ইরাক-আফগান পরিণতির পথে মিশর : শেখ কামাল হেলবাওয়ী

Halabiশেখ কামাল হেলবাওয়ী ব্রিটেনের মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা। ইউরোপের ইসলামিক ইউনিটি ফোরামের মহাসচিব। তিনি ২০১১ সালের জানুয়ারিতে মিশরের আরব বিপ্লবের আগে গঠিত মিশরীয় মুক্তি ফ্রন্টেরও উপদেষ্টা ছিলেন। শেখ কামাল হেলবাওয়ী মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গেই বড় হয়েছেন এবং এক সময় সংগঠনটির একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিও ছিলেন।
পশ্চিমা জগতে মুসলিম ব্রাদারহুডের সাবেক এই মুখপাত্র দেশে-বিদেশে ব্রাদারহুডের কর্মকাণ্ডের অন্যতম সমালোচকও বটে। সামরিক হোসনি মোবারকের যুগে ২৩ বছর ধরে নির্বাসনে ছিলেন। ২০১১ সালের জানুয়ারি পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটের পরপরই মিশরে ফেরেন শেখ হেলবাওয়ী। দেশে ফিরেই তিনি মুসলিম ব্রাদারহুডের যেসব সদস্য মিশরের সব কিছুরই ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন তাদের কড়া সমালোচনা করেন।
কিন্তু ব্রাদারহুডের সুপ্রিম গাইডের দপ্তর তার কথায় কর্ণপাত করেনি। এরই ফলশ্রুতিতে টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত এক অনুষ্ঠানে ব্রাদারহুড থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন শেখ কামাল হেলবাওয়ী।
সম্প্রতি তিনি কায়রো থেকে সেন্ট্রাল লন্ডনে আসেন ইসলামিক ইউনিটি ফোরামের একটি ইফতারে যোগ দেয়ার জন্য। ওই ইফতারে ইউরোপের সুন্নী এবং শিয়া সম্প্রদায়ের লোকজনও অংশ নেন। এ সময় শেখ হেলবাওয়ী ‘আশরাক আল আওসাত’ নামক আরবের জনপ্রিয় পত্রিকাকে সাক্ষাৎকার দেন।
সেখানে তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি একঘরে হয়ে পড়েছেন এবং তিনি আর ক্ষমতায় ফিরে আসতে পারবেন না। এ সময় তিনি মিশরে আমেরিকানদের হস্তক্ষেপেরও আশঙ্কাও ব্যক্ত করেন।
শেখ হেলবাওয়ী মিশরে সেনা অভ্যুত্থানের বিষয়টি একদমই অস্বীকার করেন। তার মতে, সেনাবাহিনী গত ৩০ জুন রাস্তায় নেমে আসা প্রায় ৩ কোটি মিশরীয় নাগরিকের আহবানে সাড়া দিয়ে মুরসিকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করেছে। ‘আশরাক আল আওসাত’ পত্রিকায় দেয়া তার সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশগুলো তুলে ধরা হলো।
আশরাক আল আওসাত: বিরোধীরা প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির সঙ্গে সংলাপে বসতে অস্বীকৃতি জানানোর পর আপনি কী সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ আশঙ্কা করেছিলেন? তাছাড়া সামনের দিনগুলোতে মিশরের পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে পারে?
