সৌদি আরব সফরে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা
দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথমবারের মতো সৌদি আরব সফরে গেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। ভ্যাটিকান সিটিতে ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের প্রধান চার্চ পরিদর্শনের পর শুক্রবার সৌদি আরবে পৌঁছান তিনি।
ঐতিহাসিক এই সফরে উপসাগরীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা, সিরিয়া, ইরান ও মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি এবং মিশরের রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে আলোচনা হবে বলে ওয়াশিংটনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ৯০ বছর বয়সী সৌদি বাদশা আব্দুল্লা রাজপরিবারের কর্মকর্তাদের নিয়ে রাজধানী রিয়াদের পাশে ডেজার্ট ফার্মে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকের শুরুর দিকে বয়োবৃদ্ধ সৌদি বাদশা অক্সিজেন টিউব দিয়ে শ্বাস নিচ্ছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুসান রাইস ওবামার সফর সঙ্গী হিসেবে ছিলেন। তবে তারা বৈঠকের বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে কোনো মন্তব্য করেন নি।
সিরিয়ায় চলমান গৃহযুদ্ধে প্রেসিডেন্টে আসাদ বিরোধীদের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের স্পষ্ট অবস্থান নেয়ার বিষয়ে দাবি জানিয়ে আসছিলো সৌদী আরব। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র যাতে এসব বিদ্রোহীদের ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপনযোগ্য মিসাইল সরবরাহ করে, সে ব্যাপারে সৌদি আরবের অবস্থান দৃঢ়।
সিরিয়ার শিয়া মতাবলম্বী প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সমর্থনে রয়েছে ইরান। আর ইরানের প্রতিপক্ষ সৌদি আরব রয়েছে সুন্নি মতে বিশ্বাসী বিদ্রোহীদের পক্ষে। রাজতান্ত্রিক শাসনের মধ্যে থাকা সৌদি আরব মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাবের ঘোর বিরোধী।
উল্লেখ্য, মধ্যপ্রাচ্যে সাম্প্রতিক মার্কিন নীতি নিয়ে সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে তিক্ততা শুরু হয়েছে। আর এই তিক্ততার প্রশমনে সৌদি আরব সফর করছেন বারাক ওবামা।
মিসর, সিরিয়া ও ইরান ইস্যুসহ মধ্যপ্রাচ্যের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে টানাপোড়েন চলছে দীর্ঘদিনের মিত্র সৌদি আরবের।
রিয়াদে ওবামার সফর তাদের মধ্যে মতপার্থক্য কমই কমাতে পারবে বলে জানাচ্ছেন বিবিসির ওয়াশিংটন প্রতিনিধি কিম ঘাট্টাস। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি কর্মকর্তারা এটাকে গুরুত্বপূর্ণ সফর বলেই খালাস। কিন্তু কী আলোচনা হবে এবং বিরোধ কীভাবে মেটাবে এ নিয়ে কোনো কথা বলছেন না।
এর আগে ২০০৯ সালেও এমন একটি সফরে গিয়েছিলেন বারাক ওবামা। মিসরে আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতাও দিয়েছিলেন তিনি। তখন ওবামার বক্তৃতা নিয়ে অনেক আশার সৃষ্টি হয়েছিল। এখন অবস্থা ভিন্ন। মধ্যপ্রাচ্য তীব্র সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। সিরিয়াতে গৃহযুদ্ধে লক্ষাধিক লোক নিহত হয়েছে। আরো কয়েক লাখ শরণার্থী নিয়ে ব্যাপক সমস্যা চলছে।
এদিকে, মিসরে সংকট যেন বাড়ছেই। সেনা অভ্যুত্থানে প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে হটিয়ে ক্ষমতার মসনদ নিশ্চিত করছেন জেনারেল সিসি। গত কয়েক দিনে কয়েকশ’ ব্রাদারহুড সমর্থক ও ইসলাপন্থিকে একসঙ্গে মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়ে দেখিয়ে দেয়া হচ্ছে সরকারবিরোধীদের কঠিন সময় অপেক্ষা করছে।
মিসর, সিরিয়া, ইরান এবং উপসাগরীয় অঞ্চলটিতে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সৌদি ও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের মধ্যে সম্পর্কের স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি অবনতি ঘটেছে। এ অবস্থায় ওবামার সৌদি সফর কতটুকু কাজ দিবে তা নিয়ে মার্কিন প্রশাসনও নিশ্চিত নয়।
প্রেসিডেন্টের ডেপুটি নিরাপত্তা উপদেষ্টা বেন রোডস্ এটা স্বীকার করেছেন যে দুটি দেশের মধ্যে মতভিন্নতা চলছে।
গত মঙ্গলবার হোয়াইট হাউস থেকে বিবৃতি দেয়া হয়, এক আমেরিকান সাংবাদিককে ভিসা দিতে অস্বীকৃতি জানানোর ঘটনায় তারা ‘খুবই হতাশ’। ওই সাংবাদিক ওয়াশিংটন ভিত্তিক জেরুজালেম পোস্টে কাজ করেন।
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুসান রাইসের অনেক অনুরোধের পরও রিয়াদ কর্তৃপক্ষ এতে কর্ণপাত করেনি।
প্রেসিডেন্ট ওবামার সফর কী এই দীর্ঘদিনের মিত্র দুটি দেশের মধ্যে বরফ গলতে সাহায্য করবে এ নিয়ে কোনো পরিষ্কার ধারণা দিতে পারেনি কোনো দেশেরই সরকারি কর্মকর্তারা।