মুরসি ভালো আছেন
মিসরের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি ভালো আছেন বলে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের পর জানিয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান ক্যাথেরিন অ্যাস্টন। এই প্রথম কোনো বিদেশিকে মুরসির সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি দিলেন দেশটির সেনা-সমর্থিত অন্তর্বর্তী শাসকেরা। এদিকে মুরসিকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ফ্রান্স। মিসরের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রথম প্রেসিডেন্ট মুরসিকে ৩ জুলাই ক্ষমতাচ্যুত করে দেশটির সেনাবাহিনী। তাঁকে অজ্ঞাত স্থানে আটকে রাখা হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী ও মুরসিবিরোধী পক্ষের সঙ্গে মুরসির সমর্থকদের সংঘর্ষে ৩ জুলাইয়ের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৩০০ ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে গত শনিবার সবচেয়ে বড় সহিংসতায় মুরসিপন্থী বিক্ষোভকারীদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনী গুলি চালালে এক শর কাছাকাছি ব্যক্তি নিহত হন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ইইউর শীর্ষ কূটনীতিক ক্যাথারিন অ্যাস্টন উভয় পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতা করতে কায়রো সফরে যান। এখন পর্যন্ত একমাত্র অ্যাস্টনকেই উভয় পক্ষ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে গ্রহণ করেছে।
মুরসির সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ দিতে অ্যাস্টনকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। মঙ্গলবার সকালে সেখানে তিনি মুরসির সঙ্গে দুই ঘণ্টা ধরে কথা বলেন। অ্যাস্টন বলেন, ‘আমরা বন্ধুত্বপূর্ণভাবে, খোলামেলা আলোচনা করেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি এ বিষয়টি নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছি যে মুরসির পরিবারকে যেন বলা যায় তিনি ভালো আছেন।’ অ্যাস্টন জানান, মুরসিকে টেলিভিশন দেখতে ও পত্রিকা পড়তে দেওয়া হচ্ছে। দেশের চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি অবগত আছেন। অ্যাস্টন জানিয়েছেন, মিসরে সফরে আসার বিষয়ে তাঁর পূর্বশর্তই ছিল মোহাম্মদ মুরসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে দেওয়া। মুরসি ছাড়াও তিনি দেশটির সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসিসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। মিসরের সেনা-সমর্থিত বর্তমান শাসকেরা অ্যাস্টনকে কেন মুরসির সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ দিলেন তা নিয়ে গণমাধ্যমে নানা অনুমান চলছে। খবরে এমনও বলা হচ্ছে, মুরসি তাঁর প্রেসিডেন্ট পদ ফিরে পাওয়ার দাবি থেকে সরে গেলে তাঁকে ‘নিরাপদে দেশ ছাড়ার’ প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিলেন অ্যাস্টন।
ইইউ কর্মকর্তা এমন খবরের সত্যতা নাকচ করে দিয়েছেন। অ্যাস্টন এও জানিয়েছেন, তাঁকে কোথায় নিয়ে গিয়ে মুরসির সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়, সেটাও তিনি জানেন না। মুসলিম ব্রাদারহুডের সদস্যসহ মুরসি-সমর্থকেরা কায়রোর রাবা আল-আদাউইয়া মসজিদের কাছে টানা অবস্থান নিয়ে মুরসিকে ক্ষমতায় পুনর্বহাল করার দাবি জানিয়ে আসছে। অন্যদিকে দেশটির ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দলগুলোর জোট ন্যাশনাল স্যালভেশন ফ্রন্টসহ একটা অংশ সেনাবাহিনীর পদক্ষেপকে সমর্থন দিচ্ছে। ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লরাঁ ফ্যাবিয়াস মিসরের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে ‘খুবই সংকটময়’ উল্লেখ করে মঙ্গলবার বলেছেন, ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মুরসিকে মুক্তি দিতে হবে। তিনি প্যারিসে সাংবাদিকদের বলেন, ফ্রান্স সহিংসতা প্রত্যাখ্যান করতে এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট মুরসিসহ সব রাজনৈতিক বন্দীকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানায়।