ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে দুই বছরের সর্বোচ্চ লেনদেন

লেনদেন ও মূল্যবৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেন হয়েছে প্রায় এক হাজার ৩০০ কোটি টাকা। গতকাল এখানে লেনদেন হয় এক হাজার ২৯৪ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এটি এ বাজারে গত দুই বছরের সর্বোচ্চ লেনদেন। এর আগে সর্বশেষ ২০১১ সালের জুলাই মাসে এ পর্যায়ে ছিল ডিএসইর লেনদেন। মাঝখানে বেশ কয়েকবার লেনদেন হাজার কোটি টাকা ছাড়ালেও নেতিবাচক প্রবণতায় দীর্ঘ সময় ধরে আর এ পর্যায়ে পৌঁছতে পারেনি। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে আগের দিনের ৭৩ কোটি টাকা থেকে ৯৩ কোটি টাকায় পৌঁছে লেনদেন। লেনদেনের পাশাপাশি দুই পুঁজিবাজারে সূচকের বড় মাত্রায় উন্নতি ঘটে গতকাল। ঢাকা বাজারের প্রধান সূচকটি গতকাল ১২৪ দশমিক ৩৭ পয়েন্ট বৃদ্ধি পায়। ডিএসইএক্স সূচক বাড়ে ৫৮ দশমিক ০৭ পয়েন্ট। দেশের দ্বিতীয় পুঁজিবাজার চট্টগ্রামে সার্বিক মূল্যসূচক ১৫৬ দশমিক ৮১ ও সিএসসিএক্স সূচকের ৯৬ দশমিক ৪৮ পয়েন্ট উন্নতি ঘটে। দুই বাজারেই বড় মূলধন ও মৌলভিত্তির দিক থেকে এগিয়ে থাকা কোম্পানিগুলোর মূল্যবৃদ্ধির কারণেই সূচকের বড় ধরনের উন্নতি এমন মন্তব্য বিশ্লেষকদের। বিশেষ করে গ্রামীণফোন ও তিতাস গ্যাসের মতো বড় মূলধনী কোম্পানির মূল্যবৃদ্ধি গতকাল দুই বাজার সূচককে এভাবে এগিয়ে নিয়েছে বলেই মনে করছেন তারা। সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজার আচরণের সবচেয়ে বড় পরিবর্তন ঘটেছে গতকাল। প্রধান প্রধান মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানি বিশেষ করে তালিকাভূক্ত কোম্পানির মধ্যে যেগুলো ৩০ জুন অর্থবছর শেষ করেছে সেগুলোর দিকেই বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি ছিল বেশি। বাজারের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় অবশেষে মৌলভিত্তিকেই বিবেচনায় নিচ্ছেন তারা। খুবই স্বল্প মূলধনী কয়েকটি কোম্পানি বাদ দিলে গতকাল এগুলোই ছিল লেনদেন ও মূল্যবৃদ্ধিতে বেশ এগিয়ে। এর ফলে একদিকে লেনদেন যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে তেমনি মূল্য হ্রাসের তালিকা বড় হওয়ার পরও সূচকের উন্নতি ধরে রাখছে বাজারগুলো। গতকাল লেনদেনের শুরুতেই ঊর্ধ্বমুখী হতে থাকে বাজারগুলো। দিনের শেষপর্যন্ত তা অব্যাহত থাকে। ঢাকায় আগের দিন লেনদেন শেষ করা সাধারণ সূচকের চার হাজার ৫৫৯ পয়েন্ট থেকে লেনদেন শুরু করে মাত্র ২০ মিনিটের মাথায় সূচকটি ১০০ পয়েন্ট বৃদ্ধি পায়। সকাল পৌনে ১১টায় পৌঁছে যায় চার হাজার ৬৬০ পয়েন্টে। এ পর্যায়ে কিছুটা সময় সূচক স্থির থাকলেও আরো ঊর্ধ্বমুখী হতে থাকে বাজার। প্রায় তিন ঘণ্টা এ প্রবণতা অব্যাহত থাকলে বেলা দেড়টার দিকে ডিএসই সূচক পৌঁছে যায় চার হাজার ৬৯৮ পয়েন্টে। তবে দিনশেষে আবার কিছুটা নিম্নœমুখী হয়ে চার হাজার ৬৮৮ পয়েন্টে স্থির হয় ডিএসই