মেয়র পদে ফয়সল চৌধুরীর প্রার্থীতা
পাল্টে গেছে টাওয়ার হ্যামলেটসের ভোটের হিসেব-নিকেষ
মুনজের আহমদ চৌধুরী : ব্রিটেনে সবচেয়ে বেশি বাঙ্গালী অধ্যুষিত বারা টাওয়ার হ্যামলেটসে নির্বাচনের বাকী এখনো এক মাসেরও বেশি সময়। কিন্তু এরই মাঝে জমে উঠেছে নির্বাচনী আমেজ টাওয়ার হ্যামলেটস জুড়ে। এতদিন ধারনা করা হচ্ছিল, বর্তমান মেয়র লুতফুর রহমানের সাথে এবার মেয়র পদে মুল প্রতিদ্বন্দিতা হবে লেবার পার্টির প্রার্থী জন বিগসের। কিন্তু ইউকে বাংলা প্রেসক্লাবের আহবায়ক ও বিলেতের নন্দিত সাংবাদিক,কমিউনিটির প্রিয়মুখ রেজা আহমদ ফয়সল চৌধুরী মেয়র পদে প্রার্থী হবার ঘোষনা দিয়ে মাঠে নামায় পাল্টে যাচ্ছে এখন ভোটের মাঠের দৃশ্যপট দ্রুতলয়ে। যদিও কনজারভেটিভ পার্টি আর লিবডেমও দুজন প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে। কিন্তু ভোটের মাঠে এই দুই প্রার্থী এখনো আলোচনায় উঠে আসতে পারেননি।
ভোটের মাঠের নানা বিশ্লেষন,হিসেব-নিকেষ আর চুলচেরা বিশ্লেষনে এখন ব্যা¯ত্ম সময় কাটাচ্ছেন প্রার্থী-সমর্থক আর ভোটাররা।
বর্তমান মেয়র লুতফুর রহমান এবার টাওয়ার হ্যামলেটস ফাষ্ট এর ব্যানারে প্রার্থী হচ্ছেন। তিনি এবারের নির্বাচনেও শক্তিশালী প্রার্থী। গতবার লেবার পার্টির মনোনয়ন না পেয়ে সতন্ত্র প্রার্থী হন। লেবারের মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার পর বাঙ্গালী ভোটাররা সহানুভুতিশীল হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে ভোট দেন লুতফুর রহমানকে। ফলাফলে অপর বাঙ্গালী প্রার্থী লেবার পার্টির প্রবীন নেতা হেলাল আব্বাসকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে বিজয়ী হন লুতফুর রহমান। কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। লেবার পার্টির ঘাটি হিসেবে পরিচিত টাওয়ার হ্যামলেটসে মেয়র নির্বাচনে জিততে অনেকটা মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছে লেবার পার্টি। লেবারের প্রার্থী জন বিগসকে সাথে নিয়ে এরই মধ্যে মাঠে নেমেছেন ব্রিটেনের প্রথম বাঙ্গালী বংশোব্দুত এমপি রোশনারা আলী সহ লেবার পার্টির নেতারা। রোশনারা আলী মাঠে নামায় ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে জন বিগসের পক্ষে এমনটিই আশা লেবার পার্টির। যদিও মেয়র লুতফুরের সমর্থকরা বলছেন,রোশনারা আলী মাঠে নামায় মেয়র লুতফুর এ নির্বাচনে হারলে তিনি এমপি পদে রোশনারার সাথে প্রতিদ্বন্দিতা করবেন।
যদিও জন বিগসের তুলনায় ব্যাক্তিগত ইমেজে এগিয়ে আছেন লুতফুর রহমান। কিন্তু তার পরও নির্বাচিত হবার পর নানা কারনে নিজের জনপ্রিয়তা ধারা আগের মতো ধরে রাখতে পারেননি তিনি। মেয়র লুতফুরের বিরুদ্ধে লেবার পার্টির অভিযোগ,মুসলিম কমিউনিটিতে নিজের জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে নানা ভুয়া প্রচারনা চালিয়ে শেষ মুহুর্তে ভোটের মাঠ দখলে আনতে মরিয়া তিনি। অন্যদিকে ব্রিটেনের বাঙ্গালী কমিউনিটির একটি বড় অংশ, গতবার যারা লুতফুর রহমানের পক্ষে ছিলেন তারাও এবার অনেকটা সরাসরি মেয়র লুতফুর রহমানের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছেন। তারা বলছেন,মেয়র নির্বাচিত হবার পর লুতফুর রহমান গুটিকয়েক চাটুকার আর সুবিধাভোগী পরিবেষ্টিত হয়ে পড়েন। যতখানি উন্নয়ন হয়েছে তার আমলে সেগুলোকে ফুলিয়ে ফাপিয়ে প্রচার আর নিজের আত্বপ্রচারেই মনোযোগী ছিলেন লুতফুর। আর এখন ভোটে জিততে মুসলিম কমিউনিটিকে ঢাল হিসেবে ব্যাবহারের কৌশল খুজঁছেন তিনি।
