সিলেট সদরে বিএনপির পরাজয়ের নেপথ্যে
১৯ দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের শিকার হলেন সিলেট সদরে বিএনপি দলীয় প্রার্থী শাহজামাল নুরুল হুদা। শেষ পর্যায়ে এসে দলীয় সমর্থন পেলেও বিএনপির একাংশের ভোট না পাওয়ায় ভাগ্য বিপর্যয় হয়েছে তার। জয় তো দূরের কথা, দ্বিতীয় স্থানও জোটেনি নুরুল হুদার। তৃতীয় স্থানে থেকে নির্বাচনী রেশ শেষ করেছেন এ বিএনপি নেতা। আওয়ামী লীগ প্রার্থী জয়ী হওয়ার বিপরীতে দ্বিতীয় হয়েছেন বিএনপিরই বিদ্রোহী আবুল কাহের শামীম।
শুরুতে অবশ্য বিএনপির সমর্থন পেয়েছিলেন তিনি। বহিষ্কার করা হয়েছিল নুরুল হুদাকে। পরে নুরুল হুদাকে সমর্থন দিয়ে বহিষ্কার করা হয় আবুল কাহের শামীমকে। তবে দুই প্রার্থী না থাকলে বিএনপি প্রার্থীই যে জয়ী হতো ভোটের হিসাবে তা পরিষ্কার। সিলেট সদরে বিএনপির দুই প্রার্থী আবুল কাহের শামীম ও শাহজামাল নুরুল হুদা এক সঙ্গে মিলিয়ে পেয়েছেন প্রায় ৫০ হাজার ভোট। আর আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী আশফাক আহমদ পেয়েছেন ৪৫ হাজার ভোট।
বিএনপির তৃণমূলের নেতারা জানিয়েছেন, আগে থেকেই এখানে একক প্রার্থী দিয়ে তার পক্ষে ১৯ দলের নেতারা মাঠে নামলে জয় ঘরে তোলা সম্ভব হতো। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিনের সমর্থন ছিল আবুল কাহের শামীমের প্রতি। এ কারণে শুরুতে তাকে দলীয় সমর্থন দেয়া হয়। কিন্তু আবুল কাহের শামীমকে চ্যালেঞ্জ করে বিএনপি থেকে আরও তিনজন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামেন। এরা হলেন- সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, সিলেট সদর উপজেলা বিএনপির বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি শাহজামাল নুরুল হুদা ও সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুশ শহীদ চেয়ারম্যান। ফলে সিলেট সদর উপজেলায় একক প্রার্থী বাছাই নিয়ে বিএনপি শুরু থেকেই পড়ে বেকায়দায়। দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়েন এখানকার ভোটাররাও। স্থানীয়ভাবে বেশ কয়েক দফা বৈঠক হলেও সদরে একক প্রার্থী মনোনীত করা সম্ভব হয়নি। পরে চার প্রার্থীকে ঢাকায় ডেকে নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা আবুল কাহের শামীমকে বিএনপির প্রার্থী সমর্থন করে তার পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাদের নির্দেশ দেন। তবে, সিলেটে ফিরে আব্দুর রাজ্জাক ও আব্দুশ শহীদ চেয়ারম্যান পদে সদর বিএনপির সাবেক সভাপতি শাহজামাল নুরুল হুদাকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। ফলে সিলেট সদরে আওয়ামী লীগ থেকে একক প্রার্থী আশফাক আহমদ হলেও বিএনপি থেকে আবুল কাহের শামীম ও শাহজামাল নুরুল হুদা ভোটযুদ্ধে রয়ে যান। ওদিকে জামায়াতে ইসলামী তাদের প্রার্থী জালাল আহমদকে ভোটের মাঠ থেকে সরিয়ে নেয়। এই অবস্থায় বিএনপির একক প্রার্থী সমর্থনে আবুল কাহের শামীমের পক্ষ নেন কেন্দ্রীয় বিএনপি। দলের সিদ্ধান্ত না মেনে নির্বাচন করায় দল থেকে বহিষ্কার করা হয় শাহজামাল নুরুল হুদাকে। এই সিদ্ধান্তের পর বিএনপির একটি অংশ নুরুল হুদাকে নিয়ে ভোটের মাঠে আরও বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে। তবে, শুরু থেকেই এ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী কারও পক্ষে সমর্থন দেয়নি।
সিলেট জামায়াতের এক নেতা বলেন, তারা জোট প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে প্রার্থী সরিয়ে নেন। ওদিকে, সিলেট সদর নির্বাচনে প্রথম দিকে জোট প্রার্থী হিসেবে আবুল কাহের শামীম থাকলেও নির্বাচনের চার দিন আগে নাটকীয় ঘোষণা আসে ঢাকা থেকে। আবুল কাহের শামীমকে বাদ দিয়ে সিলেট সদর উপজেলায় শাহজামাল নুরুল হুদাকে ১৯ দলের প্রার্থী হিসেবে সমর্থন দেয়া হয়। একই সঙ্গে শাহজামাল নুরুল হুদার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে আবুল কাহের শামীমকেই দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। তবে কাহের শামীম শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করেন।
ভোটের ফলাফলে দেখা গেছে, তিনি পেয়েছেন ৩০ হাজার ৯১ ভোট। আর জোট মনোনীত প্রার্থী শাহজামাল নুরুল হুদা পেয়েছেন প্রায় ১৯ হাজার ভোট। দুই প্রার্থী মিলিয়ে যে ভোট পেয়েছেন সেই ভোট থেকে জয়ী প্রার্থী আশফাক আহমদের ভোট প্রায় ৫ হাজার কম। বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে দুই প্রার্থীর ভোট ভাগাভাগির কারণে একক প্রার্থী দিয়ে জয় ঘরে তুলে নেয় আওয়ামী লীগ। ভোটের পর সিলেটের রাজনৈতিক অঙ্গনে এ নিয়ে তোলপাড় চলছে। তবে, সিলেট সদর উপজেলা নির্বাচনে চমক দেখিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। বিএনপির একাংশের দাবি, সিলেট সদরে জামায়াতের ভূমিকার কারণে এগিয়ে গেছেন বিদ্রোহী প্রার্থী আবুল কাহের শামীম। জামায়াত দক্ষিণ সুরমার প্রতিশোধ নিতেই শামীমের পক্ষে নীরব সমর্থন জানিয়েছে। এদিকে, পুরুষ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে জয় ঘরে তুলেছে জামায়াতে ইসলামী। জামায়াত নেতা জৈনউদ্দিন বিএনপির প্রার্থী আবুল কাশেমকে পরাজিত করে বিজয়ী হয়েছেন। নির্বাচনে জৈনউদ্দিন পেয়েছেন ২৫ হাজার ৭৭৪ ভোট। আর আবুল কাশেম পেয়েছেন ২১ হাজার ৮২০ ভোট। আওয়ামী লীগ সমর্থিত উস্তার আলী পেয়েছেন ৮৪৬২ ভোট। ভাইস চেয়ারম্যান মহিলা পদে জামায়াতের দিলারা হাসান ৩৪ হাজার ৮৩৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মনি বেগম পেয়েছেন ২২ হাজার ৪৫১ ভোট। এ নির্বাচনের শুরু থেকেই জামায়াতে ইসলামী চেয়ারম্যান পদ নিয়ে কোন আগ্রহ দেখায়নি। এ কারণে পুরুষ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নিয়ে তারা ভোটের মাঠে কাজ শুরু করেন। শেষ পর্যন্ত দু’টিতেই চমক দেখিয়ে জয় পায় জামায়াত। -মানবজমিন