ব্রিটেনে ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান বেড়েই চলেছে
ব্রিটেনে ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান দিন দিন বেড়েই চলেছে। দাতব্য সংস্থা অক্সফামের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বিষয়টির এক ভয়াবহ চিত্র প্রকাশ পেয়েছে গত সোমবার। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, ব্রিটেনের সবচেয়ে ধনী পাঁচ পরিবারের মোট সম্পদের পরিমাণ দেশটির দরিদ্রতম জনগোষ্ঠীর ২০ ভাগের মোট সম্পদের চেয়েও বেশি। দ্য গার্ডিয়ান এ খবর জানিয়েছে। অক্সফামের ওই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, কীভাবে ব্রিটেনের ধনকুবের পরিবারগুলোর কাছে জমতে থাকা সম্পদ দেশটির দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মোট সম্পদকে দিন দিন ছাড়িয়ে যাচ্ছে। একটি তুলনায় দেখানো হয়েছে, ডিউক অব ওয়েস্টমিনস্টারের পরিবারসহ মাত্র পাঁচটি পরিবারের মোট সম্পদের পরিমাণই দেশটির দরিদ্রতম জনগোষ্ঠীর ১ কোটি ২৬ লাখ মানুষের মোট সম্পদের চেয়ে বেশি।
এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে এসে ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান কমানোর লক্ষ্যে কর ফাঁকি দেওয়ার বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং বাস্তবসম্মত মজুরি বাড়ানোর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ব্রিটেনের অর্থমন্ত্রীর প্রতি আহ্বানও জানানো হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। ব্রিটেনের বাজেটকে সামনে রেখেই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
অক্সফামের এ প্রতিবেদন অনুসারে ব্রিটেনের সবচেয়ে ধনী পাঁচ পরিবার ও তাঁদের সম্পদের পরিমাণ—
ডিউক অব ওয়েস্টমিনস্টার
ওয়েস্টমিনস্টারের ডিউক গেরাল্ড গ্রসভেনোর এবং তাঁর পরিবারের মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৭৯০ কোটি পাউন্ড। বাকিংহাম প্রাসাদ সংলগ্ন লন্ডনের সবচেয়ে অভিজাত এলাকা মেফেয়ার ও বেলগ্রাভিয়ায় ১৯০ একর জমি আছে পরিবারটির। লন্ডনের কেন্দ্রস্থলের এ এলাকার জমির দাম রকেটের গতিতে ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সম্পদের পরিমাণও বাড়ছে তাঁদের।
লন্ডনের এই বিপুল মূল্যবান ভূ-সম্পদের পাশাপাশি স্কটল্যান্ডে ৩৯,০০০ হেক্টর এবং স্পেনে ১৩,০০০ হেক্টর জমি আছে গ্রসভেনোর পরিবারের। এগুলো তো গেল রাজপরিবার সূত্রে পাওয়া জমিজমার বিবরণ। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ফোর্বস সাময়িকীর হিসাবে ব্যক্তিগত মালিকানাধীন গ্রসভেনোর এস্টেট প্রোপার্টি গ্রুপের সম্পদের পরিমাণ ১২০০ কোটি পাউন্ড। লিভারপুল ওয়ান শপিং মল এই গ্রুপেরই অন্যতম ব্যবসা।
রুবেন ব্রাদার্স
