সিটিজেন মুভমেন্ট ইষ্ট মিডল্যান্ডের উদ্যোগে
ভারতীয় হাইকমিশনে বিক্ষোভ ও স্মারকলিপি প্রদান
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নগ্ন হস্তক্ষেপ, সীমান্ত হত্যা বন্ধ, অভিন্ন নদীর পানির নায্য হিস্যাসহ বিভিন্ন দাবিতে বার্মিংহামস্থ ভারতীয় হ্ইাকমিশনের সামনে গত ১৮ মার্চ এক বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশে করেছে সিটিজেন মুভমেন্ট ইষ্ট মিডল্যান্ড (বার্মিংহাম) শাখা। প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে ভারতীয় হাইকমিনার বরাবর স্মারকলিপিও প্রদান করা হয়।
সিটিজেন মুভমেন্ট ইষ্ট মিডল্যান্ডের (বার্মিংহাম) আহ্বায়ক সৈয়দ জমশেদ আলীর সভাপতিত্বে ও যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হাসান ছাবেরের পরিচালনায় প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিটিজেন মুভমেন্ট ইউকের আহবায়ক এম এ মালেক। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুফতি শাহ সদরুদ্দিন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সৈয়দ মামনুন মোর্শেদ, বিশিষ্ট কমিউনিটি নেতা, সিটিজেন মুভমেন্ট ইষ্ট মিডল্যান্ডের (বার্মিংহাম) যুগ্ম আহ্বায়ক মৌলানা মোকারম, সিটিজেন মুভমেন্ট নেতা খসরুজাম্মান খসরু, সাদেক হোসেন মসুদ, আব্দুল মালিক পারভেজ, মফিজ খান, সৈয়দ কবির আহমেদ, ইকবাল সোলেমান, মৌলানা সোয়েব, জাহিদ চৌধুরী, মোস্তাকীম বোরহানী, মানিক মিয়া, মুহাম্মদ মুসা।
মৌলানা মোকারমের সার্বিক সহযোগিতায় বার্মিংহাম ভারতীয় হাইকমিশনের সামনে দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশের অভ্যন্তরীন বিষয়ে ভারতের অযাচিত হস্তক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানান। বক্তারা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দেশপ্রেমিক জনগণদের ঐক্যবদ্ধ হবার আহ্বান জানান।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এম এ মালেক বলেন, ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং অখন্ডতার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র করছে। বাংলাদেশ কারো দয়া কিংবা অনুগ্রহে প্রতিষ্ঠিত হয়নি তাই মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতার অজুহাতে বাংলাদেশের অখন্ডতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, দেশপ্রেমিক জনগণ কখনো মেনে নেবে না। তিনি বলেন, ভারত সরকার বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অযাচিত হস্তক্ষেপ করছে যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য বিরাট হুমকি। শুধুমাত্র আওয়ামীলীগের আশ্রয় প্রশ্রয় ও সহযোগিতায় একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশের অভ্যন্তরীন বিষয়ে তারা নগ্ন হস্তক্ষেপ করছে । এম এ মালেক আরও বলেন, ভারত কুটনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন করে শুধু বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে না তাদের পছন্দের দল আওয়ামীলীগকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য নানা পরিকল্পনা করেছে। টিপাইমূখ, ফারাক্কা বাঁধ, তালপট্টি, তিনবিঘা করিডোর, ছিটমহল, অভিন্ন নদীর পানির নায্য হিস্যা বিষয়ে বাংলাদেশের সাথে ভারত কোন প্রতিবেশী সূলভ আচরণ করছে না উল্লেখ করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতের সকল অপততপরতা রুখে দাঁড়াবার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ভারত বাংলাদেশের সুপ্রতিবেশী হলে আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে নগ্ন হস্তপক্ষেপ করতো না। সুপ্রতিবেশী দেশ কখনো সীমান্তে নিরীহ নাগরিকদের হত্যা করতে পারে না। তিনি ভারতকে কঠোর হুশিয়ারী দিয়ে বলেন, ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করে দেশপ্রেমিক জনগণ বিজয়ী হয়েছিলো। প্রয়োজনে আরেকটি মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আগ্রাসী গোষ্ঠিকেও বিতাড়িত করা হবে।
প্রধান বক্তা মুফতি শাহ সদরুদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ সরকারকে ভারত তোষণ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের অখন্ডতার বিরুদ্ধে যারা অবস্থান নেয় এদের সাথে যারা আঁতাত করে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে চায় জনগণ এদের বাংলাদেশ বিরোধী অপশক্তি হিসেবে চিহ্নিত করে রাখবে। বক্তারা কঠোর ভাষায় হুশিয়ারী দিয়ে বলেন, বন্ধুত্বের নামে যারা গোপনে শত্রুতা করে এদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে দেশপ্রেমিক জনগণ প্রস্তুত। অপতৎপরতা বন্ধ এবং আমাদের ন্যায় সঙ্গত দাবী না মানলে পৃথিবীর সব জায়গায় বাংলাদেশের জনগণ ভারতের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।
শিক্ষাবিদ সৈয়দ মামনুন মোর্শেদ বলেন, ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে দেশের উত্তরাঞ্চল মরুময় করা হয়েছে। এখন টিপাইমুখ বাঁদ দিয়ে দেশের বাকী অঞ্চলের কৃষি শিল্পসহ সামগ্রিকভাবে ধ্বংস করে দেয়ার সুগভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তিনি ভারতকে বাংলাদেশ নিয়ে খেলা না করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বড় প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভেবে যা খুশী করার পরিণাম আপনাদের জন্য সুখকর হবে না।
সিটিজেন মুভমেন্ট ইষ্ট মিডল্যান্ডের (বার্মিংহাম) যুগ্ম আহ্বায়ক বিশিষ্ট কমিউনিটি নেতা মৌলানা মোকারম, ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগকে ভারতের সাথে বাংলাদেশের অখন্ডতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী উল্লেখ করে বলেন, গণতন্ত্র, সাম্য, সামাজিক ন্যায় বিচার ও মানবিক মর্যাদাকে ভূলন্ঠিত করে যারা সমাজতন্ত্র, ধর্ম নিরপেক্ষতাকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় এরা কখনো দেশ ও জাতির বন্ধু হতে পারে না। যারা নিজ দেশের স্বার্থকে ধ্বংস করে প্রতিবেশীদের অন্যায় করার সুযোগ তৈরী কওে তারা মানবতার জন্য শত্রু।
সভাপতির বক্তব্যে সৈয়দ জমশেদ আলী বলেন, ভারত বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে কখনো কাজ করেনি। মহান মুক্তিযুদ্ধে তারা যেটুকু সহযোগিতা করেছে তার চেয়ে হাজার গুন বেশী আমাদের সম্পদ লুণ্ঠন করে গেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন দিতেও পিছপা হয় না। তাই দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে জনগণ ঘরে বসে থাকবে না।