সালাত তাকওয়া অর্জনের পথ
মাওলানা মিজানুর রহমান খান
হাদীসঃ হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত , মহানবী (সা.) বলেন, তোমাদের কারো বাড়ীর সামনে যদি নদী থাকে, আর সে যদি প্রতিদিন নদীতে পাঁচ বার গোসল করে, তাহলে কি তার গায়ে কোন ময়লা থাকতে পারে? সাহাবাগণ উত্তরে বললেন, না , তার গায়ে কোন ময়লা থাকতে পারে না। মহানবী (সা.) বললেন, এটাই পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের উদাহরণ, পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা তার পাপ সমূহ ধুয়ে-মুছে পরিস্কার করে দেন। (বুখারী-মুসলিম)
এই হাদীসের আলোকে আলোচনায় নিম্নোক্ত বিষয় সমূহ উপস্থাপিত হবেঃ
১. হাদীসের ব্যাখ্যা
২. সালাতের ফজিলত ও গুরুত্ব ।
৩. তাকওয়ার গুরুত্ব।
৪. সালাত যেভাবে মুত্তাকি তৈরী করে।
৫. সালাত আদায়কারী সত্যিকার মুসল্লী কখন হবে?
৬. মুত্তাকি মুসল্লীর যে সব বিষয়গুলো বর্জন করবেন।
৭. সালাত কেমন হওয়া উচিত।
মহানবী (সা.) একদিন সাহাবায়ে কেরামের সামনে নামাযের গুরুত্ব তুলে ধরতে গিয়ে উক্ত আলোচনা করেছিলেন, যা বিখ্যাত সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা (রা.) এর সুত্রে বুখারী-মুসলিম বর্ণনা করেছেন।
মানুষ গোসল করে শরীর থেকে ময়লা দুর করার জন্য, একজন ব্যক্তি যদি প্রতিদিন পাচ বার গোসল করে ময়লা দুর করে শরীর পরিস্কার রাখার চেস্টা করে তাহলে তার গায়ে কোন ময়লা থাকতে পারে না। ঠিক তেমনীভাবে সালাতের দ্বারা বান্দার পাপাচার মুছে যায়। গুনাহের কারনে অন্তরে যে কালিমা পড়ে থাকে তা নামাযের দ্বারা ধুয়ে-মুছে পরিস্কার হয়ে যায়। সুতরাং বান্দা যদি প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামায যথাযথভাবে আদায় করে তবে তার গায়ে-অন্তরে পাপাচারের কোন ময়লা অবশিষ্ঠ থাকতে পারে না।
সালাতের ফজিলত ও গুরুত্ব
পবিত্র কুরআন ও হাদীসের অসংখ্য জায়গায় সালাতের ফজিলত ও গুরুত বর্ণিত হয়েছে। যেমন পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা সালাতকে মুমিনদের সফলতার চাবি-কাঠি উল্লেখ করেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
নিশ্চয় মুমিনগণ সফলকাম যারা খুষু-খুয়ুর সহিত সালাত আদায় করে।……. আর যারা পাঁচ ওয়াক্ত নামায যথাযথভাবে হেফাযত করে, সঠিক সময়ে আদায় করে। . …… তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতুল ফেরদাউস, যেখানে তারা অনন্তকাল থাকবে। [সূরা মুমিনুন,১-১১])
# সালাত শ্রেষ্ঠ ইবাদত : সালাতকে শ্রেষ্ট ইবাদত ঘোষনা দিয়ে মহানবী (সা.) বলেন-
যেন রেখ, তোমাদের আমল সমূহের মধ্য হতে সর্বশ্রেষ্ট ইবাদত হলো সালাত।
# আল্লাহ তা‘আলার ঘনিষ্ঠ হওয়ার মাধ্যম : সালাতের মাধ্যমেই বান্দা মওলার সবচেয়ে বেশী ঘনিষ্ঠ হতে পারে, মহানবী (সা.) বলেন-
সালাত মুমিনের মিরাজ স্বরূপ।) মিরাজের মাধ্যমে যেভাবে মহানবী (সা.) মহান আল্লাহ তা‘আলার সবচেয়ে বেশী ঘনিষ্ঠতা অর্জন করেছিলেন তেমনিভাবে বান্দা সালাতের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশী নৈকট্য অর্জন করতে পারে।