সাইমন ও ডেভিড রুবেন তাঁদের মূলধন গড়ে তুলেছিলেন লোহার ব্যবসায়। ভারতে জন্ম নিয়ে লন্ডনে বড় হওয়া এই দুই ভাই বাতিল লোহালক্কড়ের ব্যবসা দিয়ে শুরু করলেও ধীরে ধীরে টিন ও অ্যালুমিনিয়ামের ব্যবসায় সাফল্য পান। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পরপর সেখানে ব্যবসা সম্প্রসারণের মাধ্যমেই ভাগ্যের দরজা খুলে যায় তাঁদের। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মোট অ্যালুমিনিয়াম শিল্পের প্রায় অর্ধেকের মালিক বনে গিয়েছিলেন রুবেন ভাইয়েরা।
এখনো ধাতব ও খনিজ শিল্পের ব্যবসায় থাকলেও রুবেনদের ব্যবসা সম্প্রসারিত হয়েছে নানা শাখায়। এর মধ্যে আছে ৮৫০টি ব্রিটিশ পাবের মালিকানা, বিলাসবহুল প্রমোদতরি নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ক্রিস্টাল ওয়াটার্সসহ জমিজমার ব্যবসাও। এই পরিবারটির মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৬৯০ কোটি পাউন্ড। তাঁরা ব্রিটেনের রক্ষণশীল দলের দাতা।
হিন্দুজা ব্রাদার্স
শ্রীচাঁদ এবং গোপীচাঁদ ভ্রাতৃদ্বয় হিন্দুজা গ্রুপের কো-চেয়ারম্যান। বহুজাতিক এই কোম্পানিটির ব্যবসা ছড়িয়ে আছে পৃথিবীর ৩৭টি দেশে। ট্রাক, লুব্রিকেন্টস থেকে শুরু করে ব্যাংকিং এবং স্বাস্থ্যসেবা খাতেও ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছে হিন্দুজা গ্রুপ।
মুম্বাইয়ে বাবার টেক্সটাইল আড়তদারির কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন এই দুই ভাই। মুম্বাই থেকে ইরানের তেহরানে ব্যবসা সম্প্রসারণ করেন তাঁরা। গত শতকের আশির দশকে ব্রিটিশ ট্রাক প্রস্তুতকারক অশোক লেল্যান্ড এবং তেল কোম্পানি শেভরনের কাছ থেকে গালফ অয়েলের মালিকানা কিনে নেয় হিন্দুজা গ্রুপ। নব্বইয়ের দশকে সুইজারল্যান্ড এবং ভারতে ব্যাংকিং ব্যবসা খোলেন তাঁরা।
লেবার পার্টির সঙ্গে সম্পর্কিত হিন্দুজা ভ্রাতৃদ্বয়ের লন্ডনের বাড়িটি বাকিংহাম প্রাসাদের খুব কাছেই সেইন্ট জেমস পার্কের পাশে। বাড়িটির দাম আনুমানিক ৩০ কোটি পাউন্ড। হিন্দুজা ভ্রাতৃদ্বয়ের মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৬০০ কোটি পাউন্ড।
ক্যাডোগান পরিবার
প্রায় ৪০০ কোটি পাউন্ড সম্পদের মালিক ক্যাডোগান পরিবার। পশ্চিম লন্ডনের চেলসিয়া ও নাইটসব্রিজে ৯০ একর এবং ৩৬ হেক্টর জমি আছে ক্যাডোগান পরিবারের। ক্যাডোগানের অষ্টম আর্ল ইটন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষিত চার্লস বর্তমানে ক্যাডোগান এস্টেটসের প্রধান ছিলেন। ২০১২ সালে ছেলে এডওয়ার্ডের কাছে ব্যবসা পরিচালনার দায়িত্ব ছেড়ে দেন তিনি।
প্রিন্স আগা খানের চাচাতো ভাই চার্লস গত শতকের আশির দশকে কিছুদিনের জন্য চেলসিয়া ফুটবল ক্লাবের চেয়ারম্যানও হয়েছিলেন।
মাইক অ্যাশলে
মাইক অ্যাশলে নিউক্যাসল ইউনাইটেড ফুটবল ক্লাবের মালিক। স্কুল ছাড়ার পরপরই স্পোর্টস ডাইরেক্ট নামে খেলাধুলার পোশাক বিক্রেতা চেইন শপ দিয়ে শত কোটিপতিতে পরিণত হয়েছিলেন অ্যাশলে। বর্তমানে তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৩৩০ কোটি পাউন্ড।
ডানলপ, স্লেনজার, কারিমোর ও লন্সডেলের মতো ব্র্যান্ডগুলোর ক্রমবর্ধমান ব্যবসার প্রায় একচ্ছত্র মালিক ছিলেন তিনি। ২০০৭ সালে স্টক মার্কেটে প্রবেশের পর বর্তমানে এই ব্যবসার ৬২ ভাগের মালিক অ্যাশলে।