সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে বৈঠক শুরু করেছে ইউকেবিসিসিআই
ব্রিটেন এবং বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধির পাশাপাশি এই প্রজন্মের মধ্যে থেকে নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি, ব্রিটেনে বাংলাদেশি পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ এবং নতুন নতুন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ সম্ভাবনা নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী এমপি এবং শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি’র সাথে একান্ত বৈঠকে মিলিত হন নয় সদস্যের ইউকে-বাংলাদেশ ক্যাটালিস্টস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ইউকেবিসিসিআই) প্রতিনিধিদল।
বিদেশে বাংলাদেশের সফল ভাবমূর্তি তুলে ধরার পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক দূত হিসেবে কাজ করার মানসিকতা নিয়ে সরকারের বিভিন্ন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার ধারাবাহিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। মন্ত্রীদ্বয় এ সময় বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভাবমূর্তি গড়ে তোলা এবং ২০২১ সালের মধ্যে সরকার ঘোষিত উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কাজ করার জন্য ব্রিটিশ-বাংলাদেশি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলের প্রতি আহ্বান জানান।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অুনষ্ঠিত বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলের প্রতি সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে বলেন, বর্তমান সরকারের সুযোগ্য নেতৃত্ব ও আন্তরিকতার কারণে ইতোমধ্যেই এক হাজার ডলার ছাড়িয়েছে আমাদের মাথাপিছু আয়। ছয় শতাংশে উন্নীত হয়েছে প্রবৃদ্ধি। বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের পাশাপাশি এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ-সহ স্থানীয় পর্যায়ের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর সাথে সমন্বিতভাবে দেশের উন্নয়নে কাজ করার জন্য প্রতিনিধিদলের প্রতি আহ্বান জানান মন্ত্রী। বৈঠকে এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন মহাপরিচালক আসাদ আলম সিয়াম।
সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী ইউকেবিসিসিআই প্রতিনিধিদলের আন্তরিকতাকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে নির্ধারিত উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কাজের মাধ্যমে আমার বাংলাদেশকে উন্নয়নের একটি মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাই। শিক্ষাখাতে বিনিয়োগ এখনও সর্বনি¤œ পর্যায়ে উল্লেখ করে তিনি বলেন, চাকরির বাজারের ওপর গুরুত্ব দিয়ে এ খাতে বিনিয়োগ আরও বাড়াতে হবে। শিক্ষাসচিব ড. মোহম্মদ সাদিক এ সময় কোন কোন খাতে বিনিয়োগে কী ধরনের উপযোগিতা রয়েছে সে বিষয়ে একটি সমীক্ষা যাচাইয়ের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
প্রতিনিধিদলের অন্যতম সদস্য ইউকেবিসিসিআই চেয়ারম্যান ইকবাল আহমেদ ওবিই বলেন, ব্রিটেনে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত ইউকেবিসিসিআই-এর সদস্যরা বাংলাদেশের আর্থিক, তৈরি পোশাক শিল্প, খাদ্য প্রক্রিয়াজতকরণ, পর্যটন, আইসিটি, স্বাস্থ্য ও সেবা, শিক্ষা এবং অন্যান্য খাতে বিনিয়োগের পাশাপাশি ইউরোপ এবং পশ্চিমা বিশ্বে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য অর্থনৈতিক দূত হিসেবে কাজ করতে চায়। ‘বাংলাদেশি জনগণের জন্য বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে চাই। পাশাপাশি, কয়েক দশকে অর্জিত মূল্যবান অভিজ্ঞতা দুই দেশের নতুন প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চাই,’ জানান তিনি।
বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্ভাবনা পুরোপুরি কাজে লাগাতে একটি কার্যকর নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার গুরুত্ব তুলে ধরে ইউকেবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট বজলুর রশিদ বলেন, ব্রিটেনে বাংলাদেশি মালিকানাধীন ১২ হাজার রেস্তোরাঁয় কর্মসংস্থানের প্রচুর চাহিদা থাকা সত্ত্বেও যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাবে আমরা এ সুযোগ কাজে লাগাতে পারছি না। অথচ সরকারি সহযোগিতা নিয়ে প্রতিবেশি ভারতের অনুরূপ প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট গড়ে তোলা গেলে সম্ভব হবে বিপুল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান। পাশাপাশি, কীভাবে নিজেকে একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হয় সে বিষয়ে ভবিষ্যত উদ্যোক্তাদের পরামর্শ ও সহযোগিতা দিতে চাই আমরা যার মাধ্যমে আরও গতিশীল হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশের অর্থনীতি।
ইউকেবিসিসিআই নেতৃবৃন্দ এরপর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেন এবং সংগঠনের পরিচিতি ও ভবিষ্যত কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেন। পরবর্তীতে তারা দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসিআই কার্যালয়ে সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দীন আহমেদ ও অন্যান্য ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সাথে এক আনুষ্ঠানিক বৈঠকে মিলিত হন।
এসব বৈঠকে ইউকেবিসিসিআই প্রতিনিধিদলের অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এমএ রউফ জেপি, জামাল উদ্দীন মোক্কোদুস, আব্দুল মালিক, নাজমুল ইসলাম নুরু, আজাদ আলি, ব্যারিস্টার আনওয়ার বাবুল মিয়া এবং মিজ রোহেমা মিয়া।