# জান্নাত পাওয়ার চাবিকাঠি : সালাত হলো জান্নাত লাভের মূল চাবি, মহানবী (সা.) বলেন- সালাত বেহেশতের চাবি।) সুতরাং চাবি ছাড়া জান্নাতের দরজা খোলা যাবে না।
# সালাতের দ্বীনের স্তম্ভ : ইসলামের মৌলিক স্তম্ভ বা খুটি হলো সালাত, সুতরাং সালাত ছাড়া দ্বীন টিকে থাকতে পারে না। মহানবী (সা.) বলেন-
সালাত দ্বীনের খুটি, তাই যে সালাতকে কায়েম রাখলো সে দ্বীনকেই কায়েম রাখলো, আর যে সালাতকে ধ্বংস করলো সে দ্বীনকেই ধ্বংস করলো।
# সালাত মুমিন ও কাফেরের মাঝে পার্থক্যকারী : একজন মমিন তার ইমানের দাবিতেই সালাত আদায় করে, আর কাফেরের ইমান-ই না থাকার কারনে তার নামাযের প্রশ্নই আসে না। তাই সালাত আদায় মুমিনের কাজ, আর সালাত আদায় না করা কাফেরের কাজ। মহানবী (সা.) বলেন- মুমিন ও কাফেরের মাঝে পার্থক্যকারী সালাত তরক করা।
# সালাত তরককারী জাহান্নামে যাবে : কিয়ামতের দিন তাদের জাহান্নামে যাওয়ার কারন ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলবে-
আমরা সালাত আদায় করতাম না।
৩. তাকওয়ার গুরুত্ব:
তাকওয়া অর্থ খোদাভীতি, পাপাচার বর্জন, যেমন উলামায়ে কেরাম বলেন-
শরীয়াতের আদেশ সমূহ পালন ও নিষেধ সমূহ বর্জনের নাম হলো তাকওয়া।
যেমনটি একটি হাদীসে তাকওয়ার আরো ভালো পরিচয় তুলে ধরা হয়েছেঃ
হযরত আতিয়া আস সা‘দি (রা.) হতে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেছেন; কোন বান্দা ততক্ষন পর্যন্ত মুত্তাকির মাকামে পৌছতে পারবে না যতক্ষন পর্যন্ত বান্দা এমন সকল কার্যকলাপ পরিত্যগ না করবে যা করলে কোন অপকার নাই, তবে তার মধ্যে কোন অপকার এসেও যেতে পারে এই আশংকায়। তিরমিযী।
কুরআন – হাদীসের অসংখ্য স্থানে তাকওয়ার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে, যথা-
# মুত্তাকিগণ আল্লাহর প্রিয় পাত্র, পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা মুত্তাকিদের ভালোবাসেন।
# মুত্তাকিগণ আল্লাহ তা‘আলার নিকট সম্মানীয়, যেমনটি পবিত্র কুরআনে ঘোষনা করেছেন- নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে যারা বেশী আল্লাহ ভীরু তাঁরা আল্লাহর কাছে বেশী সম্মানিত।
# তাকওয়া অর্জন করা আল্লাহর নির্দেশ, আল্লাহ তা‘আলা বলেন- হে ইমানদার গণ তোমরা আল্লাহ কে ভয় করো পরিপূর্ণভাবে।
# তাকওয়া সফলতার পথ, পবিত্র কুরআনে ঘোষনা এসেছে- নিশ্চয় মুত্তাকিগণের জন্যই সফলতা।
৪. সালাত কিভাবে মুত্তাকি তৈরী করে :
সালাতের মাধ্যমে মুত্তাকি মানুষ তৈরী হয়, কেননা সালাত মানুষকে সকল পাপাচার- থেকে বিরত রাখে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা বলেন- নিশ্চয় সালাত পাপাচার- অশ্লীলতা থেকে বিরত রাখে।
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা সালাতকে মুত্তাকিদের বৈশিষ্ঠ বলে ঘোষনা দিয়েছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
উহা এমন একটি কিতাব যার মধ্যে কোন সন্দেহ নেই, আর উহা মুত্তাকিদের জন্য হেদায়াত স্বরূপ। আর মুত্তাকি হলো যারা সালাত কায়েম করে……..(বাকারা:১-৩)।
৫. সত্যিকার মুসল্লী কখন হবে :