সূচক। এভাবে ১২৪ পয়েন্ট বৃদ্ধি পায় সূচকটি। সংশ্লিষ্টরা গতকালের বাজার আচরণকে বিনিয়োগকারীদের আস্থাশীলতা বৃদ্ধির লক্ষণ হিসেবে দেখছেন। তাদের মতে, বিভিন্ন কারণে দীর্ঘ সময় ধরে পুঁজিবাজারে আস্থাহীনতা বিরাজ করছিল। গত দুই-তিন মাস থেকে তার ওপর উপসর্গ হিসেবে যোগ হয় রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা যা আস্থাহীনতার মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফল সরকার ও বিরোধী দল উভয়কে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সরিয়ে আনে। এর ফলে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার উপশম হতে পারে মনে করছেন সবাই, যার প্রভাব পড়ছে পুঁজিবাজারে। বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন বাজার এখন কিছু দিন অন্তত স্বাভাবিক আচরণ করতে পারে। এ প্রত্যাশা থেকেই বাজারে অংশগ্রহণ বাড়ছে। এ কথার সাথে একমত পোষণ করেছেন বিনিয়োগকারীরাও। গতকাল একটি মার্চেন্ট ব্যাংকের ট্রেডিং ফোরে কয়েকজন বিনিয়োগকারীর সাথে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে তারা নয়া দিগন্তকে জানান, সামনে ভালো বাজারের প্রত্যাশা থেকেই এখন বাজারে অংশগ্রহণ বাড়ছে। তবে তারা এখনকার বাজার নিয়ে সন্তুষ্ট। কারণ কিছু দিনের মধ্যে মৌলভিত্তিই বিনিয়োগকারীদের বেশির ভাগেই বিবেচনায় থাকছে। এ প্রবণতা বাজারে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে বলে মনে করেন তারা। জ্বালানি, খাদ্য, বীমা ও সিমেন্ট খাত ছিল গতকাল মূল্যবৃদ্ধিতে এগিয়ে। মিশ্র প্রবণতা দেখা গেছে রসায়ন ও সিরামিকস খাতে। অন্য দিকে মূল্যবৃদ্ধির এ দিনেও বিনিয়োগকারীদের সাড়া পায়নি ব্যাংক, নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান মিউচুয়াল ফান্ড ও টেক্সটাইল খাত। বড় ধরনের দরপতনের শিকার হয় এসব খাত। দিনশেষে ঢাকায় লেনদেন হওয়া ২৮৯টি কোম্পানি ও ফান্ডের মধ্যে ১৪২টির দাম বাড়লেও কমেছে ১৩১টির দর। ১৬টির দর ছিল অপরিবর্তিত। অন্য দিকে চট্টগ্রামে লেনদেন হওয়া ২১৭টি সিকিউরিটিজের মধ্যে ৮৫টির দাম বাড়ে, ১১৩টির দর কমে এবং ১৯টির দর অপরিবর্তিত থাকে। লভ্যাংশ ঘোষণার রেকর্ড পরবর্তী লেনদেন শুরু করেও গতকাল ডিএসইর শীর্ষস্থান দখল করে নেয় গ্রামীণফোন। আট শতাংশের বেশি মূল্যবৃদ্ধি পেয়ে গতকাল ৬৯ কোটি ৮৮ লাখ টাকায় ৩৪ লাখ ৯৬ হাজার শেয়ার হাতবদল করে কোম্পানিটি। ৫৯ কোটি ২৭ লাখ টাকা লেনদেন করে ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট উঠে আসে লেনদেনের দ্বিতীয় অবস্থানে। ডিএসইর শীর্ষ ১০ কোম্পানির তালিকায় আরো ছিল যমুনা অয়েল, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, তিতাস গ্যাস, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলস, সামিট পূর্বাঞ্চল পাওয়ার, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ ও ওরিয়ন ফার্মা।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button