বিদায় উইন্ডোজ এক্সপি
আহমেদ ইফতেখার: ২০০১ সালে এক্সপির পথচলা শুরু হয় মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের হাত ধরে। অবশেষে অনেক বিতর্কের মধ্যে দিয়ে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে জনপ্রিয় উইন্ডোজ এক্সপি অপারেটিং সিস্টেমের পথচলা গত ৮ এপ্রিল শেষ হলো। লিখেছেন আহমেদ ইফতেখার
গত ৮ এপ্রিল থেকেই এক্সপির সব হালনাগাদ সেবা বন্ধ করে দিয়েছে মাইক্রোসফট। নতুন সব প্রযুক্তির ভিড়ে এক সময়ের তুমুল জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ এক্সপি এখন অনেকটাই সেকেলে। ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তার েেত্রও এক্সপি বেশ বিপজ্জনক। মাইক্রোসফট সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৩ সালে উইন্ডোজ ৮-এর তুলনায় উইন্ডোজ এক্সপি-চালিত সিস্টেমে ম্যালওয়্যার আক্রান্তের হার ছিল ছয় গুণ বেশি। বিশ্বের গড়পড়তা তুলনামূলক সূচকে বাংলাদেশে আক্রান্তের এই হার ছিল অনেক বেশি। বাংলাদেশে তীব্রতার দিক থেকে এগিয়ে আছে বিভিন্ন ট্রোজান হর্স, এরপর আছে ওয়ার্ম ও ভাইরাস।
ইন্টারনেট ব্রাউজিং অভিজ্ঞতাকে আরো উন্নত করার ল্য নিয়ে এই নতুন আপডেট উন্মুক্ত করা হচ্ছে বলেই দাবি করেছে বিশ্বের বৃহত্তম সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি। গত ৮ এপ্রিল থেকে উইন্ডোজ ৮.১ ও উইন্ডোজ আরটি ৮.১ ব্যবহারকারীরা বিনা মূল্যে আপডেট পাচ্ছেন। আপডেট সংস্করণটিতে স্টার্ট বাটন ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি বেশ কিছু উন্নত ফিচার আনার কথা জানিয়েছে মাইক্রোসফট। টাচ ইন্টারফেসের সুবিধার্থে উইন্ডোজ ৮ উন্মুক্ত করার সময় স্টার্ট বাটনটি সরিয়ে ফেলেছিল মাইক্রোসফট। তবে উইন্ডোজ ব্যবহারকারীরা স্টার্ট বাটন সরিয়ে ফেলার পর তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন।
আপডেট সংস্করণটিতে ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্টের ছবির পাশে পাওয়ার ও স্টার্ট বাটন পাবেন। এখন দ্রুত পিসি বন্ধ করা ও সার্চ করার সুবিধাও পাবেন। ডেস্কটপ ব্যবহারকারীরা এখন ডিফল্ট সেটিংস হিসেবে ডেস্কটপ বুট অপশন পাবেন। এ ছাড়া টাস্কবারে ডেস্কটপ ও উইন্ডোজ স্টোরের অ্যাপস ও প্রিয় ওয়েবসাইটগুলো পিন করে রাখা যাবে। এ ছাড়া ব্রাউজার নিয়ন্ত্রণে বিশেষ সুবিধা পাবেন ব্যবহারকারী। মাইক্রোসফট দাবি করেছে, তাদের উইন্ডোজ ৮.১ আপডেটের মাধ্যমে হার্ডওয়্যার অংশীদাররা কম খরচে পণ্য তৈরির সুবিধা পাবেন।
এক যুগেরও আগের এ অপারেটিং সিস্টেমটির ব্যবহার বন্ধ করে নতুন সংস্করণে আপডেট করার পরামর্শ দিচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি। সাইবার দুর্বৃত্তদের কবল থেকে রা পেতে দ্রুত এক্সপি হালনাগাদ করে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। এক্সপির হালনাগাদ বন্ধ হলে অ্যান্টিম্যালওয়্যার সিস্টেমের সমর্থন কার্যকর থাকবে না। প্রযুক্তি-বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এক্সপি থেকে উইন্ডোজের নতুন সংস্করণে আপগ্রেড করে নিলে বেশ কিছু নতুন সুবিধা পাওয়া যায়। এক্সপিতে অ্যাপ্লিকেশন চালানো, ই-মেইল, ওয়েবসাইটে দেখার কাজ ভালোভাবে করা গেলেও যেসব সুবিধা বা ফিচার উইন্ডোজের নতুন অপারেটিং সিস্টেমে একে একে আসছে, সেগুলো দিয়ে এক্সপির চেয়েও অনেক বেশি কাজ পাওয়া সম্ভব।
এক্সপি নিয়ে শঙ্কা
অনেক দিন ধরেই উইন্ডোজ এক্সপি থেকে পরবর্তী কোনো সংস্করণের অপারেটিং সিস্টেমে (ওএস) আপগ্রেড করে নেয়ার পরামর্শ দিয়ে আসছে মাইক্রোসফট। যারা এখনো উইন্ডোজ এক্সপি ব্যবহার করছেন তারা গত ৮ এপ্রিলের পর থেকে ভাইরাস ও ম্যালওয়্যার আক্রমণের জন্য উন্মুক্ত হয়ে পড়তে পারেন বলে মাইক্রোসফটের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন। উইন্ডোজ এক্সপির নিরাপত্তার জন্য মাইক্রোসফট সিকিউরিটি এসেনশিয়াল সফটওয়্যারের কোনো সংস্করণ ৮ তারিখের পর মাইক্রোসফটের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাচ্ছে না। যারা এক্সপি ব্যবহার করছেন তাদের জন্য মাইক্রোসফটের পরামর্শ হচ্ছে এক্সপি থেকে পিসি অন্য কোনো অপারেটিং সিস্টেমে হালনাগাদ করে নেয়া।