যথার্থ নামাযী তাকেই বলা যাবে যার থেকে পাপাচার-অশ্লীলতা দুরিভূত হবে। যার মধ্যে তাকওয়ার নমূনা দৃশ্যমান হবে। মুত্তাকি হিসেবে যিনি নিজেকে দাড় করাতে পারবেন বা যে নামাযী পাপাচার-অশ্লীলতা বর্জনের চেস্টা করবে। আর উত্তম গুণাবলী নিজের জীবনে বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা চালাবে। যদি এমনটি না হয় তাহলে সে সালাত সালাত নয়, সে সালাত মুসল্লীর জীবনে কল্যাণ নয় অকল্যাণ বয়ে অনবে। মহানবী (সা.) বলেন-
যার নামায পাপাচার-অশ্লীলতা থেকে বিরত রাখে না সে নামায তাকে মহান আল্লাহ তা‘আলার কাছ থেকে দুরে সরিয়ে দেয়া ছাড়া কোন কল্যাণ বয়ে আনে না।
৬. মুসল্লীর বর্জনীয় কার্যাবলী :
# অহংকার : অহংকার একটি কবিরা গুনাহ, মানুষ মাটি দিয়ে তৈরি আবার একদিন মাটিতেই মিশে যাবে, অত:পর যারা আখেরাতের বিচারে নাজাত পাবে তারা জান্নাতে যাবে, আর যারা নাজাত পাবে না তাদের জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। সুতরাং চুড়ান্ত হিসেবের পূর্বে কারো উত্তম-অনুত্তম ভাবার উপায় নেই, অহংকারেরও সুযোগ নেই। মহানবী (সা.) বলেন-
যার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণ ও অহংকার থাকবে সে জান্নাতে যেতে পারবে না। ………… অহংকার হলো সত্যকে অস্বীকার করা আর মানুষকে তুচ্ছ মনে করা।
# গীবত : কারো অনুপস্থিতিতে তার দোষ চর্চা করা হলো গীবত। যেমন একটি হাদীসে এসেছে, হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন-
তোমরা কি যান গীবত কি? সাহাবায়ে কেরামগণ বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা.)- ই ভালো যানেন। মহানবী (সা.) বললেন- তোমার মুসলমান ভাই সম্পর্কে এমন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যেটা জানতে পারলে সে কষ্ট পাবে। মহানবী (সা.) কে প্রশ্ন করা হলো, আমি যা বলছি সেই দোষ যদি তার মধ্যে থেকে থাকে, মহানবী (সা.) বললেন, সেই দোষ যদি তার মধ্যে থেকে থাকে তবেই তা গীবত হবে, না থাকলে তো সেটা অপবাদ হবে, যা আরো মারাত্তক অপরাধ। মুসলিম।
অন্য হাদীসে গীবতকে যিনার চেয়েও মারাত্তক অপরাধ বলা হয়েছে।
# মিথ্যার আশ্রয় নেয়া :
মিথ্যা বলা বা মিথ্যার পক্ষ অবলম্বণ করা অত্যন্ত জঘন্যতম অপরাধ। এব্যপারে হাদীসে এসেছে- হযরত আবি বকরত: (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা মহানবী (সা.) দরবারে বসেছিলাম, তখন মহানবী (সা.) বলেন, আমি কি তোমাদেরকে তিনটি বড় গোনাহ সম্পর্কে অবহিত করবো? অতপর তিনি বললেন- (ক) আল্লাহর সাথে শিরক করা। [খ] পিতা-মাতার নাফরমানি করা। (গ) মিথ্যা সাক্ষী দেয়া।
অন্য হাদীসে মহানবী (সা.) বলেছেন-
একজন মানুষ মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যতেষ্ঠ যে, সে যা শুনলো তা কোন যাচাই-বাচাই ছাড়াই অন্যের কাছে বললো।
# চোগলখোরী করা : চোগলখোরী একটি কবীরা গুনাহ যার পরিণাম জাহান্নাম। মহানবী (সা.) বলেন- চোগলখোর জান্নাতে প্রবেশ করবে না। বুখারী-মুসলিম।
# দ্বিমূখীপণা : যাদের মধ্যে দ্বীনের ব্যপারে অবিচলতা নেই, বরং যারা সুযোগ বুঝে দ্বীনের পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান নেই তারা সমাজের সবচেয়ে ঘৃনিত ব্যক্তি। মহানবী (সা.) বলেছেন-
হযরত আবু হুরায়রা [রা.] হতে বর্ণিত, মহানবী [সা.] বলেন- কিয়ামতের দিন দ্বিমূখী নীতি গ্রহনকারী ব্যক্তি সবচেয়ে নিকৃষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত হবে। যারা একেকজনের সামনে একেকরূপে আবির্ভূত হতো। বুখারী-মুসলিম।
