তিস্তায় ভারতের ৩৫ প্রকল্প চরম বিপর্যয়ে বাংলাদেশ

Tistaমো: ইকবাল হোসেন লালমনিরহাট: আন্তর্জাতিক নদী তিস্তার উজানে ভারতের ৩৫টি প্রকল্পের কারণে চরম বিপর্যয়ের শিকার হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এর প্রমাণ মিলেছে ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যে ইতিহাসের ভয়াবহতম সাম্প্রতিক দুর্যোগের মধ্য দিয়ে। বিশেষজ্ঞরা ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, গঙ্গা নদীর উজানে ভারত যে অসংখ্য বাঁধ ও প্রকল্প তৈরি করেছে তারই অনিবার্য পরিণতি উত্তরাখণ্ডের এই দুর্যোগ। তাই খোদ ভারতেই এ নিয়ে বিতর্ক উঠেছে। নদী বিশেষজ্ঞরা ইতোমধ্যেই বলাবলি শুরু করেছেন, গঙ্গার উজানে কোনোরকম নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অসংখ্য বাঁধ তৈরি করা হয়েছে। এই নদীর প্রদায়ক নদীগুলোও বহুসংখ্যক বাঁধে বন্দী। এর জেরে গঙ্গা বিধৌত উত্তরাখণ্ডে ইতিহাসের এই ভয়াবহতম বিপর্যয় ঘটেছে। পশ্চিমবঙ্গের পাকি দেশ পত্রিকায় দু’টি প্রতিবেদনে উত্তরাখণ্ডের বিপর্যয়ের জন্য গঙ্গার উৎসমুখের তি করা এবং গঙ্গায় অসংখ্য পানিবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণকে দায়ী করা হয়েছে। দেশ পত্রিকার ২ জুলাই সংখ্যায় একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘গত বছর ডিসেম্বরে ভারতের কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রকের একটি নোটিফিকেশনে বলা হয়, গোমুখ (হিমালয়ের উৎস) থেকে উত্তর কাশী পর্যন্ত ১৩৫ কিলোমিটার বিস্তীর্ণ অঞ্চলটিকে ‘ইকো সেনসিটিভ জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ১৯৮৬ সালের পরিবেশ রা আইনে। আর এর মানেই হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে কোনো ধরনের নির্মাণ কাজ করা চলবে না। কিন্তু রাজ্য সরকারের তরফে এই আইন মানার েেত্র তীব্র আপত্তি দেখা দেয়। রাজ্যের যুক্তি, এই আইন মানতে গেলে উন্নয়ন থমকে থাকবে। অন্য প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘উত্তরাখণ্ডের এই বিপর্যয়কে বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে এই সময়ে নির্মীয়মান দুই শতাধিক জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। প্রায় প্রতিটি েেত্র পরিবেশের সব বিধিনিষেধ উপো করে বহু গাছ কেটে ফেলা হয়েছে, পাহাড়ের ঢালে ব্লাস্টিং করে টানেল তৈরি করা হয়েছে। সর্বোপরি নদীর গতিপথ রুদ্ধ করে নির্মিত হয়েছে বিশাল বাঁধ ও জলাধার। এসব কর্মকাণ্ড অস্থির হিমালয়ের ঢালকে আরো ভঙ্গুর করা হয়েছে।’ গঙ্গায় ভারতের এসব কর্মকাণ্ডের পরিণতিতে এখন পর্যন্ত উত্তরাখণ্ডে বিপর্যয়ের একটি চিত্র ফুটে উঠেছে। অদূর ভবিষ্যতে ভারতের অন্যান্য রাজ্য ছাড়িয়ে বাংলাদেশেও তা বিপর্যয়কর পরিস্থিতির আশঙ্কা রয়েছে। একইভাবে বাংলাদেশের উত্তরাংশে তিস্তার উজানে যেভাবে সেচ সম্প্রসারণ ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ৩৫টি বাঁধ তৈরি হচ্ছে তাতে সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গসহ বাংলাদেশে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে বলেও এসব বিশেষজ্ঞ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তারা অভিযোগ করেছেন, অপরিকল্পিতভাবে তিস্তায় একের পর এক জলবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে তোলা হচ্ছে। নদীর স্রোতকে আরো তীব্র করে তুলতে নদীকে সংকীর্ণ করে ফেলা হচ্ছে। প্রকৃতির স্বাভাবিক প্রবণতায় বাধা সৃষ্টি করেই এসব করা হচ্ছে। ভারতের পাহাড়ি রাজ্য সিকিমে তিস্তায় ইতোমধ্যে ২৭টি পানি-বিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গেও তৈরি হচ্ছে আরো দু’টি পানি বিদ্যুৎ প্রকল্প। এ ছাড়াও তিস্তা নদীর ওপরে ভারতের প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলো হলো, ভাসমি, বিমকং, চাকুং, চুজাচেন, ডিক চু, জোরথাং লোপ, লাচিন, লিংজা, পানান, রালাং, রামমাম-১, রামমাম-৪, রনজিৎ-২, রনজিৎ-৪, রাংইয়ং, রাতিচু-বাকচা চু, রিংপি, রংনি, রুকেল, সাদা মাংদের, সুনতালি তার, তালিম, তাশিডিং, তিস্তা-১, তিস্তা-২, তিস্তা-৩, তিস্তা-৪, তিস্তা-৬, থাংচি, টিং টিং প্রভৃতি। এ ছাড়াও বর্তমানে চলমান প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে, লোয়ার লাগিয়াপ, রামমাম-২, রনজিৎ-৩, তিস্তা-৫ এবং রঙ্গিচু। এগুলো সবই পানি-বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। এসব প্রকল্পের ফলে নদীর স্বাভাবিক গতিপথ রুদ্ধ হতে চলেছে। ইতোমধ্যে সিকিমের লেগশিপ ও সিংতাম এবং পশ্চিমবঙ্গের রম্ভিতে পানি-বিদ্যুৎ উপাদানের কাজ শুরু হয়েছে। কাজ চলছে পশ্চিমবঙ্গে সেবকের কাছে কালিঝোরা এবং উত্তর সিকিমের মঙ্গনে। একজন নদী বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, জাতীয় পানি-বিদ্যুৎ নিগমের তত্ত্বাবধানে প্রকল্পগুলো গড়ে তোলার জন্য ৫০০-৭০০ মিটার চওড়া নদীর গতিপথকে ১৪০-১৭০ মিটারে বেঁধে ফেলা হচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেন, পরিবেশ নয় সরকারের কাছে এখন সস্তা জনপ্রিয়তাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সেটিই উত্তরবঙ্গে বিপর্যয়ের কারণ হবে। আর সেই বিপর্যয়ের ধাক্কা গিয়ে বাংলাদেশেও লাগবে সেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন পরিবেশবিদরা। তাদের আশঙ্কা, এই সব বাঁধের জন্য বৃষ্টির সময় প্রবল বন্যা পরিস্থিতিও তৈরি হবে। হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশনসহ বেশ কিছু পরিবেশ সংস্থা অভিযোগ করে, তিস্তায় পর পর পানি-বিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে তোলার ফলে আগামীতে এই অঞ্চলে চরম বিপর্যয় নেমে আসবে। বিশ্বব্যাংকের একটি রিপোর্টেও এসব প্রকল্প হিমালয়ের ভাটিতে অবস্থিত দেশগুলোর জন্য ভূমিকম্পসহ মারাত্মক বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে বলে সতর্ক করা হয়।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button