শেখ কামাল আল হেলবাওয়ী: আমি আশা করেছিলাম, গত মার্চ মাসেই মিশরে সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ করবে। আর বর্তমান পরিস্থিতির চেয়েও তা ভয়াবহ হবে। আসলে মিশরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনীই একমাত্র সক্ষম প্রতিষ্ঠান। আমি এমন একটি গোলযোগপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলাম, যার ফলে ইরাক এবং আফগানিস্তানের মতো মিশরেও মার্কিনিরা সামরিক হস্তক্ষেপ করতে পারে। ইরান ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের শত্রুতে পরিণত হয়েছে। আর সিরিয়াও গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত। সুতরাং আরব জগতে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের দেখভাল করার জন্য মিশরের সেনাবাহিনীই একমাত্র সক্ষম গোষ্ঠী হিসেবে অবশিষ্ট আছে।
আর মার্কিনিরা যদি মিশরে আসতে চায় তারা সহজেই এর নায্যতা পাবে এই বলে যে, মিশর সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়েছে। বিশেষ করে সিনাইয়ে। কপটিক খ্রিষ্টান এবং শিয়া মুসলিমদের ওপর হামলাকে প্রমাণ হিসেবে খাড়া করে মিশরের সংখ্যালঘুদের জানমালের নিরাপত্তা হুমকিতে রয়েছে বলেও অজুহাত খাড়া করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। আর তাছাড়া আল গামা আল ইসলামিয়ার কয়েকজন নেতা, যেমন আসেম আব্দুল মজিদের মতো নেতার কিছু বিবৃতিই মিশরকে আরেকটি আফগানিস্তানে পরিণত করার জন্য যথেষ্ট। তার বিবৃতিকে সন্ত্রাসবাদের স্পষ্ট প্রমাণ হিসেবে খাড়া করে মিশরে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের দরজা উম্মুক্ত করা হতে পারে।
প্রশ্ন: সার্বিকভাবে মিশরীয়দের এখন কী করা উচিৎ বলে আপনি মনে করেন?
উত্তর: আমাদের অবশ্যই একটি জাতি হয়ে উঠতে হবে। আমাদের ঐক্য নিশ্চিত করতে হবে এবং কোরান ও সুন্নাহর আলোকে বিভক্তি সৃষ্টিকারী গোত্রবাদ ছাড়তে হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে ব্রাদারহুডের কতিপয় নেতা কোরান এবং সুন্নাহর পরিপন্থী আচরণ করছে। অথচ তাদের অনেকেরই পুরো কোরান মুখস্ত আছে। মিশরের সেনাবাহিনী অভ্যুত্থান ঘটিয়ে একজন বৈধ প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে বলে যে গুজব রটেছে, সে ব্যাপারে বলতে গেলে আমি বলব, আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে সেনা শাসন পছন্দ করি না। কিন্তু রাষ্ট্র যখন গভীর গোলযোগে নিপতিত হয় তখন ওই পরিস্থিতি সেনাবাহিনী ছাড়া আর কেউই ভালোভাবে মোকাবেলা করতে পারে না। আর সেনাবাহিনী আসলে মুরসিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়নি বরং ৩০ জুন মিশরের রাজপথে নেমে আসা ৩ কোটি মানুষের আহবানে সাড়া দিয়েই তারা ক্ষমতা দখল করে।
অন্যদিকে বৈধতা বলতে আমি যা বুঝি এবং পশ্চিমা গণতন্ত্রেও যেভাবে বোঝানো হয় তা হলো এর দুটি দিক আছে। প্রথমটি হল ব্যালট বক্স। আর ইসলামপন্থী হিসেবে আমাদের বেশির ভাগ লোকই মুরসি এবং ব্রাদারহুডের পক্ষে ভোট দেয়। আর বৈধতার দ্বিতীয় দিকটি হল, শাসক এবং শাসিতের মধ্যকার সামাজিক চুক্তি। কিন্তু শাসক হিসেবে মুরসি তার ওয়াদাগুলো পূরণ করতে পারেননি। আর এ কারণেই জনগণের কাছে তিনি তার বৈধতা হারান। তাছাড়া মুরসি ন্যায়বিচার কায়েম, সহিংসতা বন্ধ, জাতীয় ঐক্য নিশ্চিত এবং চরম পন্থা দূর করতেও ব্যর্থ হয়েছেন।
প্রশ্ন: মিশরের ঘটনাপ্রবাহ এবং বিশেষ করে মুরসির ক্ষমতাচ্যুতিতে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী রাসেপ তৈয়ব এরদোগান এবং দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আহমেদ দেভাতুগলুর প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে আপনার মতামত কী?
