হেরে গেলেন ব্রিটেনের ‘মৃত্যুপ্রার্থীরা’
এক ব্রিটিশ আপিল আদালত বুধবার স্বেচ্ছা-মৃত্যুর অধিকার চেয়ে করা একটি আবেদন ফিরিয়ে দিয়েছেন। বিবিসি জানায়, দুজন মৃত্যুপথযাত্রী ব্যক্তি তাঁদের দায়ের করা মামলায় দাবি জানিয়েছিলেন, চিকিত্সকদের সহায়তায় তাঁদের মৃত্যুবরণের অনুমতি দেওয়া হোক।
স্থবিরতা রোগী (লকড ইন সিনড্রোম) টনি নিকলিন্সন ও সড়ক দুর্ঘটনায় পক্ষাঘাতে আক্রান্ত পল ল্যাম্ব নিজেদের মৃত্যুর অধিকার দাবি করে আবেদন জানিয়েছিলেন। তবে নিকলিন্সন গত বছর নিউমেনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
নিকলিন্সন ও ল্যাম্ব তাঁদের আবেদনে বলেছিলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবাধিকার কনভেনশন অনুযায়ী তাঁদের ‘ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনযাপনের’ অধিকার আছে। তাই যে আইনটির কারণে তাঁরা নিজেদের মৃত্যুর ক্ষণ বেছে নিতে পারছেন না, সে আইনটি মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে।
আপিল আদালত তাঁর আদেশে বলেন, চিকিত্সককে নিজের জীবননাশের জন্য অনুরোধ করার অধিকার নিকলিন্সনের নেই। তবে এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন নিকলিন্সনের বিধবা স্ত্রী। একই প্রস্তুতি নিচ্ছেন ল্যাম্ব।
বিচারকেরা তাঁদের রায়ে বলেন, কারও মৃত্যু বেছে নেওয়ার অধিকারের বিষয়টিতে আদালতের বিচারকদের ওপর নয়, বরং পার্লামেন্টের ওপর নির্ভর করা উচিত। তিন বিচারকের বেঞ্চটি নিকলিন্সনের স্ত্রী জেন ও পল ল্যাম্বের আবেদন প্রত্যাখ্যানে একমত হয়েছিলেন।
প্রধান বিচারক তাঁর রায়ে বলেন, গর্ভপাত ও প্রাণদণ্ডের মতো ইস্যুতে সবচেয়ে বড় সত্যিটি হলো, পার্লামেন্ট জাতির বিবেকের প্রতিনিধিত্ব করে।
তিনি আরও বলেন, ‘বিচারকেরা মহত্ হলেও সবকিছু করতে পারেন না। আমাদের কর্তব্য হলো নির্দিষ্ট পরিসরের মধ্যে প্রাসঙ্গিক আইনগত নীতি নির্ধারণ করা এবং তা প্রয়োগ করা।’
তবে আরেকজন মৃত্যুপ্রার্থী তাঁর মামলায় জিতেছেন। স্বাস্থ্যকর্মীদের সহায়তায় একজন ব্যক্তি কীভাবে আইনগত উপায়ে মৃত্যুবরণ করতে পারেন, সে নির্দেশনা চেয়ে এ ব্যক্তি আবেদন করেছিলেন। মার্টিন নামে পরিচয় দেওয়া এ ব্যক্তিটি মূলত সুইজারল্যান্ডের একটি ‘আত্মহত্যা প্রতিষ্ঠানের’ শরণাপন্ন হতে চান। তিনি চান ব্রিটেনের চিকিত্সক ও নার্সরা তাঁকে এ ক্ষেত্রে সহায়তা করুক। তবে মার্টিনের স্ত্রী বা পরিবার তাঁর সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে।
সরকারি কৌঁসুলিবর্গের পরিচালক জানিয়েছেন, তিনি মার্টিনের মামলার রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করবেন।
মামলার রায়ের পর বিশেষ কম্পিউটার ব্যবহার করে কথা বলা মার্টিন জানান, রায়ে তিনি বেজায় খুশি। তিনি বলেন, ‘আমি আমার জীবন কখন, কীভাবে শেষ করব, সেটির সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আমি একধাপ এগিয়েছি। আমার শারীরিক প্রতিবন্ধিতার জন্য আমি নিজে আমার জীবন নিতে পারছি না।’
মার্টিন বলেন, তিনি নিজের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না, তাই অন্তত মৃত্যুকে নিয়ন্ত্রণ করতে চান।