স্কুল শিক্ষিকা থেকে কোটিপতি হেনরী

henryসাধারণ একজন স্কুল শিক্ষিকা থেকে শত কোটি টাকার মালিক হওয়া যায় তার উদাহরণ সোনালী ব্যাংকের সাবেক পরিচালক ও মহিলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ সম্পাদিকা জান্নাত আরা হেনরী। সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মোতাহার হোসেন তালুদারের পুত্র লাভু তালুকদারের সঙ্গে বিয়ে হয় জান্নাত আরা তালুকদার হেনরীর। এরপর তাকে স্থানীয় সবুজ কানন উচ্চ বিদ্যালয়ে চাকরি নিয়ে দেয়া হয়। স্কুল শিক্ষিকার পাশাপাশি শ্বশুরের হাত ধরে রাজনীতিতে আসেন হেনরী। সে সময় তার কিছুই ছিল না। অথচ বর্তমান সরকারের ৪ বছরে হেনরী শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন।
অনুসন্ধান তথ্যে জানা গেছে, জান্নাত আরা তালুকদার হেনরীর শত কোটি টাকার মালিক হওয়ার বিভিন্ন তথ্য। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন জান্নাত আরা হেনরী বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কাজে আলোচনা সমালোচনায় তার নাম ওঠে এসেছে। হেনরীর শ্বশুর প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা হওয়ার সুবাদে প্রধানমন্ত্রীর আস্থায় আসেন হেনরী। এরপর ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিরাজগঞ্জ সদর আসন থেকে হেনরীকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়া হয়। তাকে মনোনয়ন দিলে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ প্রকাশ্যে তার বিরোধিতা করেন। ওই সময় বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর সুধাসদনের বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর হেনরীর ওপর হামলা করা হয়। নির্বাচনে হেনরী পরাজিত হলেও পুরস্কার স্বরূপ তাকে নিয়োগ দেয়া হয় সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদে। এখান থেকেই জান্নাত আরা হেনরীর উত্থান।
সোনালী ব্যাংকের পরিচালক পদে নির্বাচিত হওয়ার পর ঋণপ্রদান, চাকরি বাণিজ্য, কর্মকর্তাদের পদন্নতি, বদলি, ঋণপ্রদান ও মওকুফ করা বিভিন্ন তদবির বাণিজ্য করে ৪ বছরে হেনরী এখন প্রায় শতাধিক কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। বাড়িতে বসে তিনি তালিকা করে নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্য করতেন। সবকিছুই হতো টাকার বিনিময়ে। টাকা না দেয়ায় অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলি করে দিয়েছেন। এসব কাজের লিয়াজোঁ করার জন্য একজন প্রতিনিধি নিয়োগ করা ছিল। এছাড়া অলিখিতভাবে সোনালী ব্যাংকের সিরাজগঞ্জ প্রধান শাখায় সিবিএ নেতা খন্দকার মনোয়ার হোসেন (জিন্না) তার একান্ত সচিব হিসেবে সার্বক্ষণিকভাবে সরকারি চাকরি ফেলে হেনরীর কাছে থাকতেন। পরিচালকের নাম ভাঙ্গিয়ে সরকারি কাজ ফাঁকিসহ তিনিও অঢেল টাকার মালিক বনে গেছেন। তার মাধ্যমেই কোন শাখার কাকে কোথায় কিভাবে বদলি করতে হবে তা চূড়ান্ত করতেন বলে স্থানীয়ভাবে অভিযোগ রয়েছে।
রাজধানীর রূপনগর আবাসিক এলাকায় ‘রজনীগন্ধা’ নামের বাড়িতে ফ্ল্যাট, ঢাকার উত্তরায় ৫ কাঠার প্লট কিনেছেন। ২০১১ সালের আগস্ট মাসে প্রায় কোটি টাকা মূল্যে একটি টয়োটা ল্যান্ডক্রুসার (ঢাকা মেট্রো ঘ-১১-১৭৫৫) জিপ ও একটি সাদা রঙের প্রাইভেট কার (নম্বর ঢাকা মেট্রো-ঘ-২৭-৩৬০০) কিনেছেন। দুটি গাড়ি তিনি নিজে ব্যবহার করলেও একটি নিজ নামে মালিকানা রয়েছে। সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার গজারিয়া নামক স্থানে ৭ বিঘা জমি (প্রতি শতক ২০ হাজার টাকা মূল্যে) শ্বশুর-শাশুড়ির নামে সখিনা-মোতাহার ফ্লাওয়ার মিলের কাজ শুরু করে বর্তমানে বন্ধ রেখেছেন। সদর উপজেলার সদানন্দপুর এলাকায় তার পৈত্রিক বাড়িতে পিতা আবদুল হামিদের মালিকানায় হেনরীর সহযোগিতায় একটি পাঁচতলা বাণিজ্যিক ভবনের কাজ শেষ পর্যায়ে। বর্তমানে সিরাজগঞ্জে তার শ্বশুরবাড়িতে থাকার জন্য সবকিছু অত্যাধুনিকভাবে সুসজ্জিত করেছেন। তার অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়টি জানাজানি হলে দুর্নীতি দমন কমিশন তার অবৈধ সম্পদের খোঁজে মাঠে নামে।
অথচ ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ার পূর্বে নির্বাচন কমিশনে দাখিলকৃত হলফনামায় নিজ নামে সদানন্দপুর এলাকায় সাড়ে ১৭ শতাংশ কৃষি জমি (৩৪ হাজার ৫শ টাকা মূল্যে), পৌরসভার ভাঙ্গাবাড়ী এলাকায় দশমিক ৩৬ শতাংশ সেমি-পাকাবাড়ি (২ লাখ টাকা মূল্যে), ২০ ভরি স্বর্ণালংকার (মূল্য ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা) নগদ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, বাত্সরিক আয় ১ লাখ ২২ হাজার টাকা এবং স্বামীর নামে কৃষি জমি ৩ বিঘা (২ লাখ টাকা মূল্যের), অকৃষি জমি সাড়ে ৬ শতক (মূল্যে ২ লাখ টাকা), নগদ টাকা ২ লাখ টাকা উল্লেখ করা হয়।
জান্নাত আরা হেনরী সাংবাদিকদের বলেন, সংবাদ মাধ্যমে আমার সম্পর্কে যে, সংবাদ পরিবেশ করা হয়েছে, তা সত্য নয়। আমার কোনো প্রকার অবৈধ সম্পদ নেই। বিভিন্ন পত্রিকায় আমাকে নিয়ে যে সম্পদের বিবরণী লেখা হয়েছে তা মিথ্যা। সূত্র: দৈনিক বর্তমান

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button