উত্তর: আমি মনে করি, তুরস্কের উচিৎ ছিল মিশরের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক অব্যাহত রাখা। মিশরের কোনো একটি বিশেষ রাজনৈতিক গোষ্ঠীর সঙ্গেই শুধু গাটছড়া না বেধে মিশরকে একটি রাষ্ট্র বা জাতি হিসেবেই গণ্য করা উচিৎ ছিল তাদের। তবে তাদের অধিকার আছে যে কোনো অবস্থান গ্রহণ করার। কিন্তু মিশরের ইস্যুতে নেতিবাচকভাবে হস্তক্ষেপের কোনো অধিকার তাদের নেই। মিশরের জনগণের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখলেই ভালো করতো তুরস্ক। ৩০ জুনের বিপ্লবকেও স্বীকৃতি দেয়া উচিৎ ছিল তুরস্কের।
প্রশ্ন: আপনার মতে মুরসি তার এক বছরের শাসনকালে সবচেয়ে বড় ভুলটি কী করেছিল?
উত্তর: মুরসির সবচেয়ে বড় ভুলটি ছিল, দেশের জন্য কোনো ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা উপস্থাপনে ব্যর্থতা। মুরসির সাবেক উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ফুয়াদ গাদ আল্লাহও তেমনটিই মনে করেন। এছাড়া মুরসি সমাজের বিভক্তি আরো গভীর করে তোলেন, মেরুকরণ বাড়িয়ে তোলেন। পার্লামেন্টে শুধু নিজের লোকজনদের উপরই ভরসা করেন, অন্যান্য দক্ষ এবং অভিজ্ঞ লোকদের অবহেলা করে সংবিধান সংশোধন এবং সরকার ব্যবস্থায় সংস্কারের দাবি উপেক্ষা করেন। অ্যাটর্নি জেনারেল ২০১২ সালের নভেম্বরে ফেরাউনদের মতো স্বৈরাচারি কায়দায় সাংবিধানিক ঘোষণা প্রদান করেন এবং বিরোধী জোট তামারুদের আন্দোলনের বৈধতা দিতে অস্বীকৃতি জানান।
প্রশ্ন: নুর পার্টি এবং সালাফিরা মুরসি সমর্থকদের সঙ্গে যোগ দেয়ায় আপনি কি আশ্চর্য হয়েছেন?
উত্তর: রাজনীতিতে সবই জায়েজ। নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থের অনুকূলে অনুমিত রাজনৈতিক অবস্থান নেয়ার অধিকার রয়েছে সালাফি বা নুর পার্টির। তারা চাইলে মুরসির পক্ষও নিতে পারে আবার তার বিরোধীদের সঙ্গেও জোট করতে পারে। গণতন্ত্রে এ ধরনের আচরণ জায়েজ আছে। কিন্তু বৈধতার তর্কটা একটা ভিন্ন বিষয়। এজন্য গভীর তাত্ত্বিক ভিত্তি লাগে। ধর্মের বেলাও একই কথা বলা যায়। রাজনৈতিক অঙ্গনে ধর্মের কোনো স্থান নেই। বিশেষত পশ্চিমা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এবং যে রাষ্ট্রের অধীনে একাধিক সংখ্যালঘু, ধর্মীয় এবং মতবাদের জনগোষ্ঠীর বাস সেখানে রাজনীতিতে ধর্মের কোনো স্থান থাকতে পারে না।
প্রশ্ন: ব্রাদারহুডের সমর্থকরা আল-আদাবিয়া স্কয়ার এবং অন্যান্য জায়গায় অবস্থান করে বিক্ষোভ করছে। এর মধ্য দিয়ে কি সংকট নিরসন হবে?
