বৃটিশ পার্লামেন্টে বাংলাদেশ বিষয়ক সেমিনার
তানজির আহমেদ রাসেল: বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট সমাধানে প্রধান দুই দলের কাছে গ্রহণযোগ্য পদ্ধতিতে একটি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রয়োজন। বাংলাদেশে এখন একটি নির্বাচন প্রয়োজন তবে তা হতে হবে প্রধান দুই দলের সমঝোতা ও সংলাপের ভিত্তিতে। সোমবার বৃটিশ পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষ হাউস অব লর্ডসে এক সেমিনারে অলপার্টি পার্লামেন্টারী গ্রপের কো-চেয়ার লর্ড এ্যাভুবারী এসব কথা বলেন।
স্থানীয় সময় সকাল ১১ টায় হাউস অব লর্ডসে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ : শান্তি, গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং আইনের শাসন’ শীর্ষক এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে বাংলাদেশের বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা, সহিংসতা মানবাধিকার,আইনের শাসন ও গণতন্ত্রের উন্নয়নে একটি গ্রহনযোগ্য নির্বাচনের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়। স্থানীয় সময় ১১ টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত দুই ঘন্টা ব্যাপী সেমিনারে আওয়ামী লীগের পক্ষে অংশ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, অর্থ বিষয়ক উপদেষ্টা ড.মশিউর রহমান, সংসদ সদস্য তারানা হালিম এবং বীর বাহাদুর।
বিএনপি’র পক্ষে ছিলেন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা সাবিউদ্দিন চৌধুরী, পিয়াস করিম, এডভোকেট আসাদুজ্জামান। গত ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বাংলাদেশের প্রধান দুটি দলের প্রতিনিধিদের এটাই প্রথম মুখোমুখি অবস্থান।
অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন ডিম ফিজপেট্রিক এমপি, সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের নেতা মিহির সরকার, অ্যামইেস্ট ইন্টারন্যাশনালের আব্বাস ফায়েজ, হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ব্রাড এডাম।
স্বাগত বক্তব্যে এইচ টি ইমাম বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্তিতি তুলে ধরে বলেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের সংবিধান অনুয়ায়ী নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে সংলাপের জন্য বিএনপিকে বার বার আহবান জানানো হলেও তাতে তারা সাড়া দেননি। তারা নির্বাচন কমিশনের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে নির্বাচন বর্জন করেছিলেন। কিন্তু তারা ঠিকই নির্বাচন কমিশনের অধীনে উপজেলা নির্বাচন করছেন।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীণ। উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি’র ভাল ফলাফলই তার প্রমাণ। বাংলাদেশে খুব সুন্দরভাবে চলছে বলেও তিনি দাবি করেন।
সাবিউদ্দিন চৌধুরী এইচ টি ইমামের বক্তব্যেও উত্তরে বলেন বাংলাদেশে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অর্ধেকের বেশি আসনে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় আওয়ামীল প্রার্থীরা জয়ী হয়েছে। ৪১ টি ভোটকেন্দ্রে কোনো ভোটই পড়েনি।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন সরকারের আগ্যাবহ হয়ে কাজ করছে। বিরোধীদেও দমনের উদাহরণ দিয়ে সাবিউদ্দিন বলেন, ২৯ ডিসেম্বর বিরোধী দলীয় নেত্রী যে গণতন্ত্র শোভাযাত্রার ডাক দিয়েছিলেন সে আন্দোলকে ব্যর্থ করার জন্য সরকার পুলিশ বাহীনির পাশাপাশি দলীয় কর্মীদের দিয়ে গুলি চালিয়েছে। খালেদা জিয়াকে তার বাসবভন থেকে থেকে বের হতে দেয়া হয়নি। সেমিনারে র্যাবের আচরণ, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, আন্দোলন দমনে আইন শৃঙ্খলা বাহীনির বাড়াবাড়ি এসব বিষয়ে চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেন মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা। মানবাধিকার রক্ষায় বাংলাদেশের সরকারগুলো ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ হচ্ছে বলে তারা মন্তব্য করেন। তারা বোমাবাজি এবং সহিংসতার ঘটনায় কোনো প্রকারের তদন্ত ছাড়া বিরোধী দলেরনেতা কর্মীদের অভিযুক্ত করা হচ্ছে বলে মত প্রকাশ করেন। ড. মশিউর রহমান মানবাধিকার সংগঠনগুলোর এমন দাবি ঠিক নয় দাবি করে প্রতিবেদন প্রকাশে উভয় পক্ষেও মতামত যাচাইয়ের জন্য মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রতি আহবান জানান।
সাংসদ তারানা হালিম মানবাধিকার সংগনগুলোর প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, বাংলাদেশে সরকারী দলের নেতা কর্মীদের ওপর হামলা হচ্ছে, তাদের হত্যা করা হচ্ছে। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রাণ যাচ্ছে পুলিশের। কিন্তু মানবাধিকার সংগঠনগুলো এদের মানবাধিকার বিষয়ে কিছুই বলে না।
পিয়াস করিম বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে এ দাবি মিথ্যা। তিনি গনতন্ত্র রক্ষার জন্য একটি গ্রহনযোগ্য নির্বাচন জরুরী বলে মত দেন। তিনি মাবধিকার লঙ্ঘন ও সংখ্যা লঘু নির্যাতনে উদ্বেগ প্রকাম করে এসব বন্ধের জন্য সরকারকে উদ্যোগ নেয়ার আহাবান জানান।
সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের সহসভাপতি জালাল উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ফারুক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান, যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি শায়েস্তা চৌধুরী কুদ্দুছ, সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমেদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিষ্টার সায়েম প্রমূখ।