তবে মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের সর্বশেষ সংস্করণ উইন্ডোজ ৮.১ পিসিতে ইনস্টল করতে পুরনো সংস্করণের হার্ডওয়্যারের তুলনায় কিছু হালনাগাদ হার্ডওয়্যারের প্রয়োজন হতে পারে। উইন্ডোজের হালনাগাদ অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করতে পিসি সর্বনিম্ন সিস্টেম দাঁড়াতে হবে এক গিগাহার্টজের প্রসেসর, এক গিগাবাইটের মেমোরি, ১৬ গিগাবাইটের হার্ডড্রাইভ, অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস ডাইরেক্ট এক্স৯ সমর্থনযোগ্য গ্রাফিকস কার্ড এবং উইন্ডোজ ডিসপ্লে ড্রাইভার মডেল সফটওয়্যার।
মাইক্রোসফট জানিয়েছে, যারা এক্সপি থেকে আপগ্রেড করে নিতে চান তাদের জন্য মাইক্রোসফটের ওয়েবসাইটে একটি টিউটোরিয়াল দেয়া হয়েছে এবং আপগ্রেড করে নেয়ার প্রয়োজনীয় সব নির্দেশনা সাইট থেকে পাওয়া যাবে। পিসি উইন্ডোজের সর্বশেষ সংস্করণ সমর্থন করবে কি না তা-ও পরীা করে দেখা যাবে।
মাইক্রোসফট সার্ভিস বন্ধ করে দেয়ার আগে উইন্ডোজ এক্সপির জনপ্রিয়তা ২৭ শতাংশ। তবে যারা উইন্ডোজ হালনাগাদ করতে পারবেন না বা নতুন পিসি কিনতে পারবেন না তাদের জন্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হচ্ছে থার্ড পার্টি বা তৃতীয় পরে নিরাপত্তা সফটওয়্যার ব্যবহার করে এক্সপির ব্যবহার চালিয়ে যেতে পারেন।
যাদের পিসিতে হার্ডওয়্যারের কারণে হালনাগাদ উইন্ডোজ সমর্থন করবে না তাদের ওপেন সোর্স লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকেরা।
এক্সপি-সংক্রান্ত সব ধরনের নিরাপত্তা হালনাগাদ, হটফিক্স এবং ব্যবহার-সংক্রান্ত সব সেবা বন্ধ হওয়ার পর আর কোনো ধরনের কারিগরি সহযোগিতা পাওয়া যাবে না। এক্সপি সহযোগিতা পুরোপুরি বন্ধ হলে কী ঘটবে, এ থেকেই অনেকটাই অনুমান করা যায়। হ্যাকার ও স্প্যামাররা নতুন ধরনের নিরাপত্তা ত্রুটি বের করে প্রতিরাব্যবস্থায় হামলা চালায়, কর্তৃপ সেগুলো চিহ্নিত করে সময়ে সময়ে সিস্টেম হালনাগাদের মাধ্যমে আক্রমণ প্রতিহত করে। কিন্তু যখন এক্সপির আর কোনো ধরনের নিরাপত্তাজনিত হালনাগাদ পাওয়া যাবে না, স্বাভাবিকভাবেই নিরাপত্তাব্যবস্থা হয়ে উঠবে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।
বিশ্বের ৯৫ শতাংশ এটিএম যন্ত্রের অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে এখনো এক্সপি রয়ে গেছে। এক যুগেরও আগের এ অপারেটিং সিস্টেমটির ব্যবহার বন্ধ করে নতুন সংস্করণে আপডেট করার পরামর্শ দিচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি। এক্সপির আয়ু কমে যাওয়ায় অনেক প্রতিষ্ঠানই দ্রুত এক্সপি থেকে নতুন কোনো সংস্করণে আপগ্রেড করে নিচ্ছে। অথচ বিশ্বে বর্তমান সময়ে গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র হিসেবে এটিএম এখনো এক্সপিতে পড়ে রয়েছে। নিরাপত্তা ও হ্যাক হওয়ার ঝামেলা এড়াতে দ্রুত এটিএম যন্ত্র এক্সপি থেকে হালনাগাদ করে নেয়া উচিত বলেই মনে করছেন প্রযুক্তি গবেষকেরা। এটিএম যন্ত্রে এখনো এক্সপি ব্যবহৃত হওয়ায় তা আর্থিক তথ্য চুরির ঝুঁকি ও বিপদ বাড়িয়ে তুলেছে বলেও মনে করছেন মার্কিন গবেষকেরা। এক্সপির হালনাগাদ বন্ধ করে দেয়ার কথা জানালেও এর নিরাপত্তা পণ্যগুলোর সমর্থন ২০১৫ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর কথা জানিয়েছে মাইক্রোসফট কর্তৃপ। তবে মাইক্রোসফটের প থেকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে যে, অ্যান্টিম্যালওয়্যার সিস্টেমের সমর্থন এ সময় খুব বেশি কার্যকর না-ও হতে পারে। এখনকার নতুন এটিএম যন্ত্রগুলোয় উইন্ডোজের নতুন সংস্করণ আপডেট করে নেয়া সহজ। অন্য দিকে পুরনো যন্ত্রগুলোও আপগ্রেড করে নতুন সংস্করণের উইন্ডোজ ব্যবহার করা উচিত।