উত্তর: আমি মনে করি শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি এবং বিক্ষোভ তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু ব্রাদারহুড সহিংসতায় লিপ্ত হয়ে পড়ছে, হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছে। তারা রাস্তা-ঘাট বন্ধ করে দিয়ে জনদুর্ভোগ বাড়িয়ে চলেছে। স্থানীয় জনগনের দুর্দশা বাড়িয়ে চলেছে। রাজনৈতিকভাবে এসব গ্রহণযোগ্য হলো কি না তা কোনো প্রশ্ন নয়। শুধু মিশর নয় বরং সারা বিশ্বেই ব্রাদারহুডের ভবিষ্যতকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এসব ঘটনা। এমনকি আরব বসন্তের ফলে যেসব দেশে ইসলামন্থীরা ক্ষমতায় এসেছে তাদের উপরও এর প্রভাব পড়বে।
প্রশ্ন: আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে ব্রাদারহুডের তরুণ সদস্য এবং নেতাদের বাস্তব যুক্তি বেশি মেনে চলা উচিৎ বলে মনে হয়। এক্ষেত্রে তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
উত্তর: আসলে যেখানে ঝগড়া-ফ্যাসাদ লেগেই থাকে সেখানে বাস্তব যুক্তি মেনে চলা সম্ভব নয়। আমি মনে করি ব্রাদারহুডের তরুণ সদস্যদের উচিৎ তাদের বর্তমান নেতৃত্বকে ত্যাগ করা। কারণ বর্তমান নেতৃত্বই তাদের একটি দীর্ঘ মেয়াদী সহিংসতা, গোলযোগ এবং যন্ত্রণার দিকে ঠেলে দিয়েছে। তাদের মধ্যে ঘৃণা ও ঔদ্ধত্য বাড়িয়ে তুলছে। যে তরুণরা ধর্মকে ভালোবাসে তাদের কর্তব্য হচ্ছে সহিংসতায় না জড়িয়ে নিজেদের সুনাম রক্ষা করা। দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে সবার কল্যাণে কাজ করা। তাদের অবশ্যই বর্তমান নেতৃত্বকে জাবাবদিহি করা উচিৎ, যেমন করে মিশরীয় জনগণ তাদের শাসকদের জাবাবদিহি করছে।
প্রশ্ন: মুরসিকে তার পদে কখনো পুনর্বহাল করা হতে পারে কি?
উত্তর: আমি মনে করি না, মুরসি আর কখনো ক্ষমতায় ফিরে আসতে পারবেন। তবে এটা সেনা অভ্যুত্থানের জন্য নয় বরং এক বছরের ব্যর্থতার দরুণ তিনি নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারবেন না।
প্রশ্ন: আল আজহারের শায়খরা এখন মুরসিকে সমর্থন দিচ্ছে, আল আজহার বিশ্ব বিদ্যালয়ের রাজনৈতিক লড়াই সংগ্রামে জড়িয়ে পড়া এবং পরক্ষণেই আবার নিজেদের গুটিয়ে নেয়ার বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখেন?
উত্তর: কেউই এটা অস্বীকার করতে পারবে না, আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ও রাজনৈতিক লড়াই সংগ্রামে জড়িয়ে পড়েছিল। ২০১১ সালের জানুয়ারি বিপ্লবের পর সেনাবাহিনীর সুপ্রিম কাউন্সিল এবং মুরসি উভয়েই আল আজহারকে রাজনৈতিক বিষয়ে প্রস্তাব উপস্থাপন করতে এবং অবস্থান নেয়ার আহবান জানায়। সম্প্রতি আল আজহারের প্রধান একটি সুন্দর উদ্যোগের প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। আমি আশা করি অন্যরাও এর প্রতি ইতিবাচক সাঁড়া দিবেন।
তবে আল আজহারে এমন অনেক শেখ এবং পণ্ডিত আছেন যারা সম্পূর্ণতই মুরসিকে সমর্থন করেন এবং এমন অনেকেই আবার আছেন যারা বিদ্রোহে যোগ দেয় এবং ৩০ জুনের বিপ্লবে অংশগ্রহণ করেন। রাজনৈতিক পটটা আসলে খুবই জটিল এবং আরো সহিংস হয়ে উঠছে। আমি মনে করি সহিংসতা করে রাজনৈতিক বিষয়ে সমাধান সম্ভব নয়। আমি কামনা করি, সংঘাত নয় সুস্থ প্রতিযোগীতাই হয়ে উঠুক রাজনীতির প্রধান নিয়ামক শক্তি।
প্রশ্ন: বর্তমানে অনেক সেক্যুলারই মনে করেন, শেখ হাসানুল বান্নার হাতে প্রতিষ্ঠিত ব্রাদারহুড বর্তমান নেতৃত্বের হাতে পড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে আপনার মত কী?