যদিও এসব অভিযোগ পুরোদমে অস্বীকার করেছেন মেয়র লুতফুর রহমান। এমন পরিস্থিতিকে, শেষ সময়ে মেয়র পদে প্রার্থী হয়ে এবার নির্বাচনী লড়াইয়ে অনেকটা চমক হিসেবেই আভিভুর্ত হয়েছেন ইউকে বাংলা প্রেসক্লাবের আহবায়ক,লন্ডনের বাঙ্গালী কমিউনিটির প্রিয় মুখ খ্যাত সাংবাদিক,সংঘটক রেজা আহমদ ফয়সল চৌধুরী সোয়েব। চ্যানেল আই ইউরোপের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক রেজা আহমদ ফয়সল চৌধুরী দল-মত নির্বিশেষে কমিউনিটিতে সততার আলোয় উজ্জল একজন সচ্ছ ও নিবেদিতপ্রান মানুষ হিসেবে পরিচিত। ইউরোপের জনপ্রিয় টক শো ষ্ট্রেইট ডায়লগ অনুষ্টানের এই উপস্থাপককে কমিউনিটির মানুষ চেনেন সোজা কথা মানুষ হিসেবে।
আর শেষ মুহুর্তে এসে ফয়সল চৌধুরী সোয়েব প্রার্থী হওয়ায় এখন টাওয়ার হ্যামলেটসে পাল্টে গেছে ভোটের মাঠের আগের সব হিসেব-নিকেষ। এবার ভোটের মাঠে এ বারায় মুসলিম কমিউনিটি এবং বাঙ্গালী কমিউনিটির একমাত্র প্রার্থী হিসেবে অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে ছিলেন মেয়র লুতফুর। এশিয়ান বংশোব্দুত মুসলিম প্রার্থী হিসেবে বাঙ্গালীর পাশাপাশি,পাকি¯ত্মানী,ভারতীয় আর আফ্রিকান সহ বিভিন্ন এথনিক মাইনোরিটির নির্দলীয় বাসিন্দাদের ভোট পাবেন লুতফুর রহমান,এমনটিই ভাবা হচ্ছিল। কিন্তু সোয়েব প্রার্থী হওয়ার পর আর বাঙ্গালী বা মুসলিম কমিউনিটির একক প্রার্থী থাকছেন না লুতফুর রহমান। এ ভোটে একটি উল্লেখযোগ্য ভাগ নিজের পক্ষে টানতে মাঠে নেমেছেন ফয়সল চৌধুরী। ইতিমধ্যেই ফয়সল চৌধুরীর নিজ এলাকা সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর এলাকার টাওয়ার হ্যামলেটসের ভোটাররা সভা করে ফয়সল চৌধুরীর পক্ষে নিজেদের সমর্থনের কথা জানিয়েছেন।প্রায় প্রতিদিনই টাওয়ার হ্যামলেটসের বিভিন্ন এলাকার মানুষ মেয়র প্রার্থী হিসেবে ফয়সল চৌধুরীকে সমর্থন জানিয়ে সভা করছেন। এছাড়া ফয়সল চৌধুরীর চিকিতসক স্ত্রীও টাওয়ার হ্যামলেটসে সমাজকর্মী হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়। আর লেবার পার্টির বাংলাদেশী বংশোব্দুত সমর্থকদের এবার আশা ছিল লেবার পার্টি বাঙ্গালী অধ্যুষিত এ বারায় হেলাল আব্বাস বা অন্য কোন বাঙ্গালী প্রার্থীকে সমর্থন দেবে। কিন্তু শেষ পর্যšত্ম লেবারের মনোনয়ন পাওয়া জনবিগস বাঙ্গালী বা এ বারার বাঙ্গালী ভোটারদের ভোট কতখানি নিজের পক্ষে টানতে পারবেন এ নিয়ে আশংকার দোলাচলে রয়েছেন লেবারের অনেক সমর্থকই। আর এমন পরিস্থিতিতে সব সময়ই কমিউনিটির বিভিন্ন ইস্যুতে সোচ্চার ভুমিকা নেয়া ফয়সল চৌধুরীর প্রতি এরই মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে ভোটারদের। টাওয়ার হ্যামলেটসের ভোটের রাজনীতির বিশ্লেষকরা বলছেন,এবার ধর্ম বা অন্য কোন ইস্যুকে উপজীব্য করে হুজুক তুলে পার হওয়া যাবে না টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাচনী বৈতরনী। আর এবার ভোটকেন্দ্রে সাদা ভোটারদের উপস্থিতি গতবারের চেয়ে বাড়ানোর জন্য লেবার পার্টি আগে থেকেই মাঠে রয়েছে।
এদিকে সর্বশেষ টাওয়ার হ্যামলেটসের সাবেক মেয়য় আব্দুল্লাহ সালিকের জানাজায় বিবিসি প্যানোরমায় মেয়র লুতফুরের বিভিন্ন কর্মকান্ডের সমালোচনা করে বক্তব্য দেয়ার জের ধরে মেয়র লুতফুরের সমর্থকরা অপদস্থ করেন লেবার পার্টির নেতা সাবেক এক কাউন্সিলারকে। এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে টাওয়ার হ্যামলেটসের সতন্ত্র মেয়র প্রার্থী রেজা আহমদ ফয়সল চৌধুরী সোয়েব বলে গনতান্ত্রিক ব্যাবস্থায় একজন ভোটার যে কাউকে সমর্থন করতে পারেন সমালোচনাও করতে পারেন। কিন্তু সমালোচনাকারীকে লাঞ্চিত করা বা অপদস্থ করার প্রতিক্রিয়াশীল আচরন অত্যাšত্ম গর্হিত কাজ। এ ঘটনায় আমি নিজেও স্থম্ভিত এবং লজ্জিত। এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলে এ বারার মানুষ এসব ফ্যাসিষ্ট আচরনের দাতভাঙ্গা জবাব দেবে।
তবে এবার লুতফুর রহমান বা ফয়সল চৌধুরীর যেকোন একজন বাঙ্গালী প্রার্থীই মেয়র হবেন টাওয়ার হ্যামলেটসের এমন প্রত্যাশা বাঙ্গালী বংশোব্দুত ভোটারদের। কেননা, এখন এ বারার প্রায় এক তৃতীয়াংশ ভোটারই বাঙ্গালী।