জামায়াত নেতা সুবহানের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আটক জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির আব্দুস সুবহানের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। সোমবার ট্রাইব্যুনলে প্রসিকিউশনের প্রথম সাক্ষী এস এম শহীদুজ্জামান নাসিম (৬১) তার জবানবন্দি পেশ করেন।
বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন। জবানবন্দি গ্রহণ শেষে সাক্ষীর জেরা অসমাপ্ত অবস্থায় রেখে মামলার কার্যক্রম মঙ্গলবার পর্যন্ত মূলতবি করা হয়েছে।
সাক্ষী বলেন,‘২৫ মার্চ রাতে পাকসেনারা পুলিশ ফাঁড়িতে আক্রমণ করে। এরপর সাধারণ জনগণ ও পুলিশের প্রতিরোধের মুখে ২৯ মার্চ পাকসেনারা পাবনার মাধবপুর থেকে পালাতে শুরু করে। ওই সময় তারা প্রায় ১৮ জনকে হত্যা করে এবং অনেক বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দেয়।’
শহীদুজ্জামান বলেন,১১ এপ্রিল আমার গ্রাম থেকে সাত কিলোমিটার দূরে একটি মসজিদে অবস্থান করি। সেখানে আমার আত্মীয়স্বজনেরা দেখে আমাকে বললো, তুমি এখান থেকে পালিয়ে যাও। কারণ তুমি সরাসরি প্রতিরোধ যুদ্ধের সাথে জড়িত। জানতে পারলে তারা তোমাকে মেরে ফেলবে। ওই রাতে আমি মসজিদেই থেকে যাই। আমার দুলাভাইয়ের বাসা কাছাকাছি হওয়ায় তিনি আমার জন্য খাবার নিয়ে আসলেন। আমি তাই খেলাম।
তিনি বলেন,পরদিন (১২ এপ্রিল) দুপুর বেলা মসজিদের ইমাম সাহেব ঘোষণা দিলেন,পাকিস্তানি সৈন্যরা আসবেন। আপনারা সবাই ঈমান শক্ত করে কথা বলবেন। ওই দিন আসরের নামাজের পূর্বে মাওলানা সুবহান আসলেন। নামাজের পর তিনি বললেন,আগামীকাল যে কোনো সময় পাকসেনারা এসে আপনাদের ঈমানের পরীক্ষা নিবেন। যারা এ ঈমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারবে না তাদেরকে পাকসেনারা নিয়ে যাবে। আর যারা ঈমানের সাথে পাকিস্তানিদের পক্ষে কাজ করবেন তাদের কোনো বিপদ হবে না।
সাক্ষী বলেন,এ কথা শোনার পর আমার দুলাভাই বললেন,তুমি এখান থেকে চলে যাও। তিনি আমাকে দুটি রুটি ও একটি চাদর দিলেন। আমি চাদর গায়ে দিয়ে ফজরের নামাজের পর মসজিদের পূর্ব পাশে জঙ্গলের ভিতর দিয়ে আমার গ্রামের উদ্দেশে রওনা দিলাম। দুপুরের মধ্যে আমি বাড়িতে পৌছে গেলাম।
‘বাড়িতে যাওয়ার পর আমারা বাবা-মা আমার দুলাভাই ও ভাগ্নেকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসতে বললে আমি ১৭ এপ্রিল সেই মসজিদের কাছে আমার দুলাভাই ও ভাগ্নেকে আনতে গেলাম। মসজিদের কাছাকাছি গিয়ে দেখি মাওলানা সুবহানসহ অন্যান্য বিহারী ও তার সঙ্গীরা আমার মামা মোয়াজ্জেম হোসেনকে মসজিদের ভিতর থেকে টেনে হিচড়ে বের করছেন। কিছুক্ষণ পর কয়লা ডিপোর নিকট নিয়ে গিয়ে সুবহান তরবারী দিয়ে আমার মামার ঘাড়ে আঘাত করলেন। এরপর তার সঙ্গীরা গণকোপ মারতে লাগলো। এক পর্যায়ে আমার মামা মৃত্যুবরণ করলো’।
তিনি বলেন,‘এ কথা আমার বাড়িতে বলার পর আমার বাবা-মা বললেন, যেভাবেই হোক দুলাভাই ও ভাগ্নেকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসতে হবে। আমি পরদিন ১৮ এপ্রিল আবার গেলাম তাদেরকে নিয়ে আসতে। মসজিদের কাছাকাছি যাওয়ার পর জঙ্গলের ভিতর থেকে দেখি একই কায়দায় সুবহানসহ তার দলবল আমার দুলাভাই মোতলেব আহমেদ খান ও ভাগ্নে হেলালকে টেনেহিচড়ে নিয়ে আসছেন। এরপর সেই কয়লার ডিপোর উপর নিয়ে তরবারি দিয়ে আঘাত করে তাদেরকে হত্যা করলেন।’ এর কিছুদিন পর ট্রেনিং নেওয়ার জন্য আমরা ভারতে চলে যাই।
এর আগে গত ২ এপ্রিল সুবহানের বিরুদ্ধে সূচনা বক্তব্য পেশ করেছেন প্রসিকিউশন পক্ষ। প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন সুবহানের বিরুদ্ধে সূচনা বক্তব্য (ওপেনিং স্টেটমেন্ট) উপস্থাপন করেন।
গত ২৭ মার্চ বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে ট্রাইব্যুনাল-১ স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলাটি ট্রাইব্যুনাল-২ এ স্থানান্তর করেন।
গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর আটক আবদুস সুবহানের বিরুদ্ধে একাত্তরে সংঘটিত হত্যা,গণহত্যা,আটক,নির্যাতন,লুণ্ঠনসহ ৯টি অভিযোগে ভিত্তিতে অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল-১।
ওই বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর সুবহানের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। এর আগে ১৫ সেপ্টেম্বর সুবহানের বিরুদ্ধে ৮৬ পৃষ্ঠার ওই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে জমা দেন প্রসিকিউশন।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইলে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব পাশ থেকে সুবহানকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।