# খেয়ানত করা : আমানতের খেয়ানত করা জঘন্যতম পাপ, এমন ব্যক্তিকে মুনাফিক বলা হয়, আর মুনাফিকের অবস্থান জাহান্নামের তলদেশে। হাদীসে এসেছে-
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর [রা.] হতে বর্ণিত, মহানবী [সা.] বলেছেন- যার মধ্যে চারটি খাসলাত পাওয়া যাবে সে পরিপূর্ণ মুনাফিক, আর যার মধ্যে এর কোন একটি পাওয়া যাবে তার মধ্যে মুনাফিকের আলামত আছে বলে গণ্য হবে যতক্ষণ না সে সেই খাসলাত পরিত্যগ করবে। সেগুলো হলো- (ক) তার কাছে যখন আমানত রাখা হবে তখন সে সেই আমানতের খেয়ানত করবে। (খ) কথা-বার্তায় মিথ্যা বলবে। (গ) ওয়াদা ভঙ্গ করবে। (ঘ) কারো সাথে ঝগড়া বাদলেই গালি-গালাজ শুরু করবে। বূখারী-মুসলিম।
# হিংসা করা : হিংসা করা মানুষের মনের একটি মারাত্তক ব্যধি। হিংসুটে ব্যক্তি নিজের আগুনে নিজেই পুড়ে মরে। হিংসা রোগের ক্ষতি বিষয়ে হাদীস শরীফে কঠোরভাবে বলা হয়েছে, ইরশাদ হচ্ছে- হযরত আবু হুরায়রা [রা.] হতে বর্ণিত, মহানবী [সা.] বলেছেন- তোমরা হিংসা করা থেকে বিরত থাকো, কেননা হিংসা মানুষের নেক আমলকে খেয়ে ধ্বংস করে দেয় যেমনিভাবে আগুন লাকড়ী পুড়িয়ে ধ্বংস করে দেয়। আবু দাউদ।
# ঠাট্্রা-উপহাস করা : ঠাট্রা-উপহাস. ব্যঙ্গ-বিদ্রƒপ করা হয় সংশ্লিষ্ঠ মানুষটিকে হেয় করার জন্য, অন্যদের সামনে তাকে তুচ্ছ বা ছোট দেখানোর জন্য। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এধরণের কাজের ব্যপারে কঠোর ভাষায় নিষেধ করেছেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন-
হে ইমানদারগণ! তোমরা একে অপরের সাথে ঠাট্রা-উপহাস করো না, কেননা তুচ্ছ মনে করে তুমি যার সাথে ঠাট্র করছো সে তোমার থেকে উত্তম হতে পারে।
তাছাড়া বায্যিক অবয়ব দেখে বা ধন-দৌলতের সল্পতা দেখে হয়তো তুমি কাউকে তুচ্ছ ভাবছো, কিন্তু আল্লাহ তা‘আলার কাছে এগুলো শ্রেষ্ঠত্বের মানদন্ড নয়। মহানবী (সা.) বলেন- হযরত আবু হুরায়রা [রা.] হতে বর্ণিত, মহানবী [সা.] বলেন- আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের শারীরিক অবয়ব আর ধন-দৌলত দেখবেন না, তিনি তোমাদের অন্তরের অবস্থা আর আমল দেখবেন।) পবিত্র কুরআনে আরো স্পষ্ঠ করে বলা হয়েছে যে, বাহ্যিক কর্মকান্ড নয়, বরং বাহ্যিক আমলের সময় মনের অবস্থাটা কেমন থাকে আল্লাহ তা‘আলা সেই জিনিসটাই দেখেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
আল্লাহ তা‘আলার দরবারে কুরবানীর গোস্তও পৌছে না. রক্তও পৌছে না, কিন্তু তার কাছে সশ্লিষ্ঠ আমল করার সময় তাকওয়ার অবস্থাটা পৌছে।
# দোষারোপ করা : শুধু মানুষের দোষ ধরে বেড়ানো, দোষা-দোষি করা। আল্লাহ তা‘আলা এধরনের কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে-
তোমরা একে অপরের দোষ ধরে বেড়ায়ো না।) কারন একেবারে দোষমুক্ত কেউ নাই। প্রত্যেকেরই কিছু কিছু দোষ থাকে, এই জন্য বলা হয়েছে তুমি অপরের দোষ ধরে বেড়ায়ো না- তোমারও দোষ আছে আর মানুষেরও চোখ আছে।
