চতুর্থ ধাপে উপজেলা নির্বাচন
সিলেটে ৬টি আ’লীগ, ৪টি বিএনপি, স্বতন্ত্র ১টি
সিলেট বিভাগের ১১ উপজেলার মধ্যে ৬টি আওয়ামী লীগ, ৪টিতে বিএনপি ও একটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। সিলেট সদর, কমলগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল, নবীগঞ্জ, লাখাই ও আজমিরীগঞ্জের আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। কানাইঘাট, মৌলভীবাজার সদর, ধর্মপাশা ও শাল্লা উপজেলায় বিজয়ী হয়েছেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী। আর হবিগঞ্জ সদর উপজেলায় বিজয়ী হয়েছেন-স্বতন্ত্র প্রার্থী আহমেদুল হক। রোববার এসব উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
সিলেট সদর: সিলেট সদর উপজেলায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত আশফাক আহমদ ৪৪ হাজার ৩৪১ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম বিএনপির বিদ্রোহী আবুল কাহের শামীম পেয়েছেন ৩০ হাজার ৩৪৮ ভোট। আর ১৯ দল সমর্থিত বিএনপি প্রার্থী শাহ জামাল নূরুল হুদা পেয়েছেন ১৮ হাজার ৫৩৯ ভোট। সদরে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছে জামায়াতের জৈনুদ্দিন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হয়েছেন দিলারা হাসান।
কানাইঘাট: চেয়ারম্যান পদে বিএনপি সমর্থিত আশিক উদ্দিন চৌধুরী মোটর সাইকেল প্রতীক নিয়ে ২৭ হাজার ৫শ ৪০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের নিজাম উদ্দিন আল-মিজান ঘোড়া প্রতীক নিয়ে ২১ হাজার ২শ ৭৪ ভোট পান। পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে জমিয়ত নেতা মাওলানা আলীম উদ্দিন চশমা প্রতীক নিয়ে ২৩ হাজার ৭শ ৬২ পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামীলীগ সমর্থিত জাহাঙ্গীর আলম রানা ২২ হাজার ৫শ ৩৩ ভোট পেয়েছেন। পৌরসভার শিবনগর দারুল ক্বোরআন মাদ্রাসা কেন্দ্রের একটি বুথ থেকে নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার ৫ মিনিট পর ব্যালট পেপার ভর্তিসহ একটি ব্যালট বাক্স দুর্বৃত্তরা ছিনিয়ে নেওয়ায় এ কেন্দ্রের ফলাফল বন্ধ ঘোষণা করেন সহকারী রিটার্নিং অফিসার তারেক মোহাম্মদ জাকারিয়া। এ কেন্দ্রের ভোট সংখ্যা ৩ হাজার ৩শ টি। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামায়াত সমর্থিত মোছাঃ মরিয়ম বেগম পদ্মফুল প্রতীক নিয়ে ২৬ হাজার ২শ ৭১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রুবি রাণী চন্দ কলস প্রতীক নিয়ে ১৪ হাজার ৭শ ২৮ ভোট।
মৌলভীবাজার সদর: চেয়ারম্যান পদে বিএনপির প্রার্থী মিজানুর রহমান মিজান ৪৩,২৪৪ ভোট পেয়ে বেসরকারী ভাবে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামীলীগের প্রার্থী মুহিবুর রহমান তরফদার নিয়ে পেয়েছেন ৩১,১৭৯ ভোট।
এছাড়া, ভাইস চেয়ারম্যান পুরুষ পদে চশমা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন আলাউর রহমান । তিনি ভোট পেয়েছেন ৫৭ হাজার ৭১৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তারিকুল হামিদ পেয়েছেন ২১ হাজার ৭৭৪ ভোট। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে পদ্মফুল প্রতীক নিয়ে শাহীন রহমান বিজয়ী হন। তিনি পেয়েছেন ৬৬ হাজার ৯৬৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রাশেদা খান পেয়েছেন ১৩ হাজার ৫৫৭ ভোট
