ডিজিটাল পাসপোর্টে মন্দিরের ছবি নিয়ে বিতর্ক
মেশিন রিডেবল পাসপোর্টে (এমআরপি) বিদ্যমান কান্তজীর মন্দিরের শিল্পকর্ম নিয়ে নতুন বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এই বিতর্কের খবরে দেশের শীর্ষ এক গোয়েন্দা সংস্থা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে পাসপোর্টে জলছাপ আকারে স্থান পাওয়া কান্তজীর মন্দিরের ছবি ও শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের শিল্পকর্মের স্থলে অন্য ছবি সংযোজন করার সুপারিশ করেছে।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফীর হাটহাজারী মাদরাসাকেন্দ্রিক নেতৃবৃন্দ একাধিকবার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন। ওই আলোচনায় এ বিষয়ে আন্দোলন করার মানসিক প্রস্তুতি নিয়েছেন।
এমআরপি’র ১৩ নং পৃষ্ঠায় দিনাজপুরের ঐতিহ্যবাহী কান্তজীর মন্দিরের ছবি এবং ৪১তম পৃষ্ঠায় শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের শিল্পকর্মকে স্থান দেয়া হয়েছে। গোয়েন্দা রিপোর্টে মন্তব্যে বলা হয়েছে, পাসপোর্টে কান্তজীর মন্দিরের জলছাপ থাকায় পবিত্র হজ ও ওমরা পালনে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হতে পারে। এতে সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হতে পারে। অধিকন্তু, এ ধরনের ছবি পাসপোর্টে সন্নিবেশিত করার ফলে মুসলিম দেশগুলোতে নেতিবাচক মনোভাবের সৃষ্টি হওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে যার প্রতিফলন বাংলাদেশীদের এ ধরনের পাসপোর্ট বহন করে বিভিন্ন দেশে গমনাগমনের ওপর অযাচিত বিধি-নিষেধ আরোপের আশঙ্কা রয়েছে।
দ্বিতীয় মন্তব্যে বলা হয়, পাসপোর্টে ৪১তম পৃষ্ঠায় শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের শিল্পকর্মকে স্থান দেয়া হয়েছে। শিল্পকর্মটি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রতিমা সদৃশ হওয়ায় এটিও ভবিষ্যতে বিতর্কের জন্ম দেবে বলে ধারণা করা হয়।
গোয়েন্দা রিপোর্টে আরো জানান হয়, চট্টগ্রাম জেলায় হাটহাজারী উপজেলার দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদরাসাকেন্দ্রিক ইসলামী রাজনৈতিক সংগঠনগুলো এমআরপি’র ১৩ নং পৃষ্ঠায় দিনাজপুরের ঐতিহ্যবাহী কান্তজীর মন্দিরের ছবিকে হিন্দু ধর্মীয় সংস্কৃতির প্রতীক হিসেবে আখ্যায়িত করে সরকারের বিরুদ্ধে হিন্দু ধর্মীয় সংস্কৃতি লালনের অভিযোগ এনে আন্দোলনে অবতীর্ণ হওয়ার জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছে। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ, ইসলামী আন্দোলন, ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফতে মজলিসসহ সমমনা ইসলামী দলগুলো নেতৃত্বে রয়েছে বলেও জানানো হয়েছে।
গোয়েন্দা রিপোর্টে ইসলামী দলগুলোর বক্তব্য আকারে বলা হয়েছে, ইসলামী দলগুলোর অভিমত হলো, বাংলাদেশ একটি মুসলিম রাষ্ট্র। এদেশের ইসলামপ্রিয় হাজার হাজার মুসলিমকে প্রতি বছর পবিত্র হজব্রত পালনের জন্য সৌদি আরবের পুণ্যভূমি পবিত্র কাবার ঘর, মক্কা, মদিনা, আরাফাত ময়দান, মহানবী (সাঃ)-এর রওজা মোবারক ও ছাফা মারওয়া পাহাড়সহ অসংখ্য সাহাবীদের মাজার জিয়ারত করতে হয়। বহি: বাংলাদেশ গমনাগমনকালে প্রতিটি নাগরিকের পাসপোর্ট সঙ্গে রাখতে হয়। মুসলমানদের পবিত্র স্থানগুলোতে জিয়ারত বা প্রবেশকালে পাসপোর্টে সন্নিবেশিত তথা মন্দিরের ছবিকে সঙ্গে নিয়ে গমন করতে হয়। কাজেই সনাতন হিন্দু ধর্মীয় মন্দিরের ছবি বহন করে মুসলমানদের পবিত্র স্থাপনায় প্রবেশ ইসলাম ধর্মীয় মূল্যবোধের ওপর আঘাত। এতে বলা হয়েছে, ইসলামী দলগুলো এ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত প্রকাশ্য কোন বিবৃতি দেয়া বা আন্দোলনের ঘোষণা দেয়নি। তবে পাসপোর্টে কান্তজীর মন্দিরের ছবি স্থান দেয়ার মাধ্যমে সরকার কৌশলে ইসলামী মূল্যবোধের উপর আঘাত হানছে বলে তারা সাধারণ জনতার মনে নেতিবাচক ধারণা দিচ্ছে। এছাড়া, মন্দিরের ছবি সংবলিত পাসপোর্টে সৌদি সরকার ভিসা দিচ্ছে না বা দেবে না বলে তারা অপপ্রচার বা গুজব ছড়াচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এ ধরনের গোয়েন্দা রিপোর্ট পাওয়ার পর নড়েচড়ে বসেছে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহল। তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
এদিকে সৌদি আরবে ডিজিটাল পাসপোর্ট নিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশীদের বিপাকে পড়ার খবর প্রচারিত হয়েছে বেশ কিছু সংবাদ মাধ্যমেও। প্রবাসী বাংলাদেশীদের অনেকের অভিযোগ, ডিজিটাল পাসপোর্টে মূর্তির ন্যায় ছবি থাকাতে সৌদি সরকার নান ঝামেলা করছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারকে জরুরিভাবে উদ্যোগ নেয়ার জন্য সৌদি প্রবাসীদের অনেকে আবেদন জানিয়েছেন।
তবে নতুন ডিজিটাল পাসপোর্ট সম্পর্কে সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদুত মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম বলেন, “আমার কিছু ভাই পাসপোর্ট নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা সম্পর্কে ভুল তথ্য দিয়ে প্রবাসীদের বিভ্রান্ত করছেন এবং একইসঙ্গে দেশের সুনাম ক্ষুন্ন করছেন। এরা অত্যন্ত নিচু মনের মানুষ। এসব বিভ্রান্তি ছড়ানো বন্ধ করে ভালো হয়ে যান আপনারা।”
প্রবাসীদের কাউকে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়ে এবং ডিজিটাল পাসপোর্টের সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরে তিনি বলেন, “এখনো সৌদি আরবের দুই-তিনটি স্থানে নতুন পাসপোর্টের কপি পৌঁছায়নি, তবে আগামী কয়েকদিনের ভেতরে সেগুলো পৌঁছে যাবে এবং সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।”