লন্ডনে যুক্তরাজ্য বিএনপির সংবাদ সম্মেলন
জিয়াউর রহমানই বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ও স্বাধীনতার ঘোষক। ইতিহাসের এই সত্যকে মানতে হবে। গায়ের জোরে এবং প্রশাসনকে ব্যবহার করে কখনো ইতিহাস থেকে সত্য মুছে ফেলা যায়না।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের প্রতিবাদে বুধবার লন্ডনে যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়। সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি শাইস্তা চৌধুরী কুদ্দুস এবং লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারন সম্পাদক কয়সর এম আহমদ।
লিখিত বক্তব্যে কয়সর আহমদ বলেন, ইতিহাস নিয়ে সব সময় বিভ্রান্তি ছড়ানো যাদের স্বভাব, সেই আওয়ামী লীগ সব রকমের দলিল উপস্থাপনের পরও মানতে নারাজ যে, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানই বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক। এই অবস্থায় যখন তথ্য প্রমাণ ও দালিলিক বিশ্লেষণের পর দেখা গেল জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতিও ছিলেন, তখন আওয়ামী লীগ আর সহ্য করতে পারলনা।
তিনি বলেন, সকল প্রকার যুক্তিতর্ক এবং ইতিহাসের সত্যকে পাশ কাটানোর জন্য আওয়ামীলীগ বেছে নিয়েছে শক্তি দিয়ে দমন পীড়নের পুরানো পথ। দেশ-বিদেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নানা ধরনের হুমকি ধামকি দিচ্ছেন আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানকে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের লগি বৈঠার হাত থেকে বাচঁতে দেশের অধিকাংশ বুদ্ধিজীবীও এখন চুপ করে বসে আছেন। দেশে চলছে ছাত্রলীগ যুবলীগ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের রাজত্ব।
প্রথম রাষ্ট্রপতি নিয়ে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য প্রশংসিত হয়েছে উল্লেখ করে কয়সর আহমদ বলেন, অনুষ্ঠানে তারেক রহমান বলেছিলেন, জিয়াউর রহমান শুধু স্বাধীনতার ঘোষকই ছিলেননা। তিনি বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতিও ছিলেন। এর স্বপক্ষে তিনি অনেকগুলো তথ্য প্রমাণ উপস্থাপন করেছিলেন। তারেক রহমানের এই বক্তব্য দেশ বিদেশে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে।
তিনি বলেন, এই বক্তব্যের মাধ্যমে বাংলাদেশীরা শুধু নয় সারা বিশ্ববাসী বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪৩ বছর পর একটি সত্য জানতে পারলো। বাংলাদেশ পেল সঠিক ইতিহাস।
মুক্তিযুদ্ধে আওয়ামীলীগের ভূমিকার সমালোচনা করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়ার পরিবর্তে পাকিসত্মানের কাছে আত্মসমর্পনের পথ বেছে নিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব গ্রহণের পরিবর্তে এই দলের অন্যান্য সব নেতারা লেজগুটিয়ে কলকাতা ছুটে গিয়েছিলেন নিরাপদ আশ্রয়ে। এ সময় দিশেহারা জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার মাধ্যমে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি হিসেবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু আজ অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে আওয়ামী লীগ প্রশাসনকে ব্যবহার করে মিথ্যাকে সত্য বানানো অপচেষ্টা করছে।
সরকার সত্য প্রকাশে জনগণকে বাধা দিচ্ছে উল্লেখ করে কয়সর আহমদ বলেন, যারা সত্য প্রকাশ করছে তাদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে তাদের নির্যাতন করা হচ্ছে, যার প্রমাণ হলেন নির্ভীক সাংবাদিক মাহমুদুর রহমান। কিন্তু বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক সাধারণ জনগণ কখনো তাদের সাথে ছিলনা এবং এখনো নেই। এরা ভীরু কাপুরুষের দল। এরা শুধুমাত্র প্রশাসনকে ব্যবহার করে জনগণের উপর নির্যাতন চালাতে পারে।
রাজনীতিতে আওয়ামীলীগের ভূমিকার সমালোচনা করে যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বলেন, আওয়ামী লীগ জাতীয় বেইমান হিসেবে স্বীকৃত। স্বৈরাচারী এরশাদের নির্বাচনে যারা অংশগ্রহণ করবে তারা জাতীয় বেইমান… এই কথা বলে এদের নেত্রী শেখ হাসিনা ২৪ ঘন্টার মধ্যে আবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে নিজেই জাতীয় বেঈমানের খাতায় নাম লিখিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন।
দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাছে আমাদের একটি জিজ্ঞাসা হচ্ছে, যেই আদালত শেখ মুজিবকে স্বাধীনতার ঘোষক বলে রায় দিয়েছে সেই আদালতই আবার শেখ হাসিনাকে রংহেডেড লেডী বলে রায় দিয়েছে। এখন আমরা কোন রায়টা মানবো?