কমলগঞ্জ থেকে সুব্রত দেব রায় সঞ্জয় জানান, অধ্যাপক রফিকুর রহমান (আওয়ামীলীগ) আনারস প্রতীক নিয়ে ৪৫ হাজার ৪শ’ ৭৯ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হাজী শামীমুর রহমান (বিএনপি) মোটর সাইকেল প্রতীক নিয়ে পেছেন ৪২ হাজার ৬শ’ ৬৪ ভোট। ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ ছিদ্দিকুর রহমান (আওয়ামীলীগ) তালা প্রতীক নিয়ে ১৭ জাহার ৯শ’ ৬২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী গোপাল নুনিয়া টিউবওয়ের প্রতীকে পেয়েছেন ১৫ হাজার ৯শ’ ১ভোট।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে পারভীন আক্তার লিলি (বিএনপি) ফুটবল প্রতীক নিয়ে ৩৪ হাজার ৯শ’ ৪৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী গীতারাণী কানু পদ্মফুল পেয়েছেন ২৬ হাজার ৩শ’ ৬২ ভোট।
শ্রীমঙ্গল থেকে আব্দুল হাই ডন জানান, চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগ প্রার্থী রনধীর কুমার দেব আনারস প্রতীক নিয়ে ৪৭ হাজার ৮৮২ ভোট পেয়ে বেসরকারী ভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন বি এনপি প্রার্থী আলহাজ্ব আতাউর রহমান লাল হাজী ঘোড়া প্রতীক নিয়ে ২৪ হাজার ৫৬৪ ভোট পেয়েছেন ।
হবিগঞ্জ থেকে মনসুর আহমদ ইকবাল জানান, হবিগঞ্জ সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ আহমদুল হক। তিনি ঘোড়া প্রতীকে ৪৩ হাজার ২শ’ ৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামীলীগের মোতাচ্ছিরুল ইসলাম। তিনি আনারস প্রতীক নিয়ে ভোট পেয়েছে। ৩০ হাজার ৯শ’ ৩৫। ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মাহবুবুর রহমান আউয়াল। তালা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হন। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগের ফেরদৌস আরা বেগম ফুটবল প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হন।
এছাড়া, আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো: আতর আলী। তিনি মোটর সাইকেল প্রতীকে ১৬ হাজার ৩শ’ ১১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী ছিলেন আওয়ামীলীগের সমর্থিত প্রার্থী মিসবাহ উদ্দিন ভূইয়া। তিনি কাপ-পিরিচ প্রতীকে ১৩ হাজার ৮শ’ ১৯ ভোট পেয়েছেন। ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মো: আব্দুল হাই টিউবওয়েল প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হন। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী রোকসানা আক্তার হাঁস প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হন।
লাখাই থেকে রফিকুল ইসলাম জানান, লাখাই উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগ সমর্থিত মুশফিউল আলম আজাদ নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ঘোড়া প্রতীক নিয়ে ১৯৩৪২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী ছিলেন আওয়ামীলীগের আবুল হাসেম মোল্লা মাসুম। তিনি দোয়াত কলম প্রতীক নিয়ে ভোট পেয়েছেন ১৮ হাজার ৮৬ ভোট। ভাইস চেয়ারম্যান পদে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মুর্শেদ কামাল নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি টিউবওয়েল প্রতীক নিয়ে ১৬ হাজার ৩শ’ ৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আমিনুল ইসলাম আলম। তালা প্রতীক নিয়ে ভোট পেয়েছেন ১৩ হাজার ২শ’ ৯৯ ভোট। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ফয়জুন্নেসা। তিনি ফুটবল প্রতীক নিয়ে ভোট পেয়েছেন ১৯ হাজার ৭শ’ ১০। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি ছিলেন আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থী স্বপ্না রানী আচার্য্য হ্যাপী। তিনি কলস প্রতীক নিয়ে ভোট পেয়েছেন ১৩ হাজার ৪শ’ ১১ ভোট।
