যুক্তরাষ্ট্রে এবার বাংলাদেশেী কূটনীতিকের বিরুদ্ধে মামলা
গৃহকর্মীকে কম বেতন দেয়ার অভিযোগে ভারতীয় কূটনীতিক দেবযানী খোবড়াগাড়ের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর এবার যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত একজন বাংলাদেশী শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিকের বিরুদ্ধে মামলায় দায়ের করা হয়েছে।
ম্যানহাটান কনসুলেটের কনসাল জেনারেল মনিরুল ইসলাম ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ম্যানহাটান ফেডারেল কোর্টে শুক্রবার মামলাটি দায়ের করেন আরেকজন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মাসুদ পারভেজ রানা।
তিনি অভিযোগ করেন, মনিরুল ও তার স্ত্রী তাদের সাবেক গৃহকর্মীকে বিনা পয়সায় খাটিয়েছেন এবং তার সাথে ‘দাসসুলভ’ আচরণ করেছেন। অথচ মাসে ৩০০০ ডলার বা প্রায় আড়াই লাখ টাকার বেতন দেয়ার প্রলোভন দেয়া হয়েছিল ওই গৃহকর্মীকে।
রানা অভিযোগ করেন, তাকে সকাল সাড়ে ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত কাজ করতে বাধ্য করা হয়। কোনোদিন আরো বেশি কাজ করতে হয় তাকে। প্রতিদিনই এভাবে তাকে কাজ করতে হয়েছে। তাকে ঘুমাতে দেয়া হয়েছে গুদামঘরে অথবা রান্না ঘরে। তাকে কনসুলেটেও পাচক হিসেবে কাজ করতে বাধ্য করা হয়। তিনি অভিযোগ করতে চাইলে মনিরুল তাকে হত্যা করার হুমকি দিতেন।
২০১২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এ মাসের প্রথম দিক পর্যন্ত এভাবে কাজ করেছেন রানা। রানা এজন্য উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, ‘এভাবে প্রতিশ্রুতি দিয়ে রানাকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে আসার পর আসামীরা তাকে দাসসুলভ পরিবেশে কাজ করতে বাধ্য করেন। তাকে নিজের ইচ্ছায়ে বাসার বাইরে যেতে দেয়া হয়নি। তাকে পেটানো ও হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, বাসা ছেড়ে গেলে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে হত্যা করবে। তাকে অন্তত দুবার শারীরিকভাবে মারধর করা হয়েছে। রানার পাসপোর্ট ও ভিসাও তাদের দখলে রাখা হয়।’
মামলায় বলা হয়, গৃহকর্মী রানা বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় এসেছিলেন এটা মনে করে যে তিনি হয়ত তার স্বপ্নের চাকুরি খুঁজে পাবেন। তার সৎ বাবা এ লক্ষেই তাকে মনিরুল ইসলামের কাছে পাঠান। মনিরুলকে অনেক আগে থেকেই চিনতেন রানার সৎ বাবা।
রানা জানান, ২০১২ সালের জুনে মনিরুল-প্রভা দম্পতির বাসায় কাজ করতে আসার আগে তার সম্পদ ও জিনিসপত্র বিক্রি করতে হয়েছিল।
এই কূটনীতিকের বাসায় রানাকে কাজ শুরু করতে হত সকাল ৬.৩০টায় এবং সব খাবার রান্না করতে হত। ঘরদোর মোছা থেকে শুরু করে নিজ হাতে সবার কাপরচোপড় ধোয়া, কাপড় ইস্ত্রি করা ও অ্যাপার্টমেন্ট পরিস্কার রাখতে হত। তাছাড়া তাদের কিশোর ছেলেকেও দেখাশুনা করতে হত। তাকে রাত ১১টা অবধি কাজ করতে হত। মাঝে মাঝে রাত তিনটা পর্যন্তও কাজ করতে হত।
ঐ মামলায় আরও বলা হয়, তাকে ‘বাসি ও উদ্বৃত্ত খাবার’ খেতে হত। তার সব জিনিসপত্র একটা প্লাস্টিকের ব্যাগে রাখতে হয়েছে।
রানা আরও জানান, তিনি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে কোথাও যেতে পারতেন না। মনিরুল তাকে হুমকি দিতেন যে সে যদি এমন কোনো চেষ্টা করা হয় তাহলে তাকে খুন করা হবে অথবা গ্রেপ্তার করা হবে ও বিচার করা হবে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ দূতাবাসের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য এর আগে ভারতীয় কুটনীতিক দেবযানীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল সে তার গৃহকর্মী সংগীতা রিচার্ডকে কম বেতন দিচ্ছেন। মাসে ৪,৫০০ডলার দেয়ার কথা থাকলেও মাসে মাত্র ৫৭৩ ডলার দিতেন। প্রত্যেক সপ্তাহে ১০০ ঘন্টা কাজ করতে হত। কোনো সাপ্তাহিক ছুটি ছিল না। ঘন্টায় ১.২২ ডলারেরও কম বেতন দেয়া হত ঐ গৃহকর্মীকে।
গত ডিসেম্বরে দেবযানীকে গ্রেপ্তার এবং বিবস্ত্র করে দেহ তল্লাশির ঘটনা পুরো বিশ্বে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছিল এবং এ ঘটনা ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে ফাটল ধরিয়ে দেয়। এখনো এর রেশ রয়েছে।
রানার পক্ষে মামলায় লড়ছেন আইনজীবী ডানা সুসম্যান। তিনি দেবযানীর গৃহকর্মী সংগীতার পক্ষেও লড়ছেন।