মেয়র লুৎফর রহমানের অভিযোগ
বিবিসি ‘বর্ণবাদী ও ইসলামবিদ্বেষী’ নীতি অনুসরণ করছে
কামাল আহমেদ: লন্ডনের বাংলাদেশি-অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটস পৌর এলাকার মেয়র লুৎফর রহমান বিবিসির বিরুদ্ধে ‘বর্ণবাদী ও ইসলামবিদ্বেষী’ নীতি অনুসরণের অভিযোগ তুলেছেন।
বিবিসি গত সোমবার মেয়র লুৎফরের বিরুদ্ধে আসন্ন নির্বাচনে বাড়তি সুবিধা নেওয়ার উদ্দেশ্যে আর্থিক বরাদ্দ দেওয়ায় অনিয়মের অভিযোগ করে একটি অনুসন্ধানমূলক অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে। স্থানীয় সরকারমন্ত্রী অনুষ্ঠানে তোলা অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন।
সোমবার রাতে সম্প্রচারিত সমসাময়িক প্রসঙ্গে বিবিসির ওই অনুষ্ঠান প্যানোরমায় বলা হয়, টাওয়ার হ্যামলেটস বরোর নির্বাচিত নির্বাহী মেয়র আমলাদের সুপারিশ নাকচ করে বাংলাদেশি ও সোমালি সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে ১৫ লাখের পরিবর্তে ৩৬ লাখ পাউন্ড অনুদান দিয়েছেন। এর ফলে অন্যান্য সংগঠনকে অনুদান দেওয়ার ক্ষেত্রে তহবিল কমে গেছে প্রায় ২৫ শতাংশ।
মেয়র লুৎফর অভিযোগ করেন, আগামী মে মাসে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের প্রাক্কালে বিবিসি তাঁর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রচারণা চালানোর সুযোগ করে দিয়েছে। চার বছর আগে স্থানীয় লেবার পার্টি থেকে মনোনয়নের জন্য বাছাই হওয়ার পরও দলটির জাতীয় কমিটি তাঁর মনোনয়ন বাতিল করে দেওয়ায় তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে জয়ী হয়েছিলেন।
অনুষ্ঠানে অভিযোগ করা হয়, নিজের কোনো দল না থাকায় বিভিন্ন স্থানীয় গোষ্ঠীর সহায়তা পাওয়ার আশায় মেয়র লুৎফর বাংলাদেশি ও সোমালি সংগঠনগুলোকে বাড়তি সহায়তা দেন। লেবার ও কনজারভেটিভ পার্টির কাউন্সিলররা অনুদান দেওয়ার জন্য সংগঠন বাছাই করার ক্ষেত্রে নির্বাচনের বিষয়টি কাজ করেছে বলে অনুষ্ঠানে অভিযোগ করেন।
মেয়র লুৎফর বলেছেন, বিবিসির প্যানোরমা অনুষ্ঠান তাঁর সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের জন্য যে বাঙালি গবেষক নিয়োগ করেছিল, তিনি অনুষ্ঠান প্রযোজনা-সম্পর্কিত বিভিন্ন নথির কপি তাঁর কাছে হস্তান্তর করেন। এসব নথিতে টাওয়ার হ্যামলেটসের বাংলাদেশি মুসলমান সম্প্রদায়ের প্রতি বর্ণবাদী ও ইসলামবিদ্বেষী দৃষ্টিভঙ্গির সুস্পষ্ট আলামত রয়েছে। তিনি আরও দাবি করেন, এতে বিবিসির সম্পাদকীয় নীতিমালা লঙ্ঘিত হয়েছে।
ওই গবেষক সাংবাদিকদের বলেছেন, যেসব সংগঠনকে অনুদান দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর ট্রাস্টি বা পরিচালনা পরিষদের সদস্যদের তালিকা দিয়ে তাঁরা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কি না, তা তাঁকে নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, এটি হচ্ছে ‘জাতিভিত্তিক বাছাইকরণ’। এটি ছিল একটি অনৈতিক কৌশল।
বিবিসি ওই অনুষ্ঠানে কোনো ধরনের ধর্মীয়, বর্ণবাদী বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির ভূমিকার বিষয়ে জনস্বার্থে প্যানোরমা বৈধ অনুসন্ধান করেছে। ওই অনুষ্ঠান-সম্পর্কিত তথ্য বা নথি ফাঁসের বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী এরিখ পিকলস প্যানোরমাকে বলেছেন, তাঁদের তুলে ধরা অভিযোগগুলো বিশেষজ্ঞদের খতিয়ে দেখতে বলা হচ্ছে এবং প্রয়োজনে তিনি তাঁর আইনগত ক্ষমতা প্রয়োগ করে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলে তদন্তের জন্য পরিদর্শক পাঠাবেন।