মৃত্যুপথযাত্রী এক মাদকাসক্ত ব্রিটিশ মহিলার বাঁচার আকুতি
মাদক সেবন মানুষের জীবন ধ্বংস করে দেয়। অদৃশ্য নেশার বন্ধন থেকে মুক্তি পাওয়া দুঃসাধ্য। তিলে তিলে মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। প্যাট্রিসিয়া মার্ফি হলেন এমনি এক হতভাগ্য মহিলা। তিনি লন্ডনের সারের চেসিংটনের বাসিন্দা। তিনি লিভার সিরোসিসে ভুগছেন। মৃত্যু তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। এ পরিণতির জন্য একান্তভাবে তিনিই দায়ী। তিনি চান না আর কোনো নারী তার মতো মাদকাসক্ত হয়ে সুন্দর জীবনটা নষ্ট করে দিক। বুধবার লন্ডনের ডেইলি মেইলে প্যাট্রিসিয়া মার্ফির এ মর্মান্তিক উপাখ্যান প্রকাশিত হয়।
প্যাট্রিসিয়া মার্ফির বয়স ৪৫ বছর। একদিন তিনি মডেল হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। একজন মহিলাকে প্রতিদিন দুই থেকে তিন ইউনিট এবং সপ্তাহে ১৪ ইউনিটের বেশি এলকোহল গ্রহণের অনুমতি দেয়া হয় না। কিন্তু প্যাট্রিসিয়া মার্ফি প্রতিদিন ৫ বোতল মদ পান করতেন। দীর্ঘ ২৫ বছর সপ্তাহে তিনি সাড়ে তিন শ’ ইউনিট মদ পান করেন। তবে ৭ মাস হলো তিনি নিজেকে সংযত করেছেন। স্কুল ছাড়ার পর ১৭ বছর বয়স থেকে মদ পান শুরু করেন। বিক্রয় প্রতিনিধি হিসাবে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ৩৫ বছর বয়সে এক পানশালায় প্রকৌশলী গ্রাহামের সঙ্গে তার দেখা হয়। গ্রাহামের কাছে তিনি তার মাদকাসক্তি লুকানোর চেষ্টা করেননি। দু’জনে ঘর বাঁধেন। ২০১২ সালের নভেম্বরে গ্রাহাম তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। ডাক্তার তাকে অনেকগুলো পরীক্ষা দেন। তার লিভার সঠিকভাবে কাজ করছিল না। তিনি লিভার সিরোসিসে ভুগছেন। তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। ১০ সপ্তাহ তিনি হাসপাতালে ছিলেন। হাসপাতাল থেকে মুক্তি পেয়ে প্রথমেই তিনি কেনেন মদ। তার হয়তো লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করার প্রয়োজন হবে।
স্বভাবে লাজুক প্যাট্রিসিয়া শিগগির প্রতি সপ্তাহে ১০ বোতল ডাবল ব্রান্ডি ও কোক সেবন শুরু করেন। প্রতি রাতে তিনি সহকর্মীদের সঙ্গে মদ খেতেন। কখনো কখনো এক লিটার ব্রান্ডি পান করতেন। ২৮ বছর বয়সে মাত্র পাঁচ মাসের ব্যবধানে তার পিতামাতা দু’জনই মারা যান। পিতামাতার মৃত্যু শোক ভুলতে তিনি এলকোহলে ডুবে যান। এলকোহল তার যন্ত্রণা ভোঁতা করে দিতো। ভোরে এক গ্লাস মদ দিয়ে তার দিনটা শুরু হতো। এভাবে সারাদিন চলতো। তিনি বসবাস করতেন একা। তাই তাকে থামানোর জন্য কেউ ছিল না। মদ পানে আসক্ত হওয়ায় তিনি চাকরি হারান। মদ খেয়ে চুর হয়ে পড়ে থাকায় তিনি সময়মতো অফিসে যেতে পারতেন না। রুটিন মানতেন না।
প্যাট্রিসিয়া তার অধঃপতন বুঝতে পারতেন। কিন্তু তিনি ছিলেন নিজের কাছে অসহায়। মাঝ রাতে জেগে উঠতেন। কাঁপতেন। শরীরে ঘাম ঝরতো। মদ কেনার জন্য তিনি তার সব অর্থ ও সময় ব্যয় করেন। সারাদিন টিভি দেখে কাটাতেন। হতাশায় ভুগতেন। তার কোনো সন্তান নেই। গত বছরের নভেম্বরে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। লাইফ সাপোর্টে রাখার সময় স্বামী গ্রাহামকে ডাক্তাররা জানান যে, তার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা মাত্র ৫ শতাংশ। একজন পুরোহিত তাকে শেষ মন্ত্র পাঠ করাতে আসেন। এ সুন্দর পৃথিবীর জন্য প্যাট্রিসিয়ার দুঃখ হয়। অভিশপ্ত মদপানে আসক্ত না হলে হয়তো তিনি আরো বহু বছর বেঁচে থাকতেন।