# গোপন দোষ খুজে বেড়ানো : কারো দোষ দৃশ্যমান নয় তাই গোয়েন্দাগিরি করে গোপন দোষ খুজে বেড়ানো। খুটে খুটে দোষ বের করা। এমন কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন- তোমরা গোপন দোষ খুজে বেড়ায়োনা।
গোপন দোষ খুজে বেড়ায়োনার পরিণতি বিষয়ে হাদীস শরীফে কঠোর হুশিয়ারী উচ্ছারণ করে বলা হয়েছে- মহানবী [সা.] বলেন- তোমরা মুসলমানদের গীবত করো না এবং তাদের গোপন দোষ খুজে বেড়ায়ো না। কেননা যে অন্য মুসলমানের গোপন দোষ খুজে বেড়ায়, স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার গোপন দোষ প্রকাশ করেদেন, আর স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা যার গোপন দোষ বের করার কাজে লিপ্ত হন, আল্লাহ তা‘আলা তাকে নিজ ঘরের মধ্যেই অপদস্থ করে ছাড়েন।
অপর মুসলিম ভাইয়ের গোপন দোষ প্রকাশ না করে তা গোপনেই সংশোধন করে দেয়া উত্তম। এমনটি করলে তার উত্তম প্রতিদানও আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের ময়দানে দিবেন। যেমন হাদীসে এসেছেÑ যে অপর মুসলমান ভাইয়ের দোষ গোপন রাখলো, লোকসমাজে প্রকাশ করে তাকে লজ্জিত করলো না, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা তার দোষ গোপন রেখে গোপনেই ক্ষমা করে দিবেন।
৭. সালাত কেমন হতে হবে :
সালাত যেমন শ্রেষ্ঠ ইবাদত তার পন্থা-পদ্ধতিও সর্বোত্তম হতে হবে। এজন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ হতে স্বয়ং হযরত জিবরাঈল (আ.) এসে দুইদিন ধরে রাসুল (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামকে সালাত আদায়ের নিয়ম-কানুন ও পদ্ধতি শিক্ষা দিয়েছেন। মহানবী (সা.) বলেন- তোমরা আমাকে যেভাবে নামায আদায় করতে দেখ সেভাবে আদায় করো।
সুতরা যথাযথ পদ্ধতি ছাড়া সালাত আদায় করলে তা আল্লাহ তা‘আলার কাছে গ্রহনযোগ্য হয় না। একদা একজন সাহাবী মসজিদে এসে সালাত আদায় করে মহানবী (সা.) এর কাছে এসে সালাম দিয়ে মুসাফা করতে চাইলেন। মহানবী (সা.) তাকে বললেন-ফিরে গিয়ে আবার নামায পড়ে এসো, কেননা তোমার নামায হয়নি।)
হাদীসের মধ্যে এসেছে- তুমি নামায এভাবে পড় যেন তুমি আল্লাহ কে দেখছো, আর এই অবস্থা সৃস্টি করতে না পারো তবে অন্তত: এমন অবস্থাতো সৃস্টি করো যে তিনি তোমাকে দেখছেন, সুতরাং সেদিকে খেয়াল রেখে যতœ সহকারে সালাত আদায় করো)
সুতরাং সালাতের যে কল্যাণ মহানবী ও সাহাবায়ে কেরাম পেয়েছিলেন সেটা যদি আমাদের পেতে হয় তাহলে অবশ্যই আমাদের সালাতের ধরণও তাদের সালাতের মত হতে হবে। মহানবী ও সাহাবায়ে কেরাম সকল কাজের আগে সালাতকে গুরুত্ব দিতেন। জিহাদের ময়দানেও সালাতকে পারত: পক্ষে কাযা হতে দেননি। মহানবী ও সাহাবায়ে কেরাম সালাতের মাধ্যমেই আল্লাহর কাছে সকল কাজের সফলতার জন্য সাহায্য চাইতেন। কারন জিহাদ-আন্দোলন এসব কিছুর উদ্দেশ্যই তো এই সমাজে সালাত কায়েম করা,যাকাত প্রতিষ্ঠা করা, যেমন পবিত্র কুরআনে এসেছে-
আর যদি আমি তাদের হাতে রাস্ট্র ক্ষমতা দেয় তবে তারা এই সমাজে সালাত কায়েম করবে,যাকাত প্রতিষ্ঠা করবে,ন্যায় কাজ আদেশ দিবে ও অন্যায় কাজ থেকে বাধা দিবে।
লেখক: বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক