রুশপন্থিদের দখলে ইউক্রেনের ১৪ শহর
চলতি সপ্তাহে ইউক্রেনের রুশপন্থিরা দেশটির পূর্বের বেশকিছু শহরের গুরুত্বপূর্ণ ভবন দখলে করে নিয়েছে। আর এই দখলের তালিকায় যেমন সরকারি ভবন রয়েছে তেমনি সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র অবস্থানও নিয়েছে রুশপন্থিরা। পাঠকদের জন্য ইউক্রেনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ শহরের বর্তমান অবস্থার আংশিক বর্ণনা দেয়া হলো:
স্লোভিনাস্ক
ইউক্রেনের পূর্বের শহর স্লোভিনাস্কের বেশ কয়েকটি পুলিশ স্টেশন দখল করে নিয়েছে রুশপন্থিরা। গত শনিবার বেশকিছু সরকারি ভবনও তাদের দখলে চলে যায়। এসময় একজন ইউক্রেনীয় নিরাপত্তারক্ষী মারা যায় এবং অনেকেই আহত হয়। শহরের বিভিন্ন জায়গায় নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে রুশপন্থিদের গুলি বিনিময় হয়। তবে রাশিয়ার গণমাধ্যম জানায় যে, রুশপন্থিদের সঙ্গে ইউক্রেনের নিরাপত্তারক্ষীদের সংঘর্ষে একজন রুশপন্থিও মারা গেছে। এমতাবস্থায় পুলিশস্টেশন দখল করা প্রসঙ্গে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ‘সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান’ চালানোর কথা জানিয়েছেন। তবে মন্ত্রীর কথায় পুলিশ স্টেশন পুনরায় দখল করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ইউক্রেনের পুলিশ।
আর্তেমিভস্ক
ইউক্রেনের বেসরকারি সংবাদভিত্তিক ওয়েবসাইট লেভি বার্গ তাদের প্রতিবেদনে জানায়, শনিবার রাজনৈতিক কর্মীরা আর্তেমিভস্কের পুলিশস্টেশন দখল করে নেয়। এসময় তারা শহরের মূল কাউন্সিল ভবনের দিকে আগানোর চেষ্টা করে। সেখানে তারা ‘স্বতন্ত্র প্রজাতন্ত্র’ ঘোষণা দিয়ে পতাকা উত্তোলন করে। ভবন দখলের এক সময় তারা স্বাধীনতার ঘোষণাও দেয়।
ক্রামাত্রোস্ক
একদল ছদ্মবেশী সশস্ত্র লোকজন শনিবার শহরের পুলিশ সদরদপ্তরে হামলা চালায়। সদরদপ্তর দখল করতে তারা ভারি অস্ত্র ব্যবহার করে। পরে তারা ভবনের চারপাশে ব্যারিকেড তৈরি করে। এই অভিযান সম্পর্কে পশ্চিমা মদদপুষ্ট ন্যাটো জানায়, রাশিয়ার সেনাবাহিনীর সদস্যরাই ক্রামাত্রোস্ক শহরের পুলিশ সদরদপ্তর দখল করেছে। যদিও ন্যাটের এই বক্তব্যের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। ইউক্রেনের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেয়া হয়নি এখন পর্যন্ত।
খারকিভ
রুশপন্থি ইউক্রেনীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রায় ৫০ জন মানুষ গুরুতর আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে দশজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, রুশপন্থিরা সিটি কাউন্সিল ভবনে ব্যারিকেড ভেঙে ঢুকে পড়ে এবং সেখানে ভাঙচুর চালায়।
ইয়েনাকিয়েভো
ইউক্রেনের আঞ্চলিক পত্রিকা অস্ত্রোভ জানায়, বন্দুকধারীরা প্রধান আইনজীবীর (অ্যাটর্নি জেনারেল) কার্যালয় দখল করে নিয়েছে। এছাড়াও তারা পুলিশ সদরদপ্তর, সিটি কাউন্সিল ভবন এবং গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি ভবন দখল করে নিয়েছে। দখল পরবর্তীতে তারা সবগুলো ভবনে একযোগে রাশিয়ার পতাকা উত্তোলন করে। এসময় তারা পার্শ্ববর্তী শহর হোরলিভকা দখল করার কথা জানায়। শহরটিতে ভবন দখলে নিয়েজিত রুশপন্থিদের সকলকেই ভারি অস্ত্রে সজ্জিত দেখা যায় বলেও পত্রিকাটি জানায়।