আনোয়ার হোসেন মিঠু নবীগঞ্জ ও রাকিল হোসেন ইনাতগঞ্জ থেকে: চতুর্থ দফা নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ ও মহাজোট প্রার্থী হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আলমগীর চৌধুরী (দোয়াত-কলম) বিপুল ভোটে বেসরকারী ভাবে জয় লাভ করেছেন। তার প্রাপ্ত ভোট হচ্ছে ৪২ হাজার ৪৩ ভোট।তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক ও ১৯ দল সমর্থিত প্রার্থী মুজিবুর রহমান সেফু (চিংড়ি) পেয়েছেন ৩৩ হাজার ২শ’ ৩১ ভোট। ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) পদে উপজেলা জামায়াতের আমীর ও ১৯ দল সমর্থিত প্রার্থী মাওলানা আশরাফ আলী(টিউবওয়েল) ৪২ হাজার ৮শ’ ৮০ ভোট পেয়ে বেসরকারী ভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী উপজেলা আওয়ামলিীগের সদস্য সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আক্তার মিয়া ছুবা পেয়েছেন ৩০ হাজার ৩৫ ভোট। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী নবীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের শিক্ষিকা নাজমা আক্তার (হাঁস) ৭৬ হাজার ৪৭ ভোট পেয়ে সেবরকারী ভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি আওয়ামীলীগের দিলারা হোসেন (ফুটবল) পেয়েছেন ২০ হাজার ১শ’ ৯১ ভোট। বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শিরিন আক্তার কলস প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ১০ হাজার ৯শ’ ৬ ভোট। গতকাল রবিবার রাতে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান আনুষ্ঠানিক ভাবে ফলাফল ঘোষনা করেন।
শাল্লা থেকে হাবিবুর রহমান জানান: উপজেলা নির্বাচনে শাল্লার চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান পুরুষ ও মহিলা পদে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। গতকাল রাতে বেসনকারী ভাবে ঘোষিত ফলাফলে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন গণেন্দ্র চন্দ্র সরকার। তিনি আনারস প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ২০ হাজার ৮শ’ ২৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতদ্বন্দ্বী সরকার দল সমর্থিত প্রার্থী আর আমিন চৌধুরী ঘোড়া প্রতীকে পেয়েছেন ১৭ হাজার ৫শ ৯৪ ভোট। ভাইস চেয়ারম্যান পুরুষ পদে বিএনপির মাহবুব হোবাহানী চৌধুরী ১৭ হাজার ৪শ’ ৫৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তরিন্দম চৌধুরী অপু তালা প্রতীকে পেয়েছেন ১৫ হাজার ৩শ’ ৯০ ভোট। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপি সমর্থিত রেজিয়া বেগম কলসী প্রতীকে নিয়ে ১৮ হাজার ২শ ৭৬ ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামীলীগ সমর্থিত রাণী দাস প্রজাপতি প্রতীকে পেয়েছেন ১৫ হাজার ৫শ’ ৩৩ ভোট।
ধর্মপাশা থেকে গিয়াস উদ্দিন রানা জানান: ধর্মপাশা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বেসরকারী ফলাফলে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। চেয়ারম্যান পদে আব্দুল মোতালিব খান দোয়াত কলম প্রতীকে ৩২ হাজার ৯শ’ ৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছে। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থী শামীম ্আহমেদ মুরাদ ঘোড়া প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৩১ হাজার ২শ’ ২৫ ভোট। ভাইস চেয়ারম্যান পুরুষ পদে বিএনপি সমর্থিত মোশাহিদ তালুকদার ৩৬ হাজার ১শ’ ৩৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থী নির্মল দেবনাথ পেয়েছেন ১৫ হাজার ৪শ’ ২৩ ভোট। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপির সামছুন্নাহার শিল্পী হাঁস প্রতীকে ৫৪ হাজার ৫শ ৪৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সরকার দল সমর্থিত রেখা রাণী সরকার ১১ হাজার ৪শ ৮২ ভোট পেয়েছেন। রাত ১টার দিকে সহকারী রিটানিং অফিসার ও ধর্মপাশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ খালিদুর রহমান এ ফলাফল ঘোষণা করেন।