আওয়ামীলীগের দল ও জোটের নেতাকর্মীদের ভূমিকার কড়া সমালোচনা করে কয়সর আহমদ বলেন, এই দলে আছে সংখ্যালঘুদের জমি দখলকারী, কথিত কমিউনিস্ট মঈনুদ্দিন খান বাদল, শেখ মুজিবের চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বাজানোর কথা বলা মতিয়া চৌধুরী, শেখ মুজিবকে গালাগালকারী ইনুসহ বিশ্ব বেহায়া এবং প্রকৃত রাজাকার। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনাও যে কোন মূল্যে ক্ষমতায় থাকার জন্য তার চার পাশে এইসব অবৈধ সুবিধাবাদী চক্রের মেলা বসিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, এদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আওয়ামী লীগের ব্যক্তিত্বহীন দুই নেতা, যারা শেখ হাসিনার ক্ষমতা দখলের প্রথম পাঁচ বছর আওয়ামী লীগের হাইব্রিড নেতা মাহবুবুল হক হানিফের কথার সঙ্গে মাথা নাড়িয়ে কাটিয়ে দিয়েছেন। মাথা তোলার সুযোগ পাননি। এদের একজন তোফায়েল আহমদ নিজেকে ৬৯ এর গণআন্দোলনের নেতা হিসেবে গর্ব করেন কিন্তু ৭১এর স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং ৭৫ সালে তাদের নেতা শেখ মুজিবকে হত্যার সময়ে তার ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। আরেক গলাবাজ নেতা আমির হোসেন আমুর খ্যাতি লবন চোর হিসেবে। শেখ হাসিনাকে তোষামোদ করে এই দুই নেতা এখন সংসদে দাঁড়িয়ে চিৎকার করছে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের টেন্ডারবাজ সন্ত্রাসী নেতাদের মতো।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের প্রতিবাদ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সত্য কখনো চাপা থাকেনা। সময়ের নিয়মে সত্য প্রকাশ পাবেই। আমরা জাতীয়তাবাদী শক্তি সবসময় সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে আমাদের সংগ্রাম চালিয়ে যাব।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, আব্দুল হামিদ চৌধুরী, তৈমুছ আলী, আনোয়ার হোসেন খোকন, নাসিম আহমদ চৌধুরী, ব্যরিষ্টার আবু সালেহ মোঃ সায়েম, শহিদুল ইসলাম মামুন, তাহির চৌধুরী পাবেল, শামসুর রহমান মাহতাব, ফেরদৌস আলম, ইসলাম উদ্দিন, জসিম উদ্দিন সেলিম, এমদাদ হোসেন টিপু, আবুল হোসেন, মিসবাহউজ্জামান সোহেল, এস এম লিটন, হেবেন খান,আব্দুল কাইয়্যুম, মৌলানা শামীম, ব্যরিষ্টার মওদুদ আহমদ, আব্দুল বাছিত বাদশাহ, বাবর চৌধুরী, রফিকুল ইসলাম সজীব, নাহিদ হাসান ভিকি, কামাল আহমেদ বাবুল প্রমুখ।