থাই প্রধানমন্ত্রীর খোঁজ নেই এক মাস ধরে
সরকারপ্রধান ছাড়া দেশ চালানোর কথা ভাবা যায়? অথচ গত এক মাস ধরে এ ঘটনাটিই ঘটছে থাইল্যান্ডে। বিরোধী দলহীন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সহিংসতার পর গত ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে গেছেন ইংলাক সিনাওয়াত্রা।
কোথায় আছেন প্রধানমন্ত্রী? এ প্রশ্নের জবাব দিতে পারছে না সরকার বা ইংলাকের দল পুয়ে থাই পার্টি। তবে সরকারের ওয়েবসাইটে ইংলাককেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখানো হচ্ছে।
ইংলাকের দপ্তর থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিকদের জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রী ব্যাংককে নেই। বর্তমানে তিনি ব্যাংককের বাইরে অবস্থান নিয়ে ‘দাপ্তরিক কাজকর্ম চালাচ্ছেন।’ তবে ইংলাক কতদিন ধরে রাজধানীর বাইরে থেকে কাজ করছেন বা তার নির্দিষ্ট অবস্থান সম্পর্কে কিছুই জানানো হয়নি।
ইংলাককে সর্বশেষ ১৮ ফেব্রুয়ারি ব্যাংককে দেখা গেছে। সেদিন এক দুর্নীতি মামলার শুনানিতে অংশ নিতে তিনি আদালতে উপস্থিত হয়েছিলেন।
থাই প্রধানমন্ত্রী ইংলাককে ক্ষমতা থেকে উৎখাত এবং দেশটির রাজনীতি তার ভাই সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার প্রভাবমুক্ত করাই বিক্ষোভের মূল উদ্দেশ্য।
থাইল্যান্ডের রাজনৈতিক সংকটের এক পক্ষে রয়েছে ব্যাংককের মধ্যবিত্ত ও তথাকথিত অভিজাত শ্রেণি এবং দেশের দক্ষিণাঞ্চলে তাদের সমর্থকরা। আরেক পক্ষে রয়েছে দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের গ্রামীণ জনগোষ্ঠী, যারা থাকসিন পরিবারের সমর্থক। অবস্থাদৃষ্টে এই সংকট নিরসনে শিগগিরই কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। তবে কী আবারো দেশটির শাসন ক্ষমতা সেনাবাহিনীর হাতে চলে যাচ্ছে? অবস্থাদৃষ্টে এমন প্রশ্ন আসতেই পারে। যেহেতু ১৯৩২ সালে থাইল্যান্ডে সাংবিধানিক রাজতন্ত্র চালুর পর থেকে এ পর্যন্ত আঠারোবার সেনাবাহিনী অভ্যুত্থান বা অভ্যুত্থানের চেষ্টা করেছে। সর্বশেষ ২০০৬ সালে থাকসিনকে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশটির সেনাবাহিনী।
২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন থাকসিন সিনাওয়াত্রা। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতিসহ বেশকিছু অভিযোগে মামলা হয়েছে। ২০০৮ সালে একটি আদালত তাকে কারাদ- দেয়। বর্তমানে স্বেচ্ছানির্বাসনে তিনি দেশের বাইরে আছেন। তবে ২০১০ সালে অভিজিত তেজ্জাজিভার নেতৃত্বাধীন সেনাসমর্থিত ডেমোক্র্যাট সরকারকে উচ্ছেদ করে থাকসিন সমর্থকরা। ২০১১ সালে বড় ব্যবধানে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে পুয়ে থাই পার্টি। দুর্নীতি মামলায় সাজার কারণে থাকসিন ভোটে দাঁড়াতে না পারলে দলের নেতৃত্ব দেন তার বোন ইংলাক সিনাওয়াত্রা। বিক্ষোভকারীদের দাবি, থাকসিনের বোন ইংলাক প্রধানমন্ত্রী হয়ে বড় ভাইয়ের মতোই দেশ চালাচ্ছেন, সুতরাং ইংলাককে পদত্যাগ করতে হবে।
তবে চলমান সংকট নিরসনে অভ্যুত্থানের আশঙ্কা নাকচ করে দিয়েছেন থাইল্যান্ডের সেনাপ্রধান। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, সহিংসতা এভাবে চলতে থাকলে দেশ ভেঙে পড়তে পারে।
সেনাপ্রধান প্রাইয়ুথ চান-ওচা এক টেলিভিশন ভাষণে বলেছেন, ‘কাউকে না কাউকে দায়িত্ব নিতেই হবে। তার মানে এই নয়, সেনারা আইনের কাঠামোর আওতায় কাজ না করে হস্তক্ষেপ করতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কে নিশ্চিত করে বলতে পারে, আমরা সেনাদের ব্যবহার করলেই পরিস্থিতি শান্ত হয়ে যাবে?’
থাইল্যান্ডে গত বছরের ২৪ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া সরকারবিরোধী সহিংসতায় এখন পর্যন্ত ২১ জন নিহত ও সাতশর বেশি লোক আহত হয়েছে। গত বছর বিতর্কিত অ্যামনেস্টি বিল নিয়ে দেশটিতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়। ওই অ্যামনেস্টি বিল অনুয়ায়ী, দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রার ভাই থাকসিন সিনাওয়াত্রাকে দেশে ফিরে দুর্নীতির মামলায় সাজা ভোগ করতে হবে না। আন্দোলনের মুখে ওই বিলটি থাই সিনেটে পাস না হলেও রাজনৈতিক অস্থিরতা কিন্তু থেমে নেই।
বিক্ষোভকারীদের চাপে সংসদ ভেঙে দিয়ে আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দিলেও তাতে কাজ হয়নি। শুরুতেই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয় ডেমোক্র্যাটিক পার্টি। বিরোধীদের দাবি ছিল, ক্ষমতা থেকে সরে আসতে হবে ইংলাককে। বিরোধীদের দাবি, নির্বাচন হতে হবে নির্দলীয় সরকারের অধীনে। এরপর বিরোধী দলের বয়কট সত্ত্বেও একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় দেশটিতে। কিন্তু সেই নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের আগেই আড়ালে চলে যান থাইল্যান্ডের ২৮তম এবং প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রা। -ঢাকাটাইমস