হবে বাড়ি, জমি, গাড়ি, শেয়ার, ব্যাংক একাউন্ট, নগদ অর্থ, স্বর্ণ ও রুপার অলংকার। নেপালে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পর তখনকার প্রধানমন্ত্রী কৃষ্ণ প্রসাদ ভট্টরাইও বেছে নেন একেবারে সাধারণ জীবন। তিনি হিমালয় দুহিতা নেপালে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করে গেছেন সারা জীবন। তিনিও বাস করতেন একটি ভাড়া করা কক্ষে। তার সম্পদ বলতে ছিল, একটি ছাতা, কাদামাটির তৈরি একটি পানির পাত্র ও এলুমিনিয়ামের একটি বাক্স। – মানবজমিন