মারিওপোল
মারিওপোলের মেয়রের অফিস কয়েকজন রুশপন্থি দখল করে নিয়েছে। শহরটি সাগরের কিনারায় হওয়ায় ইউক্রেনের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে এর যোগাযোগ ব্যবস্থা অতটা ভালো নয়। তবে স্থানীয় গণমাধ্যমের দেয়া তথ্য মতে, হাজার খানেক রুশপন্থি ইউক্রেন থেকে স্বাধীনতা লাভের জন্য মিছিল করে এবং স্লোগান দেয়। এসময় মেয়র তার ভবনে উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, শহরটি রাশিয়ার সীমান্ত থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে।
জাপোরিজায়া
ইউক্রেনের পূর্ব-পশ্চিমের এই শহরটিতে রুশপন্থিরা হঠাৎ করেই হামলা চালায়। কয়েক হাজার রুশপন্থি ব্যারিকেড ভেঙে দিয়ে শহরের মূল অংশের দিকে আগায়। এসময় তারা ইউক্রেন থেকে নিজেদের স্বাধীনতার দাবি তোলে এবং ইউক্রেনের মহিমা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
দনেতস্ক
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ থেকে নিজেদের স্বাধীনতা চেয়ে একদল রুশপন্থি শহরের সরকারি ভবনগুলো দখল করে নেয়। দখল পরবর্তীতে তারা উঁচু ব্যারিকেড তৈরি করেছে। রুশপন্থিরা এসময় একটি পুলিশস্টেশনও দখল করে নয়ে। পুলিশস্টেশন দখলকারীরা সবাই মুখোশ পরিহিত ছিল এবং কোনো প্রকার সহিংসতা ছাড়াই তারা ভবন দখল করে নেয়।
মায়কিয়িভকা
স্থানীয় ওয়েবসাইট ‘কিদরি প্রতিবেদনে জানা যায়, কাউন্সিল ভবনটি রুশপন্থিরা দখল করে নিয়েছে এবং সেখানে রাশিয়ার পতাকা উত্তোলন করেছে তারা। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, কয়েক হাজার রুশপন্থি সম্মিলিতভাবে ভবনটিকে ঘিরে আছে। ভবনটির অন্যপাশে পুলিশ সদস্যরা অবস্থান নিলেও তারা সক্রিয় নয়।
লুহানস্ক
শহরটির আঞ্চলটির নিরাপত্তারক্ষীদের সদরদপ্তর দখল করে নিয়েছে রুশপন্থিরা। তবে সদরদপ্তর দখল করার আগে তারা বেশকিছু সরকারি ভবন দখল করে নেয়। রাজধানী কিয়েভ থেকে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হলেও স্থানীয় নিরাপত্তারক্ষীরা কোনো পদক্ষেপ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
দুরঝাকিভকা
এই শহরের সব সরকারি ভবনের দখল নিয়েছে রুশপন্থিরা। শহরটি স্লোভিনাস্কের কাছাকাছি হওয়ার দুই শহরের রুশপন্থিদের শক্ত অবস্থানের কারণে দেশটির সরকারি বাহিনী নিশ্চুপ অবস্থানে রয়েছে।
এছাড়ও ইউক্রেনের দোব্রেপিল্লাইয়া, কস্তিয়ানতানিকাভা এবং স্নিজেনে শহরগুলোও ইতোমধ্যেই দখল করে নিয়েছে রুশপন্থিরা। ইউক্রেন থেকে নিজ নিজ শহরকে স্বাধীন ঘোষণা করেছে তারা। কয়েক জায়গায় রক্ষক্ষয়ী সংঘর্ষ হলেও তেমন কোনো হতাহতের সংবাদ পাওয়া যায়নি। এদিকে ইউক্রেনের সরকারের পক্ষ থেকে দখল হওয়া শহরগুলো পুনরুদ্ধারের জন্য অভিযান চালানোর ঘোষণা দেয়া হয়েছে। কিন্তু শহরগুলোতে মোতায়েন নিরাপত্তারক্ষীরা কোনো রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হতে রাজি নয়। এমতাবস্থায় ইউক্রেনের ভাগ্যে ঠিক কী ঘটে তা-ই এখন দেখার বিষয়।