উত্তর: আমি মনে করি না, বর্তমান সর্বোচ্চ নেতৃত্ব ড. মোহাম্মদ বদিইর হাতেই আমরা ব্রাদারহুডের পতন দেখতে পাব। তবে শেখ হাসানুল বান্নার আদর্শ থেকে অনেকটাই সরে এসেছে আজকের ব্রাদারহুড। ব্রাদারহুডে যদি এমন কোনো নতুন নেতৃত্বের উত্থান ঘটে যারা সংস্কারে আগ্রহী, বুঝতে চায় এবং শান্তিপূর্ণ উপায়েই আল্লাহর আদেশ পালন করতে চায় তাহলেই শুধুমাত্র হাসানুল বান্নার আদর্শে ফিরে যাওয়া সম্ভব হবে এবং বর্তমান সংকট নিরসন করা যাবে।
প্রশ্ন: ব্রাদারহুডের বর্তমান সংকট পশ্চিমা জগতে সংগঠনটির আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কের উপর কী প্রভাব ফেলছে?
উত্তর: আন্তর্জাতিক সংগঠন হিসেবে ব্রাদারহুডের উপর এটা অবশ্যই প্রভাব ফেলবে। ৩০ জুনের বিপ্লব ব্রাদারহুডের আন্তর্জাতিক চরিত্রের উপর কোনো প্রভাবই ফেলতে পারতো না যদি সংগঠনটি জনগণের ইচ্ছার বিপরীতে না যেতো। ব্রাদারহুড এবং তাদের মিত্র অন্যান্য ইসলামপন্থী সংগঠনের প্রতিরোধের বিষয়টি তাদের সমর্থকদের বিভিন্ন স্লোগান থেকেই স্পষ্ট ধরা পড়ে। ‘মৃত্যু পর্যন্ত লড়াই চলবে’, ‘বাঁচলে গাজী মরলে শহীদ’, ‘আমাদের শহীদরা বেহেশতে, আর তাদের নিহতরা দোজখে’, এবং ‘মুরসির উপর যদি কেহ পানিও নিক্ষেপ করে আমরা তাদের রক্তে ভাসিয়ে দিব’ প্রভৃতি স্লোগান দেয়া হয় মুরসি সমর্থকদের মিছিলে। ইসলামপন্থী হোক আর সেক্যুলার হোক কারো কাছ থেকেই এ ধরনের স্লোগান কাম্য নয়।
এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে, মিশরে মুসলিম ব্রাদারহুডের ভূমিকা সংগঠনটির বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত সংগঠনেরও একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। আর তাদের উপর দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা এবং সার্বক্ষণিক নজরদারির যে আদেশ জারি করা হয়েছে, যেমনটি করা হয়েছিল সাবেক শাসক হোসনি মোবারকের সময়েও, এতে করে তাদের প্রভাব প্রতিপত্তির মাত্রার উপরও প্রভাব পড়বে। এর ফলে ব্রাদারহুড এবং অন্যান্য ইসলামি সংগঠনের বৈশ্বিক পর্যায়ের সাংগঠনিক কাঠামোর উপরও প্রভাব পড়বে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button